ঢাকা, জাকির হোসেন: বাংলাদেশে গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে, এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া লক্ষ লক্ষ আন্দোলনকারীর ওপর গত ১৫ জুলাই শাসকদল আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের দেশজুড়ে সিরিজ হামলা, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর প্রতিবাদে ১৬ জুলাই দেশজুড়ে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে, রাজপথে বিক্ষোভ করে সকল মেডিকেল কলেজের পড়ুয়া তথা শিক্ষার্থীরা৷ মেডিকেল শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভে দেশব্যাপী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে শাসকদল আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন 'ছাত্রলীগ'৷
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করে৷ এছাড়া স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, মুগদা মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ সহ দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সব বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে শামিল হয়৷ শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ক্যাম্পাস ও রাজপথজুড়ে বিক্ষোভ মিছিলগুলোতে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে দেশ৷ এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, মুগদা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ, নওগাঁ মেডিকেল কলেজ, রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ সহ বেশ কয়েকটি কলেজে বিস্তৃতভাবে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা৷ জানা যায়, সব সন্ত্রাসীরাই ছাত্রলীগের পদধারী নেতা ও কর্মী৷
গত সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শোডাউন দেয় ছাত্রলীগ৷ সেদিন ছয়টি ককটেল বিস্ফোরণ করে তারা৷ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে৷ সেদিন ছাত্রলীগের হামলায় প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়৷ ১৬ জুলাই বুধবার শিক্ষার্থীরা যাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে না পারে সেজন্য তাদের হলে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে৷
ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে, যা মিটফোর্ড নামেও পরিচিত, সেখানে ১৬ জুলাই দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিট নাগাদ আন্দোলনে অংশ নিতে কলেজ গেটের সামনে জড়ো হলে শিক্ষার্থীদের আটকে দেয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। এসময় ছাত্রলীগ কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর উপর্যুপরি হামলা করে বলে জানায় আন্দোলনকারীরা। হামলায় ২০১৮-২০১৯ সেশনের মেডিকেল শিক্ষার্থী নাফিস আনজুম খান অধরা মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। এছাড়াও আরও ৬ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে৷ মিটফোর্ডের শিক্ষার্থীরা জানায়, "নিজেদের কলেজ ক্যাম্পাসে আমাদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। আমাদের ছাত্রদের হলে আটকে রেখেছিল। বের হতে দেয়নি। নারী শিক্ষার্থীদের হলে গিয়ে ভয়াবহ হামলা ও যৌন হয়রানি করেছে তারা৷ এর বিচার না হওয়া অবধি আমরা ক্লাস, আইটেম, টার্ম সব বয়কট করলাম৷" একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনরত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা সকাল সাড়ে ১১টায় ক্যাম্পাস থেকে বের হন বিক্ষোভ মিছিলের জন্য। এর কিছুক্ষণের মধ্যে ১১টা ৫১ মিনিটে তাদের ওপর প্রথম হামলা হয়। এরপর তারা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বিক্ষোভ করতে থাকেন। তখন দ্বিতীয় দফায় সাড়ে ১২টা নাগাদ তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় বাসভবন 'গণভবন' এর পাশেই অবস্থিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ১৬ জুলাই সকাল ১০টায় কলেজ প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকে৷ জড়ো হয়ে কলেজের অভ্যন্তরে ও আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে৷ তবে এর আগেই কলেজে মিছিল না করতে মেসেঞ্জার গ্রুপে শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আহসানুল কবীর দীপ্ত৷ তবে শিক্ষার্থীরা সব বাধা উপেক্ষা করে সফলভাবে বিক্ষোভ মিছিল শেষ করলেও এর জের ধরে মিছিলের পর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা৷ দুপুরে ১৪তম ব্যাচের ছাত্র নিলয় ইবনে মাহমুদের ওপর বর্বরোচিত হামলা করা হয়৷ কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে জোহরের নামাজ পড়ে বের হবার পথে তার ওপর এই হামলা চালায় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া সন্ত্রাসীরা৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিলয়ের এক সহপাঠী জানাল, "ওই সন্ত্রাসীরা নিলয়কে বেধড়ক মেরে রক্তাক্ত করেই ক্ষান্ত হয়নি, ওরা পুলিশ ডেকে তাকে 'শিবির' ও 'চোর' হিসেবে অপবাদ দিয়ে ধরিয়ে দিতেও উদ্যত হয়েছিলো৷ রাস্তায় ফেলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসীরা উপর্যুপরি আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত করে নিলয়কে৷" শেষ খবর পাওয়া অবধি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের ১৪তম ব্যাচের এই শিক্ষার্থী৷ জানা যায়, হামলাকারী সবাই ছাত্রলীগের সদস্য৷ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক উপ-সম্পাদক আসিফ দিহান ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি রাগীব শাহরিয়ারের নির্দেশে এ হামলায় অংশ নেয়- মাসুমুল হাসান আলিফ (১২তম ব্যাচ), তুষার আহমেদ হাবিব (১২তম ব্যাচ), আহসান হাবিব আকাশ (১৩তম ব্যাচ), সাগর সেন (১৩তম ব্যাচ), নাইমুল আরেফীন (১৫তম ব্যাচ) এবং সাথে আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী৷ এরা সবাই ওই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মী৷
ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই সকাল থেকে বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগানে মুখর করে তোলে কলেজ প্রাঙ্গণ৷ কলেজের সীমানার মধ্যে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির সময় মুগদা মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মাহমুদুল ইসলাম অনয়ের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে শিক্ষার্থীদের ওপর৷ ফলে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়৷ এই হামলাতে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই কলেজের চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবিদ আহসান তাহমিদ ও ফারহান রাব্বীর বিরুদ্ধে৷ হামলাকারী সন্ত্রাসীরা হলো- ১ম ব্যাচের মাহমুদুল ইসলাম অনয়, ৩য় ব্যাচের শরিফুল ইসলাম, ৪র্থ ব্যাচের আবিদ আহসান তাহমিদ, রাফি ওয়ারেস, মো: আবদুল্লাহ, নাফিউল আজম ত্বোহা, আকিফুর রহমান সাকিব; পঞ্চম ব্যাচের মেহরাব জামী ও ষষ্ঠ ব্যাচের সাদমান শাদ সহ কয়েকজন সন্ত্রাসী৷ এদের মধ্যে কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে আবিদ আহসান তাহমিদের বিরুদ্ধে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী শিক্ষার্থী এই প্রতিবেদককে জানান, "অনয় ও শরিফুলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হঠাৎ এসে হামলা করে৷ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচিতে ছিলাম৷ এদের মধ্যে চতুর্থ ব্যাচের তাহমিদ আমাদের বেশ কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানি করে৷ আমরা এর বিচার চাই৷" শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মুগদা মেডিকেল কলেজে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের সবাই ছাত্রলীগের ওই কলেজ শাখার পদধারী নেতাকর্মী৷ এদের মধ্যে মাহমুদুল ইসলাম অনয় ওই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও শরিফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক৷ হামলাকারী বাকি সবাই ওই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে রয়েছে৷
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে কোটা আন্দোলনকারীদের মিছিলে ছাত্রলীগের দু’দফা হামলায় মেডিকেল কলেজের ৩ শিক্ষার্থীসহ ১৩ জন আহত হয়েছেন৷ ১৬ জুলাই সন্ধ্যায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাম্পাসের বহির্বিভাগের সামনে ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সংলগ্ন সড়কে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা পটুয়াখালী হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, সন্ধ্যায় পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাম্পাসের বহির্বিভাগের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করে মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালালে ৩ শিক্ষার্থী আহত হয়। এর আগে বিকেল ৫টার নাগাদ বিভিন্ন কলেজের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুরান বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে মিছিলটি প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। এতে অন্তত ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়।
কোটা সংস্কারের পক্ষে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ২ শিক্ষার্থী। ১৬ জুলাই সকাল ১১ টা নাগাদ নওগাঁ মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের সামনে মানববন্ধনে এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা জানায়, সকালে নওগাঁ মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের সামনে মানববন্ধন শুরু হলে মুখোশধারী বেশ কয়েকজন লোক মানববন্ধন বন্ধ করতে বলে। এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়, পরে মারধর শুরু করে তারা। এতে আহত হন ২ জন শিক্ষার্থী৷ তবে ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। হামলার বিষয়ে এখনও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
১৬ জুলাই দুপুরে রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের ভেতর মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রসজ্জিত হয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে মেডিকেল কলেজের প্রধান গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এতে করে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মানববন্ধনে আন্দোলনকারীরা বলেন, দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে কোটা সংস্কার করে হামলায় যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে৷ এদিকে, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত সুইডিশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় সুইডিশের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে কাপ্তাই নতুনবাজার এলাকায় বিক্ষোভ করেন। স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় সুইডিশের কোটা শিক্ষার্থীরা নতুন বাজারে অবস্থানকালে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষের চারজন আহতের খবর পাওয়া গেছে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের হোস্টেল ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঢুকে শিক্ষার্থী ও চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসীরা৷ সবাই ওই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে অভিযোগ৷ এতে ৭ জন শিক্ষার্থী ও চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগী আহত হন৷
এছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে দেশের প্রায় সবগুলো মেডিকেল কলেজে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে যারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে চিহ্নিত করা গেছে৷ এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচার না হওয়া অবধি ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছে অধিকাংশ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা৷
উল্লেখ্য, পহেলা জুলাই থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আন্দোলনে রয়েছে। ২ জুলাই থেকে ঢাকার শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি, বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। গত ৭ জুলাই আন্দোলনকারীরা এক দফা দাবি ঘোষণা করে। তাদের দাবি হল- ‘সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে সব ধরনের অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে শুধু পিছিয়ে পড়া বা অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম (সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ) রেখে সংসদে আইন পাশ করে কোটা সংস্কার করতে হবে।' ২০১৮ সালে তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে বিদ্যমান ৫৬ শতাংশ কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে। ২০২১ সালে ওই পরিপত্রের ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশ নিয়ে হাইকোর্টে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জুন হাইকোর্ট পরিপত্রটি বাতিল করে। রায়টি আপিল বিভাগেও বহাল রাখা হয়। পরে দুই শিক্ষার্থীর রিটে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা দেয়। তবে শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এরই মধ্যে কোটা আন্দোলনকারীদের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিতর্কিত মন্তব্যের জের ধরে আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ আরও জোরালো হয়৷ পরে ১৫ ও ১৬ জুলাই দিনভর সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে দেশজুড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সিরিজ হামলা করে৷ গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত সংবাদ, শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীরা সবাই বাংলাদেশের শাসকদল আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন 'ছাত্রলীগ' এর নেতাকর্মী৷
সামগ্রিক ঘটনায় তোলপাড় পুরো বাংলাদেশ৷ ছাত্রলীগের হামলা ও পুলিশি সহিংসতায় এখন অবধি ঢাকায় দুইজন, রংপুরে একজন, চট্টগ্রামে তিনজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই দৃশ্যপটের শেষ কবে, কবে শেষ হবে এই মৃত্যুর মিছিল আর মানুষের হাহাকার, আদৌ কি হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিচার হবে? তা-ই এখন দেখার বিষয়৷ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত নাগরিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মুখিয়ে প্রার্থনা করছে বাংলাদেশের গণমানুষ৷ সবারই মুখে মুখে ফিরছে, "দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও৷"


দেশজুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের সিরিজ হামলার প্রতিবাদে ১৫ জুলাই গভীর রাতে নোয়াখালীর আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী স্লোগান ও বিক্ষোভ৷