নিজস্ব সংবাদদাতা : ঝাড়গ্রাম জেলা জুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো কন্যা সন্তান জন্মের অপরাধে সদ্যজাত শিশুর মুখে বিষ ঢেলে হত্যার চেষ্টা। সমাজের বিবেক কে নাড়িয়ে দেওয়া সেই মর্মান্তিক ঘটনার পর এবার একই গ্রামে নারী শিশুর সুরক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগে এগিয়ে এলেন প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। শনিবার ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর দুই নম্বর ব্লকের বেলিয়াবেড়া থানার অন্তর্গত তালগ্রামে উপস্থিত হন গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক ডাঃ খগেন্দ্রনাথ মাহাত এবং ঝাড়গ্রামের জেলা শাসক আকাঙ্কা ভাস্কর। সঙ্গে ছিলেন প্রশাসনিক আধিকারিক, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। কন্যা হয়ে জন্মানোর 'অপরাধে' আট দিনের সদ্যোজাতকে দুধের সঙ্গে কীটনাশক খাইয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে তার ঠাকুমার বিরুদ্ধে। ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে সেই সদ্যোজাত। ঠাকুমা আপাতত শ্রীঘরে। এই ঘটনা যেন আর না ঘটে, তার জন্য বেলিয়াবেড়া থানার অন্তর্গত শিশুকন্যার গ্রামে 'সেভ দ্য গার্ল চাইল্ড'-এর বার্তাকে সামনে রেখে সচেতনতা শিবির ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাল গোপীবল্লভপুর-২ ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তর। তপসিয়া গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কাউন্সিলার, কমিউনিটি হেলথ অফিসার, আশা কর্মীরা ওই কাজে যোগ দিয়েছিলেন। প্রচারে সামিল হয়েছিলেন গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক কিংশুক রায়ও। গ্রামে পৌঁছে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সঙ্গে মাটিতে বসে সচেতনতার পাঠ দেন তাঁরা। নারী শিশুদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো এবং মেয়ে সন্তানদের গুরুত্ব বোঝানোর বার্তা দেন প্রশাসনিক কর্তারা। এই উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবং জেলা শিশুকল্যাণ সমিতির উদ্যোগে একটি সচেতনতা র্যালিরও আয়োজন করা হয়। র্যালিতে অংশ নেন বহু গ্রামবাসী, স্কুলছাত্রছাত্রী ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা। বিধায়ক ডাঃ খগেন্দ্রনাথ মাহাত বলেন, “আজও কেউ যদি মনে করেন মেয়ে সন্তান বোঝা, তবে তা সমাজের জন্য লজ্জার। আজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা — তাঁর নেতৃত্বেই নারীরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছেন।” উপস্থিত ছিলেন, নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু, বেলিয়াবেড়া থানার ওসি নিলু মণ্ডল, এবং অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকরা। প্রশাসনের এই উদ্যোগে গ্রাম জুড়ে তৈরি হয়েছে নতুন সচেতনতার পরিবেশ। আশা করা হচ্ছে, এমন মানবিক প্রচেষ্টাই ভবিষ্যতে আর কোনও শিশুর মুখে বিষ নয়, বরং ভালোবাসার স্পর্শ পৌঁছে দেবে।