হিন্দু সাধক সিয়ারাম বাবা কে? ভারতের বিশাল আধ্যাত্মিক ল্যান্ডস্কেপে, যেখানে ভক্তি এবং শৃঙ্খলা প্রকৃতির ঐশ্বরিক ছন্দের সাথে মিশেছে, সেন্ট সিয়ারাম বাবার গল্প । একজন শ্রদ্ধেয় সাধক যিনি নর্মদা নদীর তীরে কয়েক দশক ধরে বসবাস করেছিলেন, অটুট বিশ্বাস এবং অটল ভক্তির আলোকবর্তিকা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। তার অসাধারণ জীবন, বিশেষ করে তার উপাসনার অনন্য পদ্ধতি, অগণিত মানুষের কল্পনাকে ধারণ করেছে এবং যারা ঐশ্বরিকের সাথে গভীর সংযোগ খোঁজে তাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে।
একটি জীবন ভক্তি নিবেদিত :
সেন্ট সিয়ারামের গল্প হল ঈশ্বরের কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ এবং তাঁর আধ্যাত্মিক অনুশীলনের প্রতি উৎসর্গের একটি। পবিত্র নর্মদা নদীর তীরকে তার বাসস্থান হিসাবে বেছে নিয়ে, তিনি সান্ত্বনা এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সন্ধানে পার্থিব জীবনের আরাম ত্যাগ করেছিলেন। নর্মদা, ভারতের পবিত্রতম নদীগুলির মধ্যে একটি হিসাবে শ্রদ্ধেয়, কেবল তাঁর বাড়ি নয়, তাঁর মন্দির হয়ে উঠেছে, যেখানে তাঁর দৈনন্দিন জীবন ভক্তি, শৃঙ্খলা এবং প্রার্থনার চারপাশে বোনা ছিল।কয়েক দশক ধরে , সেন্ট সিয়ারাম তপস্যা এবং প্রার্থনার জীবনযাপন করেছেন, যেখানে তিনি তীব্র আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলা অনুশীলন করেছিলেন। তার সবচেয়ে অনন্য অভ্যাস ছিল রামচরিত মানস , সাধক-কবি তুলসীদাস রচিত রামায়ণের মহাকাব্য রচনা , এমনভাবে যা এমনকি সবচেয়ে অভিজ্ঞ আধ্যাত্মিক অনুশীলনকারীদেরও বিস্মিত করেছিল: দাঁড়ানো অবস্থায় ।
সাধক সিয়ারামের ভক্তি তার শারীরিক অবস্থানে মূর্ত ছিল - রামচরিত মানসকে ঘন্টার পর ঘন্টা জপ করার সময় দাঁড়িয়ে। এই ভঙ্গি বজায় রাখার ক্ষেত্রে তার শৃঙ্খলা নিছক একটি শারীরিক কৃতিত্ব ছিল না বরং প্রভু রামের প্রতি তার গভীর ভালবাসা এবং অটল প্রতিশ্রুতির একটি শক্তিশালী প্রতীক ছিল ।
জপ করার সময় দাঁড়িয়ে থাকার কাজটির বেশ কিছু আধ্যাত্মিক তাৎপর্য রয়েছে বলে জানা যায়। দাঁড়ানো অবস্থান ঈশ্বরের সেবা করার জন্য সতর্কতা এবং প্রস্তুতির প্রতীক। এটি আধ্যাত্মিক জাগরণের একটি অবস্থাকে প্রতিফলিত করে, যেখানে শরীরের প্রতিটি অংশ, প্রতিটি কোষ এবং সাধু সত্তার প্রতিটি মুহূর্ত প্রভু রামের নামের প্রতি সক্রিয় শ্রদ্ধায় ছিল। অবিচ্ছিন্নভাবে দাঁড়িয়ে থাকার মাধ্যমে, সেন্ট সিয়ারাম নিজেকে মহাবিশ্বের ঐশ্বরিক শক্তির সাথে সারিবদ্ধ করে, প্রতিটি মন্ত্রের সাথে ঐশ্বরিক উপস্থিতির কাছাকাছি এসেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়েছিল।
তাঁর অটল একাগ্রতা এবং তীব্র ভক্তি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন বহু ভক্ত। বলা হয় যে আবহাওয়া যাই হোক না কেন, প্রখর সূর্যের নীচে বা বর্ষার বৃষ্টির সময়, সাধু সিয়ারাম তাঁর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পবিত্র শ্লোক উচ্চারণ করতেন। তাঁর অনুশীলনের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি এবং তাঁর অদম্য ভক্তি তাঁকে মানুষের মধ্যে অপরিসীম সম্মান অর্জন করেছিল।
মা নর্মদার সাধক প্রসিদ্ধ সন্ত ও সাধূ পরম পূজ্য সিয়ারাম বাবা ১১৬ বৎসর বয়সে দেবলোকে গমন করেছেন। মোক্ষদা একাদশীর দিন সন্ধ্যা ছ'টা দশ মিনিট নাগাদ দেবলোক প্রাপ্ত হয়েছেন। বিশ্বের সমস্ত সনাতনীদের হৃদয় আজ স্তব্ধ। মা নর্মদার পরম ভক্ত সাধক সিয়ারাম বাবার বিচার, শিক্ষা, উপদেশ সদা আমাদের সাথে থেকে আমাদের পথ দেখাবে। আজ দেশ অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন এক ঋষি মহাত্মাকে হারালো। ইনি ১৮ বৎসর কঠিন সূর্য বা এক দৃষ্টে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থেকে সাধনা করেছিলেন নর্মদা তটে দাঁড়িয়ে। কথিত ইনি বিনা আলোকে প্রদীপ জ্বালাতে পারতেন। সীতারাম বাবা এদেশের এক চলন্ত ইতিহাস ছিলেন। নর্মদা মাতার দুই প্রাণাধিক প্রিয় পুত্রের মধ্যে আজ একজন চলে গেলেন। রয়ে গেলেন পরমহংস শুখদেব মুনি। সাধক বাবার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
মধ্যপ্রদেশের খরগতে নর্মদা নদীর মাঝে দ্বীপের মতো স্থানে উনি বসবাস করতেন। নর্মদা মাতা, মহাদেব, রাম সীতার সাধনায় মগ্ন থাকতেন সর্বদা। উনি সারাদিন ওনার সাথে দেখা করতে আসা ভক্তদের জন্য চা বানাতেন ও পরিক্রমাকারী সাধুদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু লাখ টাকা দান করলেও উনি নিতেন না। মাত্র ১০ টাকা নিতেন, তাও রেজিস্ট্রার-এ লিখে রাখতেন দাতার নাম। এই টাকা উনি সাধুদের সেবায় লাগিয়ে দিতেন। উনার বাসস্থান প্রায় জলে ডুবে যায় বলে সরকার তরফে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয় আশ্রম তৈরীর জন্য। কিন্তু উনি তা পাশের গ্রামের নাগ দেবতার মন্দিরে দান করে দেন মন্দির নির্মাণ ও পরিক্রমা সাধুদের সেবার জন্য। এই রকম বহু সাধক এখনও ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে সাধনায় লিপ্ত। উচ্চকোটির সাধক এখন সত্যিই দুর্লভ। যারা তাদের জীবন ঈশ্বর ও ভক্তদের সেবায় যুক্ত করে উৎসর্গ করেছেন। ভারতবর্ষ তাই সকল দেশ থেকে আলাদা। কারন ভারতবর্ষ সাধন ক্ষেত্র।