Skip to content

উচ্চমাধ্যমিকে খড়গপুরের মেয়ে মৈত্রেয়ী দাশগুপ্ত , ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায় সে!

খড়গপুর অরিন্দম চক্রবর্তী : ছোটবেলা থেকে কষ্টের সংসারে মানুষ হওয়া। বাবা তুষার কান্তি দাশগুপ্ত প্রাইভেট টিউশন পড়িয়ে যা আয় করতেন সেই উপার্জন সম্বল করে গৃহবধূ মা মনি দীপা দাশগুপ্ত সংসারে হাল টানতেন। স্বপ্ন দেখতেন একদিন দুই মেয়ে গার্গী ও মৈত্রেয়ী দাশগুপ্ত বড় হয়ে মা বাবার কষ্ট রোধ করবেন। কিন্তু মানুষ যা ভাবে এক কথা আর ভগবান করেন আর এক । তাইতো ২০২১ সালে হার্ট অ্যাটাকে হঠাৎ চলে গেলেন বাবা তুষার কান্তি। অথই জলে পড়ে মা মনি দীপা সুভাষপল্লী থেকে এসে মালঞ্চ তে বাবা দুর্গাশঙ্কর মাজীর কাছে এসে থাকলেন। বাবার পেনশনের টাকায় কোনক্রমে দিন যাপন করতে লাগলেন তিনি। বড় মেয়ে গার্গী কে বিয়ে দিয়ে কিছুটা চিন্তামুক্ত হতে চেষ্টা করলেন। ছোট মেয়ে মৈত্রেয়ীর পড়াশোনার হাল ধরলেন নিজে হাতে। টিউশনের ব্যবস্থা করলেন এখানে ওখানে। ওনাকে সাহায্য করলেন জামাই গৌরব বিশ্বাস। হল স্বরূপ ২০২৩ সালে মাধ্যমিকে ৬৭২ পেয়ে ভালো রেজাল্ট করলো মৈত্রেয়ী। উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগের পাঁচটা বিষয়ে টিউশন দিলেন তিনি। ডাক্তারি পেশাকে পাখির চোখ করে অংককে ভালবেসে মৈত্রী সকাল-বিকাল টিউশন পড়তে যেতেন মেদিনীপুরে। অসুবিধায় পড়লে নিজের স্কুল আর্য বিদ্যাপীঠের বাংলার শিক্ষক কৌশিক মাজী, পদার্থবিদ্যার রামপ্রসাদ ঘোষ এবং টিউশনের সাহেব ঘোষ ও প্রদীপ দত্ত তৎক্ষণাৎ সাহায্য করতেন। জয়েন্টে উত্তীর্ণ হতে টানা দু'বছর রাত্রে ছ থেকে সাত ঘন্টা এক ভাবে পড়াশোনা করেছেন মৈত্রেয়ী। ডাক্তারিতে সুযোগ না পেলে যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং এ সুযোগ নিতে পারেন তিনি। তবে জেনারেল লাইনে একদম পছন্দ নয় তার। অবসর সময়ে এসে শ্রেয়া ঘোষালের গান, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোয়েন্দা গল্প এবং ফেব্রিক দিয়ে আলপনা (মাণ্ডলা) ও কাদামাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতে পছন্দ করে সে। মন ভালো রাখতে কখনো কখনো রবীন্দ্র সংগীত গায়। মোবাইলের আসক্তির ব্যাপারে তিনি বলেন বর্তমান প্রজন্ম মোবাইলের খারাপ দিকটা বেশি করে গ্রহণ করছে নিজের ভালো কাজে এটাকে ব্যবহার করলেই সবদিক থেকে মঙ্গল। সিনেমা দেখার ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ না দেখালেও গোয়েন্দা ধর্মী ছবি কখনো সফলতা দেখেন তিনি। নন্দিতা শিবপ্রসাদ মুখার্জির পরিচালনার ছবি দেখতে ভালো লাগে তার। পছন্দের নায়ক হৃত্বিক রোশন ও নায়িকা ঐশ্বর্য রায়। নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন বাড়ির লোকেদের পছন্দের বিষয় না নিয়ে নিজের যে বিষয়গুলি পছন্দ ও স্বাচ্ছন্দ সেগুলি নাও তাতেই সাফল্য আসবে। ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ নাগরিকদের উপর পাকিস্তানের এই আচরণ একদম পছন্দ নয় তার। রাজনীতি দল গোলের প্রসঙ্গে তিনি বলেন দলের মধ্যে আগে দুর্নীতি বন্ধ করে পিওর হতে হবে। তবেই দেশের উন্নতি হবে। মৈত্রেয়ীর এই সাফল্যে গর্বিত তার স্কুল নিমপুরা আর্য বিদ্যাপীঠ এর শিক্ষক শিক্ষিকারা। মৈত্রেয়ীর প্রাপ্ত নম্বর৪৮১. পদার্থবিদ্যায় ৯৪, রসায়নে ৯৩, অংকে ৯৮, জীব বিদ্যায় ৯৯, বাংলায় ৯২ এবং ইংরেজিতে ৯৭ পেয়েছেন তিনি।

Latest