Skip to content

শ্রীরামপুরের মহেশ মন্দিরের ৬২৯ তম জগন্নাথ দেবের চন্দন যাত্রা উৎসব!

নিজস্ব সংবাদদাতা : শুভ অক্ষয় তৃতীয়ায় শ্রীরামপুর মহেশ জগন্নাথ মন্দিরে অনুষ্ঠিত হল জগন্নাথ দেবের ৬২৯ তম চন্দন যাত্রা উৎসব। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বুধবার সকাল থেকেই মহেশের জগন্নাথ মন্দির চত্ত্বরে উপচে পড়ে পূণ্যার্থীদের ভিড়। মহাপ্রভু জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার ৬২৯বছরের প্রাচীন এই উৎসবকে ঘিরে মন্দির চত্ত্বর ছিল মুখরিত। ভোর চারটে নাগাদ হয় মঙ্গল আরতি। তার পর শুরু হয় জগন্নাথ দেবের বিশেষ পূজা পাঠ। সকাল থেকেই দেখা যায় হাজার হাজার মহিলারা মন্দির চত্ত্বরে এসে গামলা গামলা চন্দন বাটছেন। বেলা দশটার পর শুরু হয় চন্দন যাত্রা উৎসব। হাজার হাজার বছর আগে এমনই এক বৈশাখ মাসে, রাজা ইন্দ্রঘনকে প্রভু জগন্নাথ দেব আদেশ করেন। বলেন, তাঁর শরীর খারাপ হয়েছে। মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। তাঁর মাথায় চন্দন প্রলেপ দেবার বন্দোবস্ত করতে বলেন। রাজা ইন্দ্রঘন মহাপ্রভুর আদেশ মত মাথায় চন্দন প্রলেপ করেন। সেই সময় কাল থেকে নিরীচ্ছিন্নভাবে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। এই দিন মাহেশের প্রভু জগন্নাথ দেবের মন্দিরে প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মাথায় চন্দন প্রলেপ দেওয়া হয়। যাতে তাঁদের শিরঃপীড়া দূর হয়। এই চন্দন উৎসব টানা ৪২ দিন চলবে। প্রভুর মাথায় এই চন্দন লেপন চালিয়ে গিয়ে ৪৩ দিনের মাথায় অনুষ্ঠিত হবে মাহেশের মন্দিরে প্রভু জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার স্নানযাত্রা উৎসব। সেই স্নানযাত্রা উৎসবকে ঘিরেও মা জগন্নাথ মন্দির সংলগ্ন স্নানপিঁড়ির ঘাটে হাজার হাজার ভক্ত প্রাণ মানুষের ভিড় উপচে পড়ে।

প্রায় ২৫৩ বছর আগের কথা , যখন ভাগীরথীর পশ্চিম উপকূল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছিল। সেই সময় ভক্তরা আশঙ্কা করেছিলেন যে মন্দিরটি গঙ্গার জলে হারিয়ে যেতে পারে। একই সময়ে, ১৮৫৫ সালে , কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার বাসিন্দা দানবীরের ভক্ত নয়নচাঁদ মল্লিক মহাসড়ক থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাস্তার পশ্চিম পাশে বর্তমান মন্দিরটি নির্মাণ করেন। সেই সময়ে মন্দিরটি নির্মিত হলে, সেই সময়ের ভক্তরা মন্দিরে মূর্তি আনতেন না। কারণ যেহেতু মন্দিরটি ওব্রাহ্মিন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এদিকে, নয়নচাঁদ মল্লিক নামে একজন ভক্তের নিজের নামে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠার তীব্র ইচ্ছা ছিল এবং তিনি মন্দিরের চারপাশে ভক্তদের বসবাসের ব্যবস্থা করতে এবং স্থায়ী স্থাপনার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন, তবে শর্ত একই - নিজের নামে মন্দির প্রতিষ্ঠা এবং সমাধান করা। কিন্তু মন্ত্রীরা এই লোভনীয় প্রস্তাবে রাজি হননি। অর্থাৎ, ভক্তরা তাদের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন যে, ওব্রাহ্মিন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত নামে মন্দিরের বেদিতে মূর্তি স্থাপন এবং নৈবেদ্য স্থাপন করা উচিত নয়। তাই মন্দিরে কোনও মূর্তি নেই। মন্দিরটি পরে খালি পড়ে ছিল। ইতিমধ্যে, নয়নচাঁদ মল্লিক মৃত্যুশয্যায় শায়িত। প্রতিদিন জগন্নাথ তার স্বপ্নে আসেন এবং ভারী হৃদয়ে তিনি প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। নয়নচাঁদ মল্লিক মৃত্যুশয্যায় শুয়ে তার পুত্র নিমাই চরণ মল্লিককে বলেন, "শোন পুত্র, আমার সমস্ত ইচ্ছা পূরণ হয়েছে কিন্তু একটি ইচ্ছা অপূর্ণ রয়ে গেছে।" আমি একটি মন্দির তৈরি করেছিলাম কিন্তু মন্দিরে কোনও মূর্তি স্থাপন করা হয়নি। সেই রাতে নিমাই চরণ মল্লিক তার পিতার শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য তার পিতার একটি নৌকা নিয়ে মহেশের কাছে আসেন। তিনি মন্ত্রীদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাদের কথা শুনে সবকিছু বুঝতে পারেন। তিনি তৎক্ষণাৎ মন্ত্রীদের সমস্ত প্রস্তাব গ্রহণ করেন। শেষ পর্যন্ত বিতর্কের পালা, শান্তির আশ্রয়। তিনি তার পিতার কাছে গিয়ে তাকে বলেন যে তার শেষ ইচ্ছা পূরণ হতে চলেছে। ভক্তরা তখন মন্দিরে মূর্তি নিয়ে এসে মূর্তি স্থাপন করেন। সেই থেকে, মহেশের শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দিরে এই প্রতিমার সেবা পূজা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কয়েকদিন পরে, নয়নচাঁদ মল্লিক মহাশয় সম্পূর্ণ নিশ্চিতভাবে স্বর্গের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

Latest