Skip to content

জকপুরের মহিশা গ্রামের মনসা মন্দির!

পশ্চিম মেদিনীপুর নিজস্ব সংবাদদাতা : নদীমাতৃক দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর । সেখানে যেমন আছে নদীর জলে পুষ্ট সবুজ গভীর জঙ্গল ঠিক তেমনি আছে ঐ জঙ্গলের স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে অগুন্তি সরীসৃপের পরিবার । ছোট বড় নদীর জল , ঝোপঝাড়ে বেড়ে ওঠা এই সরীসৃপদের মধ্যে বাংলার বিখ্যাত সব সাপেরা গড়ে তুলেছে এক সুন্দর ইকোসিস্টেম । তাদের খুব পছন্দের জায়গা পশ্চিমবাংলার এই স্থানটি । ঘন জঙ্গলের মধ্যে সূর্যালোক প্রবেশ করেনা, বানভাসি শ্রাবণ-ভাদ্রের থৈ থৈ নদীর দুকুল ছাপিয়ে জল ও চলে আসে সেই জঙ্গলে আর মনের সুখে দিন যাপন করে শঙ্খচূড়, কালনাগিনী, গোখরো, খরিস, চন্দ্রবোড়া সমেত আরো নানা অজানা সাপেরা । এদিকে এই বিশাল জেলায় আছে অঢেল চাষযোগ্য জমি । তাই কৃষকেরা রোজ মা মনসাকে স্মরণ করে ক্ষেতে যায় চাষ করতে । শীতে একটু আরাম । সাপেরা তখন হাইবারনেট করে, গর্তের নীচে শীতঘুম দেয় কিন্তু প্রচন্ড গরমের দাবদাহে বাইরে চলে আসে । বর্ষায় দেখায় উদ্দাম নৃত্য। পশ্চিম মেদিনীপুরের জকপুরের কাছে এমন এক জঙ্গল আছে যাকে গ্রামের মানুষেরা মনসার জঙ্গল বলে । ঐ জঙ্গলের দক্ষিণ পাশে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তারিত এক গভীর খাল ছিল । বর্ষার সময় অতিবৃষ্টিতে ঐ খাল দিয়ে খড়গপুর সহ পশ্চিমের উঁচু জায়গায় বৃষ্টির জল হৈ হৈ করে বয়ে যেত পুব দিকে আর বন্যার আকারে জমেই থাকত সেখানে । শরতের কাশফুলের রমরমায় খালপাড় তখন মেতে উঠত পুজোর আনন্দে । এখানকার কৃষকেরা মনের আনন্দে ধানচাষ করে আরভাদু পরব উদ্‌যাপন করে মনের আনন্দে কিন্তু তবুও কোথায় যেন একটু অশান্তি সর্বক্ষণের ...ঐ সর্পকুলে বসবাসের জন্য । মা মনসাকে সর্বদা স্মরনে-মননে রাখে । শ্রাবণ-ভাদ্রের শনি-মঙ্গলবারে মনসার পুজো দেয় । শুধু সাপের কারণেই নয় মনসাকে তারা কৃষিদেবী রূপেও মানে । তাদের রুজি-রোজগার, সম্বচ্ছরের খোরাকি সব ঐ ধান চাষকে ঘিরে । পর্যাপ্ত বর্ষায় প্রচুর ধানে মাঠঘাট যাতে সবুজে ভরে ওঠে, তাই সমস্ত চাষীরা একজোট হয়ে ঐ জঙ্গলের কোনো এক ধারে মা মনসার আরাধনা করে চলে বছরের পর বছর ধরে । পাকা ধান তোলার সময় প্রত্যেকে এক আঁটি করে পাকা ধান মাথায় করে মা মনসার থানে রেখে এসে মা'কে মিনতি জানায়: "মা গো, আমরা ছাপোষা মানুষ, দিন আনি দিন খাই, পেটের দায়ে চাষ করছি, আমাদের অপরাধ মার্জনা কোরো, সম্বচ্ছর সন্তানদের দুধেভাতে রেখো, পরের বছর যেন আবার চাষ করে তোমাকে ফসল দিয়ে পুজো দিতে পারি মা "প্রায় চারশো বছর আগে জকপুরের জমিদার যোগেশ্বর রায় একদিন ভোর রাতে মা মনসার স্বপ্নাদেশ পেলেন । তিনি স্পষ্ট দেখেন, চতুর্ভুজা মা মনসা হাত নেড়ে নেড়ে তাকে বলছেন, ঐ জঙ্গলেই মা আছেন । জমিদার যেন মায়ের পুজোর প্রচার করেন । ভয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ে জমিদার কাঁপতে কাঁপতে ঘটি ঘটি জল খেয়ে স্ত্রীকে ডেকে বলেন সব কথা । মূহুর্তের মধ্যে কাকভোরে জমিদার বাড়িতে যে যেখানে ছিল হাজির হয়ে যায় । ঐ জঙ্গলের সাপের কথা সকলের জানা । মা মনসার থান বলে জঙ্গলে যে স্থানটিতে স্থানীয় মানুষ পুজো করে সেখানে এক মস্ত উইঢিপি । তার নীচে কিলবিল করে অসংখ্য সাপ । একথা সকলে প্রত্যক্ষ করেছে । সূর্যোদয়ের পরেই সেদিন জমিদার সদলবলে ঐ স্থানে গিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে মায়ের নিয়মিত পুজোর আদেশ দেন । ক্রমে কাঠুরেরা কুঠার আর হাঁসুয়া দিয়ে ভয়ে ভয়ে জঙ্গল কেটে কিছুটা সাফ করে ফেলে । মায়ের থানে আসার রাস্তাও কাটা হতে থাকে । চোখের সামনে তারা বিষধর সাপেদের রাস্তা এপার ওপার করতে দেখে । উইঢিপিটিকে কংক্রিটে মুড়ে দেওয়া হয় । পাশে একটি লাল পদ্ম বানানো হয় উইঢিপির মাটি দিয়ে । ঢাক, শাঁখ ও ঘন্টার ধ্বনিতে জঙ্গলের চির নীরবতাকে ভেঙে দিয়ে মনসার থানকে মর্যাদা দেন জমিদার যোগেশ্বর রায় । নারীপুরুষ নিজের হাতে মায়ের পুজো দেয় সেখানে । 

May be an image of temple
May be an image of flower and temple

Latest