নিজস্ব সংবাদদাতা : স্নানযাত্রার পর ১৫ দিন অনসরে ছিলেন প্রভু জগন্নাথ। অনসর পর্বের পর আজ বৃহস্পতিবার থেকে জগন্নাথ দর্শনের সুযোগ পাবেন ভক্তরা। ২৬শে জুন বৃহস্পতিবার ভোরে দরজা খুলল পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘার জগন্নাথ মন্দির। ভোর ৫টা থেকেই মন্দিরের মূল দরজার সামনে ভক্তরা ভিড় জমান এবং সবার মুখে ছিল এক বিশাল আনন্দের হাসি। প্রতি বছর জ্যেষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জগন্নাথ নিজের ভাই এবং বোনের সঙ্গে ১০৮টি কলসির জলে পবিত্র স্নান করেন। পৌরাণিক ধ্যান-ধারণা মতে, অত্যধিক স্নানের কারণে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা অসুস্থ হয়ে পড়েন। যে কারণে একান্তবাসে থাকতে হয় তাঁদের। এর পর ১৫ দিনের জন্য মন্দির বন্ধ করে দেওয়া হয়। কয়েকজন পুরোহিত বৈদ্যের মতো ভগবানের সেবা করে তাঁর চিকিৎসা করেন। অসুস্থ হয়ে পড়ার পর রত্নজড়িত বস্ত্রের পরিবর্তে সুতির শ্বেত বস্ত্র পরিধান করেন তাঁরা, আভুষণও খুলে রাখা হয়।

ভোজনে দেওয়া হয় ফল, ফলের রস, তরল পদার্থ। পঞ্চম দিন বড় ওড়িয়া মঠ থেকে ফুলেরি তেল আসে, যা দিয়ে হাল্কা মালিশ করা হয়। এর পর রক্তচন্দন ও কস্তুরির প্রলেপ লাগানো হয়। এ সময় তাঁকে হাল্কা খাবার, যেমন, দুধ, ফলের রস ও কয়েকটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ খাওয়ানো হয়।দশম দিনে দশমুলারিষ্ঠে নীম, হলুদ, হরড়, বহেড়া, লবঙ্গ ইত্যাদি জড়িবুটির জল দিয়ে নরম মোদক বানিয়ে খেতে দেওয়া হয়।শাস্ত্র অনুযায়ী, বিশ্বকর্মা (বুড়ো কাঠমিস্ত্রি রূপে) মূর্তি বানানোর সময় রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর সামনে শর্ত রাখেন যে, তিনি দরজা বন্ধ করে মূর্তি বানাবেন। যতক্ষণ না তাঁর মূর্তি বানানো শেষ হচ্ছে, ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। তাঁর কাজ শেষ হওয়ার আগে দরজা খুলে গেলে তিনি মূর্তি বানানো ছেড়ে দেবেন। বন্ধ দরজার পিছনে মূর্তি নিমার্ণের কাজ হচ্ছে কি না, তা তদারকির জন্য রাজা প্রতিদিন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে মূর্তি তৈরির আওয়াজ শুনতেন। শাস্ত্র অনুযায়া, বিশ্বকমা (বুড়ো কাঠামাত্র রূপে) মৃতি বানানোর সময় রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর সামনে শর্ত রাখেন যে, তিনি দরজা বন্ধ করে মূর্তি বানাবেন। যতক্ষণ না তাঁর মূর্তি বানানো শেষ হচ্ছে, ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। তাঁর কাজ শেষ হওয়ার আগে দরজা খুলে গেলে তিনি মূর্তি বানানো ছেড়ে দেবেন।

বন্ধ দরজার পিছনে মূর্তি নিমার্ণের কাজ হচ্ছে কি না, তা তদারকির জন্য রাজা প্রতিদিন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে মূর্তি সৈ আওয়াজ শুনতেন। এমনই একদিন কোনও আওয়াজ তাঁর কানে না-এলে, তিনি অধীর হয়ে পড়েন। ভাবেন যে, বিশ্বকর্মা নিশ্চয়ই মূর্তির কাজ ফেলে রেখে চলে গেছেন। এই ভেবে রাজা দরজা খুললে, শর্ত অনুযায়ী বিশ্বকর্মা সেখান থেকে অন্তর্ধান হয়ে যান। তখনও জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি অসম্পূর্ণই ছিল। তাই দেখে রাজা বিলাপ করতে শুরু করলে, বিষ্ণু রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নকে বিলাপ না-করতে বলেন। রাজাকে দর্শন দিয়ে জানান, তিনি নারদকে কথা দিয়েছিলেন, বাল্যরূপে, এই আকারেই পৃথিবীলোকে বিরাজ করবেন। এর পর তিনি রাজাকে ১০৮টি ঘটের জলে তাঁর অভিষেকের আদেশ দেন। সেই দিনটি ছিল জ্যেষ্ঠ পূর্ণিমা। তখন থেকেই এই ধারণা প্রচলিত হয়ে পড়ে যে, যদি কোনও বালককে ঠান্ডা জলে অত্যধিক স্নান করানো হয় তা হলে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে। সে জন্য সেদিন থেকে জ্যেষ্ঠ মাসের আমাবস্যা পর্যন্ত অসুস্থ শিশুর মতো ভগবানের সেবা করা হয়। রথযাত্রার একদিন আগে, জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা সুস্থ হয়ে উঠলে তাঁদের মন্দিরের গর্ভগৃহে ফিরিয়ে আনা হয়। এর পর তাঁরা নিজের মাসির সঙ্গে দেখা করতে গুন্ডীচা মন্দির যান। এখানে বিভিন্ন প্রকারের ব্যঞ্জন তাঁকে ভোগে দেওয়া হয়।

মাসির বাড়িতে ৯ দিন কাটিয়ে পুনরায় মন্দিরে ফিরে আসেন।দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের পক্ষে জানা গেছে, এই ভোগে ভাজা, খিচুড়ি, ডাল, সুক্তো, মোচা দিয়ে তরকারি, পটলের তরকারি, বৈতালের ঘন্ট, পায়েস, মিষ্টি এবং বাংলার নানা ধরনের সুস্বাদু খাবার থাকবে। এছাড়া, বিদেশি ভক্তরা নিজের হাতে প্রভুর পছন্দের খাবার তৈরির আয়োজন করেছেন।