পশ্চিম মেদিনীপুর নিজস্ব সংবাদদাতা : সত্য সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ । সারা ভারতবর্ষের মধ্যে একটি বিশেষ জাতির মানুষ আজও কেবল বাংলা-ওড়িশা সীমানা অঞ্চলে বসবাস করে । অথচ বাংলার জাতিগত তফশিলে এর উল্লেখ পর্যন্ত নেই ! লুপ্তপ্রায় সেই সম্প্রদায় ‘শিয়ালগিরি’র অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে এগিয়ে এসেছেন মেদিনীপুরের এক শিক্ষক-গবেষক । শিয়ালগিরিরা অতীতে বন্যপশুর কাঁচা মাংস খেত, শিকার করত অরণ্যের গভীরে। গুজরাটি শব্দ সহযোগে দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলত । যোগেশচন্দ্র বসুর মতো ইতিহাসবিদের অনুমান ছিল, এরা মারাঠা বর্গীদের বংশধর। আবার ও' ম্যালি সাহেবের বিচারে এরা গুজরাত-মধ্যপ্রদেশ সীমানার ‘ভিল' জনজাতির একটি ভবঘুরে শাখা। বর্তমানে কয়েক হাজার শিয়ালগিরি মানুষের অস্তিত্ব রয়েছে ওড়িশা সীমানা-বাংলায় অবস্থিত দাঁতন ও মোহনপুর থানা এলাকার আটটি মৌজায় । এতকাল এরা নিজেদের "শবর" বলে মনে করতো । ছিল না কোন জাতিগত পরিচয় ও প্রামাণ্য। তবু চলেছে লড়াই । সাত বছর ধরে গবেষক সন্তু জানা লুপ্তপ্রায় শিয়ালগিরিদের ইতিহাস, লোকায়ত সংস্কৃতি, ধর্ম, ভাষা, শিক্ষা ও সমাজজীবনকে কেন্দ্র করে লিখেছেন একটি আকর গবেষণাগ্রন্থ । যে বইটি শিয়ালগিরিদের অস্তমিত আন্দোলনে নতুন করে জোয়ার নিয়ে এসেছে। শুরু হয়েছে "শিয়ালগিরি আন্দোলন" ।
সন্তু বলেন, “ভারতবর্ষের বিরলতম এক সম্প্রদায় নিজেদের শবর বলে জানতেন। তাই প্রথমবার এই জনজাতিকে শিয়ালগিরি সম্প্রদায় হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে বহু বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সরকারি সার্ভেয়ার এদের শবর হওয়ার দাবি নাকচ করে দেয় । বরং বহু পরিবারের কাছে ব্রিটিশ সময়ের একাধিক দলিল উদ্ধার হয়েছে যেখানে এরা "শিয়ালগিরি" সম্প্রদায় বলে উল্লেখিত । ১৯৫১ সালে আদমসুমারিতে এদের ‘ম্লেচ্ছ ভক্ষণকারী' জনজাতি হিসেবে সর্বনিম্ন তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, এদের শিয়ালগিরি পরিচয়ে অষ্টম তফশিলে যুক্ত করে অবিলম্বে জাতিগত সংশাপত্র প্রদান করা হোক ।" সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিকে সামনে রেখে দাঁতন থানার নিমপুরে একটি সমাবেশ আয়োজন করেন ওই সম্প্রদায় । সভায় শবর নয়, "শিয়ালগিরি " নামেই আত্মপ্রকাশ করেন তাঁরা। উপস্থিত ছিলেন দাঁতনের বিধায়ক বিক্রমচন্দ্র প্রধান, দাঁতন ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কনক পাত্র, আন্দোলনের সভাপতি গিরিশ পাত্র, ভজহরি পাত্র, তপন দাস সহ প্ৰায় শতাধিক শিয়ালগিরি সম্প্রদায়ের মানুষজন। সকলেই আরও একবার নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন ।