নিজস্ব প্রতিবেদন : ঐতিহাসিক অবিভক্ত মেদিনীপুরের স্বাধীনতাকামী মাত্র ২০ বছর বয়সে দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেন অনাথবন্ধু পাঁজা । এই মহান ব্যক্তিত্বকে বর্তমানে ভুলতে বসেছে অবিভক্ত মেদিনীপুরের নতুন প্রজন্ম । জীবনে কখনও ইংরেজদের কাছে তিনি মাথা নত করেননি। শুরু হবে ফুটবল খেলা ৷ ঠিক তখনই ঘটল ঘটনাটা ৷ বল পায়ে মাঠে নেমেছিলেন মেদিনীপুরের জেলাশাসক বার্জ ৷ সামনে থেকে চলল গুলি ৷ মাটিতে পড়ে গেলেন অত্যাচারী শাসক৷ তাঁর বুকের উপর চড়ে বসলেন দুই যুবক৷ হাতে থাকা পিস্তল খালি করে দিলেন শাসকের বুকে ৷ দ্রাম দ্রাম দ্রাম ৷ রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ৷ চারদিকে তখন ছুটোছুটি ৷ চিৎকার ৷ মাঠ ছেড়ে পালাচ্ছে দর্শক ৷ তখনই আরও কয়েকটা গুলি ছুটে এল দূর থেকে৷ অত্যাচারী জেলাশাসকের বুকের উপর বসে থাকা দুই যুবকের শরীরে লাগল সেই গুলি ৷

তাঁরাও মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন ৷ একজন ঘটনাস্থানেই মারা যান ৷ অন্যজনকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে ৷ প্রথমজন অনাথবন্ধু পাঁজা, দ্বিতীয়জন মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত ৷ এই ঘটনার পর ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায়, নির্মলজীবন ঘোষ, নন্দদুলাল সিং, কামাখ্যা ঘোষ, সুকুমার সেন, সনাতন রায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা করা হয়। বিচারে ব্রজকিশোর, রামকৃষ্ণ ও নির্মলজীবনের ফাঁসি হয়। নন্দদুলাল, কামাখ্যা ঘোষ, সুকুমার সেন ও সনাতন রায়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিপ্লবী অনাথবন্ধু পাঞ্জা অবিভক্ত মেদিনীপুরের এই বীর সন্তানের জন্ম সবং থানার জলবিন্দু গ্রামে ৷ আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না পরিবারের ৷ হতদরিদ্রই বলা চলে ৷ অবস্থা আরও তলানিতে ঠেকে যখন বাবা সুরেন্দ্রনাথ পাঁজা মারা যান ৷ তখন অনাথবন্ধুর বয়স মাত্র তিন বছর ৷ সংসারের হাল ধরার মতো কেউ নেই ৷ অসহায় বিধবা কুমুদিনীদেবী সন্তানদের নিয়ে চলে আসেন মেদিনীপুর শহরে ৷ শহরের টাউন স্কুলে পড়াশোনা শুরু অনাথবন্ধুর ৷ সেখান থেকেই বিপ্লবী কাজকর্মে হাতেখড়ি ৷ স্কুলছাত্র অনাথবন্ধু যোগ দেয় বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সে ৷ নেয় প্রশিক্ষণ ৷ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে সে ৷ পড়াশোনার সঙ্গে বিপ্লবী কাজকর্ম চলতে থাকে ৷ তবে অভাব তার পড়াশোনার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ৷ পড়াশোনা সেভাবে থেমে থাকলেও বিপ্লব থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেননি যুবক অনাথবন্ধু ৷ ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় জীবন উৎসর্গকারী নির্ভীক মুক্তিযোদ্ধার প্রতি বিপ্লবী অনাথবন্ধু পাঞ্জা জন্মদিনের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জ্ঞাপন ৷