মিন্টু চৌধুরী: অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিশেষ করে সুবর্ণরেখার পাশাপাশি অঞ্চলে এই অষ্টমী পালন খুব পুরানো রীতি এবং ধুমধাম করে পালিত হয়। পড়ুয়া অষ্টমী, যা পৌড়া অষ্টমী,পটুয়া, পোড়া অষ্টমী বা প্রথমা অষ্টমী নামেও পরিচিত। অবিভক্ত মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং পূর্ব মেদিনীপুর সহ সুবর্ণরেখা অববাহিকার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এই উৎসবটি প্রচলিত।বাড়ির বড় ছেলে বা মেয়ের মঙ্গল কামনায় মঙ্গল ফোঁটা দেওয়া হতো। সকাল বেলা গায়ে হলুদ মেখে স্নান করে কাচা পোশাক, নতুন ঘুমসী পরে, তুলসীর মালা গলায় পরে মায়ের হাত থেকে মঙ্গল ফোঁটা নেওয়া গ্রামীন কৃষক পরিবারে এখনও প্রচলিত।

সামনে সাজানো থাকত দুটো থালা। একটি থাকতো গাঁদা ফুল, নতুন ধান, দুর্বা, চন্দন, ধূপ, প্রদীপ ও লক্ষি ঠাকুরকে লাগানো নতুন পোশাক। আর এক থালাতে থাকতো গুড়ের পায়েস, গাওয়া ঘি তে ভাজা বিভিন্ন রকমের গুড়ের পিঠে, সুজি, গোটা মুগ, রম্ভা ও লালআলু সেদ্ধ। তারপর মা ও বাবা চন্দনের ফোঁটা কপালে দিয়ে মাথায় ধান দুর্বা ও ফুল দিয়ে প্রদীপের থালা মাথায় ঠেকান। সঙ্গে উলুধ্বনি ও সংঙ্খধ্বনি দেওয়া হয়। ওইদিন বড় ছেলে বা মেয়ের পালনের দিন হিসেবে গ্রহণ করত বাড়ির সকলেই। ওরা কেউ মুড়ি, রুটি বা পোড়া জিনিস খাবে না, মার বা বকাঝকা কেউ করবে না। যা চাইবে তাই পাবে, ভালমন্দ খাওয়া, নতুন জামা কাপড় সবাই পেত আজও রয়ে গেছে এই অনুষ্ঠান ঝাড়গ্রাম জেলা, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড়, পিংলা, মাদপুর, দাঁতন, সবং ইত্যাদি। এছাড়া পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি, রামনগর, পটাশপুর ব্লকে।

এমনকি মেয়েদের বিয়ের পরও বাবার বাড়ি থেকে যায় মেয়ের শশুর বাড়িতে পালন করতে। সকাল থেকে মা ঠাকুমারা বিরি কলাই বেটে বড়ি দেন। ঐ বড়িতে সিঁন্দুর ও দুর্বা দিয়ে পুজো করা হয়। বিরি কলাই বেটে বিভিন্ন ধরনের পিঠে তৈরি করা হয়। এই অষ্টমী না গেলে বিরি বড়ি, মুলোশাক ও মুলো খাওয়া যায় না। এটি অগ্রহায়ণ মাসে শেষ বৃহস্পতিবারের পরে বা আগে পড়ে। অগ্রহায়ণ মাসে লক্ষী পুজোর সংগে একটা সংযোগ আছে এই অষ্টমী পালন।
লক্ষী হলেন বড় সন্তান তাই তাঁকে ও পালন করা হয়। যদি অসুস্থ থাকেন বা না থাকেন তাহলে বাবা পালন করেন যাদের বাড়িতে এই রীতি আছে।রাসযাত্রার ঠিক পরের কৃষ্ণা অষ্টমী তিথিতে পালিত হয় এই আঞ্চলিক লৌকিক উৎসব। এই রীতি ওড়িষার। উড়িয়া মতে এই রীতি পালিত হয়। আমাদের অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার বেশ কিছু টা অঞ্চল ওড়িষার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাই ওড়িষার লাগোয়া এলাকা গুলিতে এখনও এই উৎসব পালিত হয়। মা ও বাবা কেউ না থাকলে ছেলে বাবাকে চন্দনেরফোঁটা দিয়ে দিন টি পালন করে।