পশ্চিম মেদিনীপুর সেখ ওয়ারেশ আলী : মহালয়ার ভোর মানেই বাঙালির কাছে এক বিশেষ আবেগ। কাক ভোরে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রর জলসগম্ভীর সুরে মহিষাসুরমর্দিনী যেন অব্যর্থ ভোরের ডাক। স্মার্টফোন, স্মার্ট টিভি, ইউটিউব লাইভ স্ট্রিমিং—সবকিছু হাতে থাকলেও মহালয়ার সকাল রেডিও ছাড়া অসম্পূর্ণ বলেই মনে করেন সেইসব বাঙালি, রক্তে যাদের শিকড়ের টান।দেবীপক্ষের সূচনা ও পিতৃপক্ষের অবসানকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই মহালয়ার দিনে ঘাটে ঘাটে ভক্ত সমাগম হয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হল না। ভোরের প্রথম আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন ঘাটে উপচে পড়ে মানুষের ভিড়। কংসাবতী নদীর গান্ধীঘাট, আমতলা ঘাট থেকে শুরু করে ডি এ ভি ঘাট— সর্বত্রই তর্পণ উপলক্ষে ভক্তদের সমাবেশে জমে ওঠে আধ্যাত্মিক পরিবেশ।

ভক্তরা হাতে তিল, কুসুম, দুধ, জল নিয়ে ভোর থেকেই নদীর জলে দাঁড়িয়ে সম্পন্ন করেন পিতৃ তর্পণ। পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তি ও মুক্তির উদ্দেশ্যে দেওয়া হয় অর্ঘ্য নিবেদন। মন্ত্র পাঠ ও তর্পণের ধ্বনিতে চারিদিক মুখরিত হয়ে ওঠে। সকাল থেকেই নদীঘাটে ভেসে আসে ঘণ্টাধ্বনি, শঙ্খধ্বনি আর পুরোহিতদের জপমন্ত্র। সাধারণ মানুষও ভক্তিভরে যোগ দেন এই আধ্যাত্মিক পরিবেশে।এদিন গান্ধীঘাটে শুধু পুরুষরাই নয়, মহিলারাও সমানভাবে তর্পণে অংশ নেন।

পরিবার-পরিজনকে নিয়ে সকলে,ভোরবেলাতেই পৌঁছে যান ঘাটে। তর্পণ শেষে বহু মানুষ প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনা করেন পরিবারের মঙ্গল ও শান্তির জন্য। তর্পণ উপলক্ষে শহর জুড়ে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সকাল থেকেই প্রতিটি ঘাটে মোতায়েন ছিল পুলিশ। সিভিল ডিফেন্স কর্মীরাও নজরদারিতে ছিলেন তৎপর। যাতে ভিড়ের চাপে কোনও অপ্রিয় ঘটনা না ঘটে, সেইজন্য পৌরসভা এবং প্রশাসনের তরফে নেওয়া হয়েছিল বিশেষ পদক্ষেপ।

শৌচাগার, পানীয় জলের ব্যবস্থা ও ঘাটে পরিচ্ছন্নতার জন্য পৌরসভার কর্মীরাও সক্রিয় ছিলেন। প্রশাসনের এই তৎপরতায় নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় মহালয়ার তর্পণ। ভোর থেকে শহরের প্রতিটি নদীঘাটে চলতে থাকে এই আচার অনুষ্ঠান। শুধু তর্পণই নয়, মহালয়ার ভোর মানেই বাঙালির মনে বিশেষ এক সাড়া। এদিন ভোরে বহু মানুষ ঘরে বসেই শ্রবণ করেন মহিষা সুর মর্দিনী সম্প্রচার,টিভি চ্যানেল ও ভিডিও মাধ্যমে উপভোগ করে। মহালয়া ঘিরে তাই গোটা মেদিনীপুর শহর ভোর থেকেই রঙে রঙে, আলোয় আলোয় এবং ভক্তিময় আবহে ভরে ওঠে।