নিজস্ব প্রতিবেদন : গত ১৮ ই সেপ্টেম্বর ভোরবেলায় কাঁসাই নদীর পাঁশকুড়া সংলগ্ন মানুর,জদরা সহ চারটি জায়গায় নদীবাঁধ ভেঙে পাঁশকুড়া পৌরসভা ও ব্লকের বিস্তীর্ণ অংশ ভয়াবহ বন্যার কবলে। গতকাল রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেও গিয়েছেন। সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হল-পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড সহ গোবিন্দনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রাম। এই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে বন্যার পর আড়াই দিন অতিক্রান্ত হলেও বেশিরভাগ এলাকাতে এখনো বহু মানুষ জলবন্দী হয়ে রয়েছেন। উদ্ধারকার্যের জন্য নেই প্রয়োজনীয় নৌকা বা বোটের ব্যবস্থা। পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে এলাকায়। ত্রিপল,খাদ্য সহ সরকারী ত্রাণ অধিকাংশ এলাকাতে এখনো পৌঁছায়নি। যেখানেও বা পৌঁছেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। আবার তা নিয়ে চলছে দুর্নীতি-দলবাজী। বন্যার পর থেকেই বেশীরভাগই এলাকাই বিদ্যুৎহীন। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সহ সন্তানসম্ভবা মায়েরা চরম সমস্যার মধ্যে পড়েছেন। এলাকায় বাড়ছে সাপের উপদ্রব। বন্যার জমা জলে ছ নম্বর জাতীয় সড়ক ও তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। নদীতে জল কমলেও যে জল এলাকাগুলিতে বন্যার জল ঢুকেছে, সেই জল যে নিকাশী খালগুলি দিয়ে বের হওয়ার কথা,সেই নিকাশী খালগুলি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ার কারণে খুব ধীর গতিতে বন্যার ওই জল নামছে। অন্যদিকে মানুষের এই অসহায়তার সুযোগ নিয়ে এলাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা সবজি সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধি করে জনসাধারণকে তা কিনতে বাধ্য করছে।
ওই পরিপেক্ষিতে আজ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বন্যা -ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে জেলাশাসক ও পাঁশকুড়ার বিডিও'কে পাঁচ দফা দাবী সম্বলিত স্মারকলিপি দেওয়া হয়। দাবীগুলি হল-
১) অবিলম্বে পর্যাপ্ত বোট ও নৌকার বন্দোবস্ত করে জলবন্দী এলাকার মানুষজনদের উদ্ধার করতে হবে।
২) বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রিপল সহ ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য,পানীয় জল সরবরাহ করতে হবে। রিলিফ বন্টনে দুর্নীতি বন্ধে ব্লক ও গ্রাম পঞ্চায়েত ভিত্তিক সর্বদলীয় কমিটি গঠন করতে হবে।
৩)ব্লকগুলিতে টাক্স ফোর্সকে সক্রিয় করে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৪)জয়গোপাল,বেহুলা, সোয়াদিঘি,গঙ্গাখালি,শংকরআড়া, প্রভৃতি খালগুলির ভেতরে থাকা কচুরিপানা সহ সমস্ত রকম আবর্জনা অবিলম্বে পরিষ্কার করে দ্রুত বন্যার নিকাশি জল বের করার বন্দোবস্ত করতে হবে।
৫) দ্রুত নদীবাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত করতে হবে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বন্যা-ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক অভিযোগ করে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলদারীতে এসে জেলা শাসককে সমস্ত বানভাসিদের ত্রান ও খাদ্য দেওয়ার কথা বলে গেলেও পাঁশকুড়া ব্লকের অধিকাংশ বানভাসিদের কাছে এখনো ত্রাণ পৌঁছায়নি। আবার সেই ত্রাণ নিয়ে চলছে দুর্নীতি-দলবাজি। শুধু তাই নয়,এখনো বহু মানুষ জলবন্দী হয়ে রয়েছেন যাদের এখনো উদ্ধার করা হয়নি। উপরোক্ত দাবিতে আজ মঙ্গলদারিতে বানভাসিরা ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক মুম্বাই রোড অবরোধ করেছেন। অবিলম্বে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে বানভাসিদের নিয়ে বিক্ষোভ-প্রদর্শন করা হবে বলে নারায়ণবাবু জানান।
এদিকে বন্যা বিধ্বস্ত পাঁশকুড়ার বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াতে পৌরসভার ১ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দিল ছাত্র সংগঠন AIDSO। ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের কর্মসূচিতে ছিলেন সংগঠনের পূর্ব মেদিনীপুর উত্তর সাংগঠনিক জেলা কমিটির সম্পাদক নিরুপমা বক্সি।