পশ্চিম মেদিনীপুর, সেখ ওয়ারেশ আলী : শালবনির "কমলা" গ্ৰামটিতে স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে ব্রিটিশ আমলে, ছোট জনবসতির পাশেই ইংরেজ সরকার এয়ারপোর্ট তৈরি করেছিল। পরবর্তী সময়ে সেই বসতি বড় গ্রামে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সেই গ্রামের বাসিন্দাদের ভিটেমাটি হারানোর আতঙ্ক তাড়া করছে! কারন গ্রামের মানুষদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে পাঠানো হয়েছে উচ্ছেদের নোটিস। ফলে সমস্যায় পড়েছে শালবনীর কমলা গ্রামের ৩০০-র বেশি পরিবার। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের বাঁকিবাঁধ গ্রাম পঞ্চায়েতের কমলা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, নোটিস পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের DEO (Defence Estate Officer) এর তরফে। প্রসঙ্গত, ১৯৪০ সাল নাগাদ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কমলা এলাকায় এয়ারপোর্ট তৈরি করেছিল ইংরেজরা। মূলত যুদ্ধের সুবিধার জন্য এয়ারপোর্টটি তৈরি করা হয়। ১৯৪২ সালে ৬ মাসের জন্য অন্যত্র সরে যাওয়ার নোটিস দিয়ে ইংরেজরা জানায়, বোমা-গুলি চলতে পারে। এরফলে বিপদে পড়বে গ্রামবাসীরা। তাই অস্থায়ীভাবে তাঁদের অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। সেই মতো অন্যত্র সরে যায় গ্রামবাসীরা। যুদ্ধ মিটে গেলে গ্রামবাসীরা নিজেদের ভিটেতে ফিরে আসতে শুরু করেন। ইংরেজ বিতাড়নের পর তাদের পরিত্যক্ত এয়ারপোর্টের জমিতে তৈরি হয়েছে টাকা ছাপানোর টাঁকশাল। তার এক পাশেই তৈরি হয়েছে কোবরা বাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। আরও কিছুটা দূরে বিভিন্ন ফ্যাক্টরি তৈরি হয়েছে। ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে কমলা গ্রাম। ঠিক সেই সময়ই ২০২২ সালে এই গ্রামের বাসিন্দাদের উচ্ছেদের কথা জানায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তারপরই গ্রামবাসীরা প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অফিসেও গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। গ্রামবাসীরা জানান, পাঁচ পুরুষ ধরে এই এলাকায় মানুষ বসবাস করছে। এখন বলছে উচ্ছেদ করে দেবে। পরিবারগুলি কোথায় যাবে? ভিটেমাটি হারালে কোথায় যাব? আমাদের কথা ভাবতে হবে। জমি অধিগ্রহণ হলে, আরও দু’-তিনটি গ্রামের মানুষ সমস্যায় পড়বে। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছেও তারা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টি দেখার আবেদন জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা বলেন উচ্ছেদের থেকে মৃত্যু শ্রেয় আমাদের কাছে। এই গ্রাম ছেড়ে তারা কোন ভাবেই অন্যত্র যেতে চাননা বলেই সাফ জানিয়েছেন তারা।পাশাপাশি রাস্তার পাশে স্থানীয় যারা দোকান করে দুবেলা দুমুঠো অন্যের জোগাড় করছে তাদের মাথায় পড়েছে হাত। তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা ট্যাক্স দিয়ে বসবাস করছি। হঠাৎ করে এই ভাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক নোটিশ দিয়ে বাড়ি ছাড়তে বলায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন, তারা যেন আমাদের সামনে কোন প্রতিনিধি পাঠিয়ে কথা বলার ব্যবস্থা করেন। গ্রামে এনিয়ে আলোচনাও হয়েছে। আতঙ্কে রয়েছেন গ্রামের ৩০০ টি পরিবার। খাওয়া-দাওয়া ও ঠিকমতো করছেন না এলাকার মানুষজন। ভয়ে ভয়ে দিন গুনছে তারা। এনিয়ে মেদিনীপুর সদর মহকুমা শাসক মধুমিতা মুখার্জি বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তবে সরকারি ভাবে এখনো কোনো নোটিশ পায়নি আমরা। জায়গাটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের জায়গার পার্শ্ববর্তী। তবে যেই গ্রামে মানুষজন বসবাস করেছে সেই জায়গাটি সরজমিনে খতিয়ে দেখে কাগজ নিয়ে মাপ-যোপ করতে হবে। অফিসিয়াল ভাবেই আমাদের কাছে জানালে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। পাশাপাশি এও বলেন, যারা গ্রামে বাস করছেন সত্যি যদি জায়গাটি তাদের ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে পুনর্বাসন নিয়েও সরকার ভাববে।