পশ্চিম মেদিনীপুর সেখ ওয়ারেশ আলী : থ্রেট কালচার নিয়ে বারবার চর্চায় এসেছিল মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এবার সেই মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজই ফের চর্চায়। তবে এবার আর থ্রেট কালচার নয় এবার নজিরবিহীন ভাবে উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রয়োগের জন্য চর্চায় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। দুই রোগে আক্রান্ত যুবকের জীবনের আশা যখন প্রায় নিভে গিয়েছিল ঠিক সেই সময় ত্রাতা মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।

এক বিরল রোগ নয়, দু’টি রোগে আক্রান্ত ঝাড়গ্রামের বেলিয়াবেড়া থানা এলাকার যুবক। মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে শরীর।বিরল রোগের সংখ্যা দেশে কম নয়। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে অন্তত ৭ কোটি মানুষ কোনও না কোনও বিরল রোগে আক্রান্ত। সেই তালিকায় রয়েছে নানা ধরনের অটোইমিউন ডিজ়অর্ডার, জেনেটিক রোগ ও স্নায়ুর জটিল অসুখ। এইসব রোগের চিহ্ন শনাক্ত করা যেমন কঠিন, চিকিৎসাও ততটাই জটিল। তবে একসঙ্গে দুটি বিরল রোগ শরীরে বাসা বাঁধলে কী হতে পারে, তা বোঝা যায় ঝাড়গ্রামের ২২ বছরের যুবক সন্তোষ হেমব্রমের ঘটনায়।

সন্তোষ গত তিন বছর ধরে কোমরের ব্যথা, শরীরের জয়েন্টে ফোলাভাব, হাঁটাচলায় কষ্ট এবং শুকনো কাশি ও জ্বরের মতো উপসর্গে ভুগছিলেন। স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা চললেও তেমন কোনও স্থায়ী সাড়া মেলেনি। পরে তিনি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হলে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর দেখা যায়, রোগটি আসলে সাধারণ নয়।চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানতে পারেন, সন্তোষ আক্রান্ত হয়েছেন অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস ও অ্যান্টি-সিন্থেটেজ সিনড্রোমে। দুইটিই বিরল অটোইমিউন রোগ। প্রথমটি মূলত মেরুদণ্ড ও শরীরের জয়েন্টকে শক্ত করে দেয়, দ্বিতীয়টি পেশি দুর্বল করে ও ফুসফুসে প্রদাহ ঘটায়। একই সাথে দুটি রোগই একজন মানুষের শরীরে ঘটেছে, বিশ্বে এধরনের মাত্র দুইটি কেস আগে নথিভুক্ত হয়েছে—সন্তোষের ঘটনা হতে পারে তৃতীয়।বর্তমানে সন্তোষের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ও ইনফ্লিক্সিম্যাব ব্যবহার করা হচ্ছে। ফিজিওথেরাপি ও শ্বাস প্রশমনের প্রশিক্ষণও চলছে। উপসর্গের উন্নতি দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে জেনারেল মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডাঃ যুগল কিশোর কর, এবং অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডাঃ বিকাশ চন্দ্র শেঠ এর অধীনে মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন সন্তোষ।এদিকে সন্তোষ এর শারীরিক অবস্থার কিছুটা হলেও উন্নতি হওয়ায় খুশি দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র সন্তোষ এর পরিবার চিকিৎসার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের।