নিজস্ব প্রতিবেদন : পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়া মহকুমার মহিষাদলের প্রায় দীর্ঘ ২৪৮ প্রাচীণ জগন্নাথ দেব, মাসির বাড়ি থেকে রথে চড়ে রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন!প্রায় দীর্ঘ ২৪৮ বছরের পুরোনো মহিষাদল রাজবাড়ির রথযাত্রার বিশেষত্ব হলো জগন্নাথ দেবের সাথে রথে উপবিষ্ট থাকেন রাজবাড়ির কুলদেবতা মদনমোহন জিউ।
একটু পিছনে তাকানো যাক।জনকল্যানমূলক নানা প্রকল্পর জন্য মহিষাদল রাজবংশের রানী জানকী দেবীর শাসনকাল বিশেষ উল্লেখযোগ্য । ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই রাজপরিবারের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন। দেবদেবী ও পুজো অর্চনায় প্রগাঢ় ভক্তি থাকায় জানকী দেবী তার রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে মোট ১০৮টি মন্দির স্থাপন করেন। ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে রানি জানকী দেবী রাজবাড়ির ঠিক সামনেই প্রায় ১০০ ফুট উঁচু মদনগোপাল জিউ মন্দির তৈরি করেন ও ১৭৭৬ খ্রীষ্টাব্দে প্রজাদের অনুরোধে পুরীর ন্যায় রথযাত্রার সূচনা করেন । শুরুতে ১৭টি চূড়া ও ৩৪টি চাকা বিশিষ্ট রথের উচ্চতা ছিল ১০০ফুট। সমগ্র রথটি বার্মা সেগুন ও সাল কাঠে তৈরী। পরবর্তীতে কয়েকবার সংস্কার হলেও রথের মূল কাঠামোর কোন পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে পতাকার দণ্ডসহ মোট পাঁচতলা রথের উচ্চতা প্রায় ৮০ ফুট।
রথের কোণে কোণে কাঠের তৈরি মকর, সিংহ, ময়ূর ইত্যাদির প্রতিমূর্তি ক্ষোদিত আছে। শোভিত হয় বেশকিছু নান্দনিক তৈলচিত্র। আর মহিষাদলের রথের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এই রথযাত্রায় জগন্নাথের সঙ্গী বলরাম সুভদ্রার পরিবর্তে গোপাল জিউ ও রাজ রাজেশ্বরী।পূর্বে পরম্পরা অনুযায়ী পালকি চড়ে আসতেন রাজবাড়ির সদস্যরা, কামান ফাটিয়ে সূচনা হত রথযাত্রার। আবার উল্টোরথে গুণ্ডিচাবাড়ি থেকে বিগ্রহ ফিরে এলেও কামান ফাটানো হতো। ক্ষয়িষ্ণু এই রাজপরিবারের কালের আবহে বহু কিছু বদলালেও এখনো রথযাত্রার পুরনো ঐতিহ্য মেনে রাজ পরিবারের একজন প্রতিনিধি রাজছত্র ও দেহরক্ষী সহ পালকি চড়ে রাজবাড়ি থেকে রওনা দেন। পালকি থেকে নামার আগেই শিঙা বাজিয়ে জানান দেওয়া হয় রাজ প্রতিনিধির আগমন বার্তা। তিনিই পালন করেন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান। তারপর টান দেন রথের রশিতে। রথযাত্রার পথ খুব একটা দীর্ঘ নয়। মোটামুটি এক কি-মিটার মতো। বিকেল ৪টে নাগাদ জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি যাত্রা শুরু হয়ে ৫টার মধ্যেই যাত্রা শেষ হয়ে যায়। স্থানীয় অধিবাসীরা জগন্নাথ দেব ও মদন মোহন জিউর নামে জয়ধ্বনি দিতে দিতে উৎসাহ ভরে রথের রশিতে টান লাগায়। তাদের সাথে যোগ দেয় বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত বহু পুণার্থী ও পর্যটকরা। প্রতিবছরেই বহু পর্যটক আসেন মহিষা দলের রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে। মহিষাদলের রথযাত্রা ও একমাসকালীন চলা মেলা এখন বাংলার সমাজ জীবনের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।