নিজস্ব সংবাদদাতা : প্রাচীনকাল থেকেই জীবন-জীবিকা ও যাতায়াতের প্রয়োজনে নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে জনপদ। নদী জন্ম দেয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির। প্রায় প্রতিটি নদীর প্রবাহপথ জুড়ে ছড়িয়ে আছে ইতিহাস, মিথ, লোকগাথা, অনালোকিত ঘটনাপ্রবাহের রহস্য! একসময় নদী তীরবর্তী অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল কত রাজবাড়ি, জমিদারবাড়ি। সেইসব রাজা, জমিদাররা কেউ বা ছিলেন প্রজাবৎসল দক্ষ প্রশাসক কেউ বা প্রজাহিতবিমুখ অত্যাচারী। তাঁদের জীবনকাল কার্যকাল জন্ম দিয়েছে এক একটি ইতিহাসের।

তাঁদের ঘিরে তৈরি হয়েছে কত গল্পকথা, মিথ। রাজবাড়ি জমিদারবাড়ির নানারকম মুছে যাওয়া কীর্তিরও সাক্ষী হয়ে থাকে নদী। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের ছোট্ট ডুলুং নদীর তীরে গড়ে ওঠা এইরকম এক জমিদারবাড়ির কথা তাঁর 'গড় রোহিণী দেবোত্তর এস্টেট' বইতে লিপিবদ্ধ করেছেন চৈতালি কুন্ডু নায়েক। প্রকাশক অরিন্দমস। রবিবার মেদিনীপুর শহরে বিধাননগরে প্রকাশকের বাগান বাড়িতে এক বর্ণময় অনুষ্ঠানে এই গবেষণাধর্মী বইটির মোড়ক উন্মোচন করলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কবি বিপ্লব মাজী।

ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের ডুলুং নদীর তীরে গড়ে ওঠা রোহিণী জমিদার বাড়ির ইতিহাস অনালোকিত। পরবর্তী সময়ে 'গড় রোহিণী দেবোত্তর এস্টেট' প্রতিষ্ঠা করেন জমিদার লক্ষ্মীনারায়ণ ষড়ঙ্গী। তাঁর গৌরবোজ্জ্বল কার্যকাল সম্পর্কে আঞ্চলিক ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু পাঠককে জ্ঞাত করতে চেয়েছেন লেখক। রোহিণীগড়ে প্রতিষ্ঠিত ষড়ঙ্গী জমিদার বংশের যা কিছু সমৃদ্ধি ও উত্থান হয়েছিল লক্ষ্মীনারায়ণ ষড়ঙ্গীর আমলেই। লেখা প্রসঙ্গে এসেছে পুরাতন রোহিণীগড়ের কথা, বৈষ্ণবসাধক রসিকানন্দের কথা, তার পরবর্তী সময়ের ষড়ঙ্গী জমিদার বংশের অতীত ইতিহাস। বহু প্রমাণ্য নথী দিয়ে লেখক মূলত জমিদার লক্ষ্মীনারায়ণ ষড়ঙ্গীর অনালোকিত কার্যকালটুকু জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন।

সেই প্রসঙ্গে এসেছে লক্ষ্মীনারায়ণ ষড়ঙ্গীর পরবর্তী উত্তরাধিকারী মহাপাত্র বংশের সামান্য কথাও। এই বই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাবন্ধিক ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক ডঃ মধুপ দে। বইটির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন প্রাবন্ধিক অধ্যাপক রঞ্জিত কুমার নায়েক, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা অমিতা নয়েক, আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক অতনুনন্দন মাইতি, কবি, প্রাবন্ধিক ও মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক ড. প্রসূন কুমার পড়িয়া, প্রাবন্ধিক, ইতিহাস গবেষক ও শিক্ষক অতনু মিত্র, ছড়াকার মিতালী জানা, শিক্ষিকা রুমেলা সিংহ রায়, অধ্যাপক সৈকত সরকার, শিক্ষিকা অর্পিতা কুন্ডু, আঞ্চলিক সংস্কৃতি গবেষক ভাস্করব্রত পতি, সুবর্ণরৈখিক ভাষা ও সংস্কৃতি পরিবারের অন্যতম সদস্য, শিক্ষক ও সমাজকর্মী সুদীপ কুমার খাঁড়া, ক্ষেত্র সমীক্ষক সুমন বিকাশ মণ্ডল, কবি, শিক্ষক এবং 'গড় রোহিণী দেবোত্তর এস্টেট' গ্রন্থের সম্পাদক আনন্দরূপ নায়েক, প্রকাশক অরিন্দম ভৌমিক, রিংকি ভৌমিক প্রমুখ। বইটির লেখক চৈতালি কুন্ডু নায়ক বইয়ের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন।