Skip to content

অযোধ্যায় যখন রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা চলছে তখন মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষেরা রামায়ণ, মহাভারত, চন্ডীমঙ্গল পটচিত্র আঁকেন!

1 min read

পশ্চিম মেদিনীপুর নিজস্ব সংবাদদাতা : দেশের প্রতিটি রাজ্যেরই চলছে নানা অনুষ্ঠান। কোথাও পুজোপাঠ তো কোথাও মাইক বাজিয়ে রামের মূর্তি রেখে চলছে রাম স্মরণ। তবু কেন আলাদা করে উঠে এলো নয়া গ্রামের কথা।যে গ্রামে বাস পটশিল্পীদের। আর এই পটশিল্পীরা কিন্তু প্রায় সকলেই মুসলিম সম্প্রদায়ের। কিন্তু মুসলিম হলেও তাঁরা পূর্ব পুরুষ ধরে রামায়ণ, মহাভারতের কাহিনী নিয়েই বেশি গান রচনা করেছে। সোমবার এমনই দৃশ্য দেখা গেল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা ব্লকের নয়া গ্রামে। আর সেই গান অনুযায়ী বানিয়েছেন পটচিত্র। তারপর সেই পটচিত্র নিয়ে পৌঁছে যেতেন গ্রামে গ্রামে। গ্রামবাসীরা জড়ো হলে তারপর পটচিত্র দেখিয়ে শুরু হত গান। নয়া গ্রামে ১৩৬টি পরিবার। তার মধ্যে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই পটচিত্র আঁকেন। এই গ্রামে গত কয়েকদিন ধরে লোকজন আসছেন। রামায়ণ, মহাভারত, চন্ডীমঙ্গল, মনসামঙ্গল, কালীদাস সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর আঁকা পটের সঙ্গে সুর দিয়ে গান গাইছেন। এবার তাঁরাও অযোধ্যায় রামের প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিন রামের পট নিয়ে গান গাইলেন। কখনও টিভিতে আবার কখনও মোবাইলে দেখলেন অযোধ্যায় রাম লালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা। তার সঙ্গে নিজেরাও সুর করে গাইলেন গান। প্রবীণ শিল্পী মনিমালা চিত্রকর বলেন, "আমরা খুশি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের অনুষ্ঠানকে ঘিরে। আমাদের গ্রামের সাথে অযোধ্যার সংযোগ রয়েছে পটচিত্রের মধ্য দিয়ে। আমাদের তৈরি পটচিত্র রামায়ণ নিয়ে ওখানে পৌঁছেছে কিনা তা জানা নেই। তবে এমন একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে যদি পট গান গাইতে পারতাম তাহলে খুবই ভালো লাগতো।" যুবক রূপসোনা চিত্রকর বলেন, ছোট থেকেই বাবার কাছে শেখা এই পট চিত্র আঁকা। রামায়ণ, মহাভারতের মতো পৌরাণিক কাহিনী তুলে ধরি। রামের গানও আমরা করি। মধুসূদন চিত্রকর বলেন, ধর্মের নামে কোনও বিভেদ নয়। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। রাম, সীতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী তুলে ধরে ছবি আঁকি পটচিত্রে।কারোও কারোও মতে, এই সমস্ত চিত্রকরেরা বিশ্বকর্মার বংশধর হিসেবে পরিচিত।প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও এই সমস্ত পটশিল্পীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে পটগান গাইতেন। তাদের গান শুনে কেউ টাকা দিতেন, কেউ বা চাল-ডাল দিতেন। এইভাবেই তাদের কোনও রকমে সংসার চলত। কোনও এক সময় এই সমস্ত পটচিত্রকরেরা তাদের শিল্পকলাকে বিক্রি করতে ঝোলা নিয়ে বেরিয়ে পড়ত বিভিন্ন গ্রামে। সেখানে স্থানীয় বাড়িতে ঢুকে বেহুলা-লক্ষীন্দর, চণ্ডীমঙ্গল ,মনসামঙ্গল, শিব-দুর্গার বা সাবিত্রী-সত্যবানের মতো বিভিন্ন পুরাণকাহিনি নিয়ে নিজেদের আঁকা পট দেখাতেন। বর্তমানে শুধু বাড়ির বড়রা নয় খুদে শিল্পীরাও তাদের চমৎকারিত্ব প্রদান করছে।সংস্কৃত 'পট শব্দের অর্থ হল কাপড়, আর 'চিত্র' মানে ছবি অর্থাৎ পটচিত্র বলতে কাপড়ের উপর অঙ্কিত চিত্রকে বোঝানো হয়। এই চিত্র অঙ্কন করার জন্য সম্পূর্ণ ভাবে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি সমস্ত রং ব্যবহার করা হয়,যেমন- গাছের সিম দিয়ে সবুজ রং, ভুসোকালি দিয়ে কালো রং, অপরাজিতা ফুল দিয়ে নীল রং, সেগুন গাছের পাতা দিয়ে মেরুন রং, পান-সুপারি চুন দিয়ে লাল রং, পুঁই ফল দিয়ে গোলাপি রং, কাঁচা হলুদ দিয়ে হলুদ রং, পুকুর খনন করে মাটি বের করে তা দিয়ে সাদা রং ইত্যাদি। সাধারণত এই সমস্ত প্রাকৃতিক রং দিয়ে, ছাতা, হাতপাখা, হ্যান্ডব্যাগ, মোড়া, লন্ঠন, কেটলি ইত্যাদি আঁকা হলেও; শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টি-শার্ট-এ তারা ফেব্রিক রং করে থাকেন।এই গ্রামের বেশিরভাগ পটুয়ারাই কিন্তু মুসলিম ধর্মাবলম্বী। তা হলেও তারা রামায়ণ, মহাভারত, শিব-দুর্গার কাহিনী,বিভিন্ন মঙ্গলকাব্যের বিভিন্ন পটচিত্র এঁকে থাকেন। আড়াই ফুট চওড়া ৪১ ফুট লম্বা একটি পটচিত্র তৈরি করেছি রামায়ণের কাহিনী দিয়ে।

Latest