Skip to content

মোদী-হাসিনা বৈঠকে প্রতিরক্ষা, জল-সহ ১০টি সমঝোতা, তবে এবারও খুলল না তিস্তা-জট, 'ভারত বিশ্বস্ত বন্ধু' বললেন হাসিনা!

নয়াদিল্লি ইরফান রহমান : দু’দেশের রাষ্ট্রনেতা- ভারতের নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের শেখ হাসিনা এবং প্রতিনিধিদের বৈঠকে চূড়ান্ত হল একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির রূপরেখা। সমঝোতা হলো প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে গঙ্গার জলবণ্টন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে৷ কিন্তু বহু প্রতীক্ষিত তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে জট কাটল না ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে৷ তবে বৈঠক পরবর্তী সাংবাদিকদের সাথে এক বিবৃতিতে হাসিনাকে পাশে নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর আশ্বাস, তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে শীঘ্রই বিশেষজ্ঞ কারিগরি দল বাংলাদেশ সফর করবে৷ বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও সেনার আধুনিকীকরণে সাহায্য করবে ভারত৷ সন্ত্রাসবাদ ও কট্টরপন্থার মোকাবিলায় দুই দেশ সহযোগিতা করবে। গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তির নবায়ন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

মোদী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে যারা চিকিৎসার জন্য ভারতে আসেন, তাদের জন্য শীঘ্র ই-মেডিকেল ভিসা চালু করবে ভারত। বাংলাদেশের মানুষের সুবিধার জন্য বাংলাদেশের রংপুরে ভারতের সহকারি হাই কমিশন অফিস খোলা হবে৷ এছাড়া মহাকাশের ক্ষেত্রে দুই দেশ সহযোগিতা করবে। মৈত্রী উপগ্রহ নিয়েও বৈঠকে কথা হয়েছে। ডিজিটাল ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্র নিয়ে সমঝোতা হয়েছে৷ ফিরোজগঞ্জে ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপোর কাজ ভারত শেষ করবে।

আগামী ৯ জুলাই চীন সফরে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তার আগে হাসিনাকে পাশে নিয়ে নরেন্দ্র মোদী জানালেন, ভারত মহাসাগর নিয়ে ভারতের ভিশনকে সমর্থন করেছে বাংলাদেশ। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সমুদ্রাঞ্চলে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা চুক্তির এই প্রসঙ্গের উল্লেখ করে হাসিনাকে ধন্যবাদ জানালেন মোদী। বললেন, 'এই সমুদ্র সহযোগিতার মাধ্যমে নীল অর্থনীতির পথে একসঙ্গে চলবে দুই দেশ।' আঞ্চলিক সমুদ্রপথের নিরাপত্তায় এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি আগামী দিনে নয়াদিল্লি-ঢাকা মৈত্রী সুনিবিড় করবে বলে মনে করছেন কূটনীতি বিশারদরা৷

মোদীর বক্তব্য, বাংলাদেশ আমাদের বৃহত্তম উন্নয়ন-সঙ্গী। তাদের স্বার্থকে ভারত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাবে। আর ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। ভারতও ২০২৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত হবে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'ভারত আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশি এবং বিশ্বস্ত বন্ধু৷ ভারত বাংলাদেশকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহায্য করেছে৷ মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি ভারতের সেনাও শহিদ হয়েছে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।' হাসিনা আরও বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ডিজিটাল ও সবুজ অংশীদারিত্বের জন্য একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে ঢাকা ও নয়াদিল্লি সম্মত হয়েছে।

হাসিনা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মোদী যোগ দিয়েছিলেন। তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।

হাসিনা বলেন, 'আমি ২০২২ সালে এসেছি। ২০২৩ সালে জি২০ বৈঠকে ভারতের আমন্ত্রণে এসেছি। কয়েকদিন আগে মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এসেছি। মোদী তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বলে তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। জলবন্টন, জ্বালানি, শক্তি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমঝোতা হয়েছে। দুই দেশের বন্ধুত্ব বাড়তে থাকবে।' মোদীকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন হাসিনা।

যে সাত বিষয়ে নতুন সমঝোতা হয়েছে: ভারত-বাংলাদেশ ডিজিটাল পার্টনারশিপ, গ্রিন পার্টনারশিপ, সমুদ্র সহযোগিতা ও সুনীল অর্থনীতি, ভারতের ইন-স্পেস এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা, দুই দেশের রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সংযোগ সংক্রান্ত সমঝোতা, সমুদ্র বিষয়ক গবেষণায় দুই দেশের সমঝোতা, কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগিতায় ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ ওয়েলিংটন-ভারত এবং ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ মিরপুর-ঢাকার মধ্যে সমঝোতা৷

নবায়ন হওয়া তিনটি সমঝোতা হলো: স্বাস্থ্য ও ওষুধ সংক্রান্ত পুরনো সমঝোতা নবায়ন, মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে বিদ্যমান সমঝোতা নবায়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রশমনে ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি ও বাংলাদেশ ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রকের বিদ্যমান সমঝোতা নবায়ন৷

২২ জুন নয়াদিল্লিতে বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷

Latest