ঢাকা, জাকির হোসেন: বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবি পূরণ হলেও শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর শাসকদলের মদতপুষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগের হামলা, মামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদ ও জড়িতদের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সহ রাজপথে নেমেছে সাধারণ মানুষ৷ এবার আন্দোলনরতদের দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করে পহেলা আগস্ট বৃহস্পতিবার ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে সকাল ১১ টায় সমবেত হন চলচ্চিত্র, আলোকচিত্র, থিয়েটার, গণমাধ্যমসহ দৃশ্যমাধ্যমের নানা শাখার কর্মীরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই হাতে ব্যানার ফেস্টুনে জড়ো হন শিল্পীরা।
‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’ ব্যানারে সেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে হত্যা-সহিংসতা-গণগ্রেপ্তার-হয়রানির প্রতিবাদে এবং সকল হত্যার হিসাব ও বিচার করা, গুলি ও সহিংসতা বন্ধ, গণ-গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ, আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে যুক্ত হওয়া সংস্কৃতিকর্মীদের এই আয়োজনের অন্যতম সদস্য অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তিনি জানান, "আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে দাঁড়িয়েছি আমরা। আমরা ভয়হীন, ন্যায্য ও মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশ চাই। সব হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। হত্যা, সহিংসতা, গণগ্রেফতার আর হয়রানি বন্ধ চাই।"
অভিনেতা মোশাররফ করিম বলেছেন, "আমরা রক্তপাত চাই না, শান্তি চাই। এসবের বাইরে থাকতে চাই।"
শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অভিনেতা সিয়াম আহমেদ বলেন, "আমার পক্ষ থেকে আলাদা কোনো কিছু বলার নেই, পুরো দেশের মানুষ একই কথা বলছে। দেশের মানুষ যখন একসঙ্গে কোনো ন্যায্য দাবি রাখে তখন সেটা একটু হলেও মাথায় আনা দরকার। সেটা অবশ্যই ফেলে দেওয়ার মতো নয়। আমার যে ভাই এবং বোনটা মারা গেল আপনি যদি সুস্থ এবং স্বাভাবিক মানুষ হন তাহলে রাতে ঘুমাতে পারবেন না। আমার কানে এখনো বাজে, কারও পানি লাগবে? দেখুন কত পানি আসছে এখন। এটা যতদিন মাথায় থাকবে ততদিন শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না বাংলাদেশের মানুষ। আজকে যে ছাত্ররা যারা আমাদের মেইন অডিয়েন্স—যাদের আমাদের প্রয়োজন আমরা যদি তাদের পক্ষ হয়ে না দাঁড়াতে পারি তাহলে কেন কাজ করলাম! এর থেকে কাজ না করা ভালো, অন্য কোনো কিছু করা বেটার। আমার নিজের সন্তান আছে, আমি জানি আজ থেকে ১০, ১৫ কিংবা ২০ বছর পরে এ ব্যাপারগুলো জানবে, তখন আমাকে জিজ্ঞেস করবে তুমি কী করেছে তখন? আমি বুক উঁচু করে বলতে পারব কিছু একটা করেছি। সুতরাং আমি স্টুডেন্টদের পক্ষে।"
এক প্রশ্নের জবাবে সিয়াম বলেন, "আপনি (সাংবাদিক) নিজে বলেন, আপনার কোনো ক্লাসমেটের সঙ্গে এমন হলে আপনি বাসায় থাকতে পারতেন? এটা থাকা সম্ভব না এবং বাচ্চাগুলো কোনো অনৈতিক দাবি রাখেনি যে তাদেরকে এভাবে প্রাণ হারাতে হবে। একেকজন বাবা-মার আহাজারি। এটা যার যায় সে বুঝে। আমি জানি না এখানে কতটুকু ঢেকেঢুকে বলা পসিবল। এর বিচার যতদিন পর্যন্ত না হবে ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ শান্তি পাবে না বলে আমার বিশ্বাস।"
বৃহত্তর চলচ্চিত্র, আলোকচিত্র, থিয়েটার, গণমাধ্যমসহ দৃশ্যমাধ্যমের নানা শাখার কর্মীরা মিলিয়ে মূলত দৃশ্যমান শিল্পী সমাজ। এতে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা মামুনুর রশিদ, মোশাররফ করিম, রোবেনা রেজা জুঁই, চলচ্চিত্রকার আকরাম খান, জাকিয়া বারী মম, চলচ্চিত্র পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী, নির্মাতা পিপলু আর খান, রেদওয়ান রনি, আদনান আল রাজীব, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, অভিনেতা সিয়াম আহমেদ, সৈয়দ আহমেদ শাওকি, ইরেশ জাকের ও তার স্ত্রী মীম, তানিম নূর, নুসরাত ইমরোজ তিশা, সাবিলা নূর, ঋতু সত্তার, দীপক সুমন, আরমিন মূসা, প্রবর রিপন, শঙ্খ দাশগুপ্ত, তাসনিয়া ফারিন, রাকা নওশিন নওয়ার, নাদিয়া ও শাহানা রহমান সুমি সহ আরো অনেকে; তারা সকলে সংহতি প্রকাশ করেন। স্ব স্ব বক্তব্যে তারা সব হত্যার হিসাব ও বিচার করাসহ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর শাসকদলের নির্বিচারে গুলি ও সহিংসতা বন্ধের দাবি জানান। তারা বলেছেন, গণ-গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধসহ আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তিরও দাবি করতে এখানে জড়ো হয়েছি। অবিলম্বে হত্যাকাণ্ডের বিচার ও হত্যা-সহিংসতা, গণগ্রেপ্তার-হয়রানি বন্ধ করতে হবে।