Skip to content

বাংলাদেশের বিতর্কিত নায়িকা পরীমনির সঙ্গে নাম জড়িয়ে বরখাস্ত পুলিশ আধিকারিক গোলাম সাকলায়েন, আবারও প্রমাণ হলো দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য!

ঢাকা জাকির হোসেন : বাংলাদেশের আলোচিত ও বিতর্কিত নায়িকা পরীমনির সঙ্গে নাম জড়িয়ে গিয়েছে পুলিশ আধিকারিক গোলাম সাকলায়েনের। অভিযোগ করা হয়েছে যে, ওই পুলিশ আধিকারিক পরীমনির সঙ্গে ‘অনৈতিক সম্পর্ক’ গড়ে তুলেছেন। এমন অভিযোগ ওঠার পর চাকরি থেকেও তাকে বরখাস্ত করার কথা উঠেছে। মানুষের মুখে মুখে ফিরছে, 'দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য -তা আবার প্রমাণিত হলো৷' এখন প্রশ্ন উঠছে কে এই গোলাম সাকলায়েন সিথিল?

গোয়েন্দা (ডিবি)-গুলশান বিভাগের এডিসির দায়িত্বে থাকার সময় পরীমনির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান গোলাম সাকলায়েন। তা নিয়ে আলোচনা শুরুর পর প্রথমে সাকলায়েনকে ডিবি থেকে সরিয়ে মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে তাকে ঝিনাইদহ ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়। এবার পরীমনিকাণ্ডে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর আবেদন করা হয়েছে সেই সাকলায়েনকে। গত ১৩ জুন বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শৃঙ্খলা-২ শাখা থেকে উপসচিব রোকেয়া পারভিন জুঁই স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়৷ পরে পরীমনিকাণ্ডে বিভাগীয় মামলায় এই পুলিশ আধিকারিককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের সরকার।

তবে সাকলায়েনের বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে সাধারণ মানুষকে হেয় করা ও চরম বিপদে ফেলার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে৷ এমনই একজন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য জান্নাতুল ফেরদৌস৷ পেশায় আইনজীবী৷ তাঁর বাবার সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘এই সেই ব্যক্তি (গোলাম সাকলায়েন), যিনি আব্বার এফআর টাওয়ার মামলায় ডিবি থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। প্রায় ৬-৭ দিন আমি ও আম্মা আব্বাকে দেখতে প্রতিদিনই ডিবি অফিসে যেতাম।’

দীর্ঘ স্ট্যাটাসে ঘটনার আদ্যোপান্তও তুলে ধরেছেন জান্নাতুল। তিনি লিখেছেন, ‘এই সেই ব্যক্তি, যিনি প্রতারণামূলক এবং জোরপূর্বকভাবে সিআরপিসির ১৬৪ ধারার অধীনে জবানবন্দি নিতে আব্বার সম্মতি নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আমি সম্মতি না দেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলাম আব্বাকে। কেননা, এ ঘটনায় মোটেও জড়িত ছিলেন না তিনি। কিন্তু আমি ডিবি অফিসে যাওয়ার আগেই তিনি আব্বার কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য নিয়ে আদালতে পরদিন জমা দিয়ে দেন। এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করায় আমার ওপরও ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন এবং আব্বাকে বলেন, আমি যাতে চুপ থাকি। তার জানা ছিল না যে চুপ থাকার জন্য জন্মগ্রহণ করিনি আমি৷ তিনি (গোলাম সাকলায়েন) যেদিন এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের জন্য জমির মালিক হিসেবে আব্বাকে গ্রেপ্তার করেছিলেন, তখন আব্বা এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে তাঁকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। আব্বার বয়স তখন ৭৭ বছরের বেশি।'

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় পদ্মার পাড়ে মোক্তারপুর গ্রামে জন্ম সাকলায়েনের। খুবই সাধারণ পরিবারে জন্ম হয় তার। তার জীবনে সাফল্য এসেছে লড়াই করেই। রাজশাহীর কলেজে ভর্তি হলেও মেসে থেকে পড়াশোনা করার সামর্থ্য ছিল না তার পরিবারের। তাই প্রতিদিন গ্রাম থেকে সাইকেলে করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে রাজশাহী এসে ক্লাস করতেন তিনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একটি কোচিং সেন্টারে সাধারণ জ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে এবং টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট পাওয়ার আগেই ৩০তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএসে) পরীক্ষার আবেদন করেন সাকলায়েন। তার প্রথম পছন্দ ছিল পুলিশ ক্যাডার। সেই সময়েই বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের পরীক্ষায় প্রথম হন সাকলায়েন। একই সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে সহকারি উপজেলা শিক্ষা আধিকারিক হিসেবে যোগ দেন সেই চাকরিতে। সেই অবস্থায় ৩০তম বিসিএসে সাফল্য পান তিনি। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পূর্বে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণেও পেয়েছিলেন বেস্ট প্রবেশনারি অ্যাওয়ার্ড এবং বেস্ট অ্যাকাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড। পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি মাস্টার্স অব পুলিশ সায়েন্সেও প্রথম হয়েছিলেন তিনি। সাহসিকতা এবং কাজে দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) পান তিনি। সাকলায়েন ডিএমপির গোয়েন্দা (উত্তর) শাখার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। তার স্ত্রীও একজন প্রশাসনিক আধিকারিক তথা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্তা৷ তাঁদের একটি সন্তানও আছে। ২০২১ সালের জুলাইয়ে পরীমনির সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময়কালে তার স্ত্রী ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি জেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

সাকলায়েনের সঙ্গে পরীমনির অবৈধ সম্পর্কের কারণেই তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। ২০২১ সালে পরীমনির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় তার। সেই সময়ে তিনি নিয়মিত পরীমণির বাড়িতে যেতেন এবং গভীর রাতে দুজনে গাড়ি নিয়ে বের হতেন বলেও জানা যায়। সাকলায়েনের বাড়িতে তার স্ত্রী না থাকা অবস্থায় পরীমণি গিয়ে প্রায় ১৭ ঘণ্টা সময় কাটান। এরপর জনসমক্ষে আসে তাদের একান্ত ঘনিষ্ঠ দৃশ্য। তাতেও শুরু হয় সমালোচনা। এরপরেই সাকলায়েনের বিরুদ্ধে করা হয় তদন্ত কমিটি। ওই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই সাকলায়েনকে ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করার জন্য পিএসসির কাছে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। বাংলাদেশের পুলিশ অধিদপ্তরের স্মারকে বলা হয়েছে, উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রোক্ত স্মারকের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশক্রমে জানানো যাচ্ছে যে, গোলাম সাকলায়েন, পিপিএম (বিপি-৮৬১২১৪৭৫৫১), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, ঝিনাইদহ ইতোপূর্বে এডিসি, ডিবি গুলশান বিভাগ, ডিএমপি, ঢাকায় কর্মকালে নায়িকা পরীমনির সঙ্গে ঘটনাক্রমে দেখা হয় এবং যোগাযোগ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নায়িকা পরীমনির বাসায় নিয়মিত রাত্রি যাপন করতে শুরু করেন। পুলিশ অধিদপ্তরের এলআইসি শাখা কর্তৃক প্রদান করা তার ফোনের সিডিআর বিশ্লেষণ অনুযায়ী গত ০৪/০৭/২০২১ তারিখ থেকে ০৪/০৮/২০২১ তারিখ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) নায়িকা পরীমনির বাসায় অবস্থান করেছেন। নায়িকা পরীমনির মোবাইলের ফরেনসিক রিপোর্ট (সিআইডি কর্তৃক মামলার আলামত হিসেবে জব্দকৃত) পর্যালোচনায় দেখা যায়, তার ও পরীমনির আদান-প্রদান করা মেসেজসমূহ (২৯ জুলাই, ২০২১ তারিখ হতে ৩ আগস্ট, ২০২১ তারিখ পর্যন্ত) সামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনির ফেসবুক আইডি ও গোলাম সাকলায়েন সিথিল নামে আপনার ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথোপকথন এবং তাদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে (১১ জুলাই, ২০২১ তারিখ হতে ৪ আগস্ট, ২০২১ তারিখ পর্যন্ত) কথোপকথন সাধারণ পরিচিতি বা পেশাগত প্রয়োজনে স্থাপিত কোন সম্পর্কের নয় বরং অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক। সিআইডির স্মারক নং-আইটি-ফরেনসিক/১৫৭৩, তারিখ-২/৯/২০২১ মূলে গত ১ আগস্ট, ২০২১ তারিখ ভোর ৬ টা থেকে ২ আগস্ট ২০২১ তারিখ রাত ৩ টা পর্যন্ত রাজারবাগ মধুমতি পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টার্সে নায়িকা পরীমনির যাতায়াতের ধারণ করা সিসিটিভি ফুটেজের ফরেনসিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে ও সাক্ষীদের জবানবন্দি অনুযায়ী প্রতীয়মান হয় যে, গত ১ আগস্ট, ২০২১ তারিখে তার পূর্ব পরিকল্পনা ও সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে সাকলায়েনের স্ত্রী না থাকাবস্থায় নায়িকা পরীমনি তার রাজারবাগের সরকারি বাসায় যান এবং প্রায় ১৭ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করে ২ আগস্ট ২০২১ রাত ০১.৩০ মিনিটে বাসা ত্যাগ করেন। তার ও নায়িকা পরীমনির সম্পর্কের বিষয়টি বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায়, টেলিভিশনে ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং যার ফলে জনমনে এ বিষয়ে নানারূপ বিরুপ প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার জন্ম দেয়।

এতে আরও বলা হয়, গোলাম সাকলায়েন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে সরকারি দায়িত্বের বাইরে নায়িকা পরীমনির সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। তিনি বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক হওয়া সত্ত্বেও পরীমনির সঙ্গে তার বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, পরীমনির সঙ্গে জন্মদিন উদযাপন ও নিজের সরকারি বাসভবনে নিজ স্ত্রীর অবর্তমানে সময় কাটানোর মত ঘটনা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে তা প্রচারিত হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

অন্তরঙ্গ অবস্থায় নায়িকা পরীমনি ও বরখাস্ত হওয়া পুলিশের আধিকারিক গোলাম সাকলায়েন

Latest