Skip to content

জয়দেব বেরা : আজ ১ ডিসেম্বর, বিশ্ব এইডস দিবস। ভয়াবহ এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বজুড়ে নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে প্রতি বছরই পালিত হয় এই দিনটি।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO) দ্বারা ঘোষিত বিশ্ব জনস্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কিত একটি অন্যতম দিবস।এই এইডস দিবস সম্পর্কে জানার পূর্বে আমাদেরকে জানতে হবে এইডস আসলে কী?এইডস (AIDS) কথাটির অর্থ হল- Acquired Immunodeficiency Syndrome।এই রোগটির জন্য যে ভাইরাসটি দায়ী সেটি হল- Human Immunodeficiency Virus (HIV) নামে এক ক্ষুদ্র ভয়ানক ভাইরাস।এই ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে তার রোগপ্রতিরোধ ব্যাবস্থাকে দুর্বল করে তোলে।মানবদেহের অভ্যন্তরে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের প্রতিরোধে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে যা HIV দ্বারা বিনষ্ট হয়ে যায়।এর ফলে বিভিন্ন ধরণের রোগ মানবদেহকে আক্রমণ করে।এই সব রোগের প্রাদুর্ভাবকে তখন বলা হয় -"সুযোগ সন্ধানী সংক্রমণ"।এই ভাইরাসটি এতই জটিল ও বিপদজনক যে, কোনও রকম লক্ষণ ছাড়াই মানবদেহে বছরের পর বছর বসবাস করে।যার ফলস্বরূপ সংক্রামিত ব্যক্তি তার অজান্তেই অন্যদেরকে সংক্রামিত করে ফেলতে পারে।আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে, HIV হল একটি ভাইরাস এবং AIDS হল একটি যৌন ব্যাধি।সুতরাং বিভিন্ন কারণে আগে HIV সংক্রমণ হলে তারপর AIDS রোগের সূত্রপাত হয়ে থাকে।এই HIV সংক্রমণ থেকে AIDS রোগে আসার গড় সময়কাল হল প্রায় সাত থেকে নয় বছর পর্যন্ত।এই HIV সংক্রমিত হয় মূলত Blood,seman,vaginal fluids, breast milk, unprotected sex, sharing syringes প্রভৃতির মধ্যে দিয়ে।এই রোগ মূলত যাদের বেশি হয়ে থাকে তারা হলেন- Sex Workers,MSM(men who have sex with men), Drug users, Transgenders, Migrant workers,Truck drivers সহ অন্যান্যদের।HIV নিয়ে যে সংস্থাটি বহুদিন ধরে কাজ করছে সেটি হল- NACO(The National AIDS Control Organization)।ভারতে HIV কে নিয়ে বৈষম্য রোধ করতে সরকারি ভাবে HIV /AIDS এর বিল পাস হয়েছিল ২০১৭ সালে।

HIV/AIDS এর লক্ষণগুলি হল-অবিরাম ওজন কমে যাওয়া,মাথা ব্যাথ্যা,জ্বর, ক্লান্তি,দীর্ঘদিন ধরে ডায়রিয়া,দ্রুত নিশ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া,মুখে বা ত্বকে লালচে,বাদামি বা বেগুনি দাগ এবং ত্বকে চুলকানিত্ব ও ফুসকুড়ি,অনেকদিন ধরে চলা গভীর ভাবে বসে যাওয়া সর্দি ও কাশি,নিয়মিত ব্যবধানে বারবার স্ত্রীর যোনিতে সংক্রমণ,গলাধঃকরণে অসুবিধা প্রভৃতি।

এই ভাইরাস বা রোগের আক্রমণের নানান কারণ রয়েছে।যেমন-HIV আক্রান্ত কোনও ব্যক্তি যদি একজন সুস্থ ব্যক্তির সাথে অসুরক্ষিত ভাবে (কন্ডোম ছাড়াই) যৌন সহবাস করলে এই রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে,বিভিন্ন ধরণের অন্যান্য যৌন রোগ (গনোরিয়া,সিফিলিস ইত্যাদি) থাকলেও HIV সংক্রমণের হার পাঁচ থেকে দশ গুণ বেড়ে যায়,অপরিশ্রুত ও দূষিত এবং ব্যবহৃত সিরিঞ্চ বা সুঁচ থেকে সংক্রমিত হয়,HIV আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত উপাদান সঞ্চালনের মাধ্যমে,একজন সংক্রমিত মা এর থেকেও তার সন্তানের HIV হতে পারে।এমনকি স্তন্যপানের দ্বারাও HIV সংক্রমিত হয়।যদিও এই বিষয়টি নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। এই রোগকে বা ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করতে হলে যে বিষয়গুলোকে মাথায় রাখতে হবে সেগুলি হল-যৌন সহবাস করতে গেলে কন্ডোম ব্যাবহার করতে হবে,যৌন ব্যাধিগুলির ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করতে হবে।গোপনীয়তা রক্ষা করে HIV সংক্রমণ পরীক্ষা এবং HIV কাউন্সেলিং এর পরিষেবার ব্যবস্থা করতে হবে,শিক্ষামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে শিরা সমূহের মাধ্যমে ড্রাগস নেওয়ার কুফলকে প্রচার করা,দূষিত সুঁচ বা সিরিঞ্চ পুনরায় ব্যাবহার না করা,HIV সম্পর্কিত বিভিন্ন সচেতনমূলক ক্যাম্প এবং সেমিনার পরিচালনা করা,রক্ত সংগ্রহ করতে হবে সরকারি নিবন্ধিত এমন ব্ল্যাড ব্যাংক থেকে এবং দেখে নিতে হবে রক্তের বোতলে HIV মুক্ত কথাটি লেখা আছে কিনা,চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ART(Anti Retroviral Therapy) থেরাপি নেওয়া, এই HIV সম্পর্কে গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে গণসচেতনমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করা,কাউন্সেলিং এর উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া এবং এই সম্পর্কিত সহায়তা নেওয়ার জন্য নিকটবর্তী জেলা হাসপাতাল তথা ICTC সেন্টারে যাওয়া প্রভৃতি।

এবার আলোচনা করা যাক এই এইডস দিবস কেন পালন করা হয় বা এই দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে। এইডস দিবস (১ ডিসেম্বর) পালিত হয় এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে, এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বব্যাপী সংহতি জানাতে এবং যারা এইডস সম্পর্কিত অসুস্থতায় মারা গেছেন তাদের স্মরণ এবং শ্রদ্ধা করার জন্য। এই দিবসটি এইচআইভি সংক্রমণের বিস্তার রোধে প্রতিরোধ, পরীক্ষা এবং চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরে।এই দিবসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে জানা যায়,বিশ্ব এইডস দিবসের প্রথম ধারণাটি ১৯৮৭ সালের আগস্টে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এইডস বিষয়ক গ্লোবাল প্রোগ্রামের দুই জন তথ্য কর্মকর্তা জেমস ডব্লিউ. বান এবং থমাস নেটার দ্বারা গৃহীত হয়েছিল।বান এবং নেটার তাদের ধারণাটি এইডস বিষয়ক গ্লোবাল প্রোগ্রামের (বর্তমানে UNAIDS নামে পরিচিত) পরিচালক ডঃ জোনাথন মানের কাছে নিয়ে যান।মান এই ধারণাটি পছন্দ করেন এবং এটি অনুমোদন করেছিলেন।তিনি বিশ্ব এইডস দিবসের প্রথম উদযাপন ১৯৮৮ সালের ১ ডিসেম্বর হওয়ার সুপারিশের সাথে একমত হয়েছিলেন।এর পর থেকে প্রতিবছর ১ ডিসেম্বর এই এইডস দিবস পালিত হয়ে আসছে।

কেবল স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নয় প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে,বিভিন্ন সংস্থায়, অফিসে এই জনস্বাস্থ্য সচেতনতা দিবসটি পালন করা উচিৎ।কেবল পালন করলেই হবে না,আমাদেরকে মন থেকেই উনাদের প্রতি সম্মান জানাতে হবে।কোনও ভাবেই এইডস রোগীকে সামাজিক,মানসিক এবং শারীরিকভাবে বৈষম্য করা যাবে না।কোনও নেতিবাচক ইঙ্গিত করা যাবে না।বিশেষ করে সামাজিক ও মানসিকভাবে উনাদের পাশে থাকতে হবে।চিকিৎসা তথা স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত সমস্ত ব্যক্তিকে এটা মাথায় রাখতে হবে যে,এইডস রোগীকে কোনও ভাবেই বৈষম্য করা যাবে না।সমস্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা উনাদেরকে কোনওভাবেই বৈষম্য ছাড়াই প্রদান করতে হবে।সমাজের সমস্ত মানুষকে এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে যে এই রোগটি কোনও ছোঁয়াচে রোগ নয়,তাই অযথা আতঙ্কিত না হয়ে সর্বদা সচেতন থাকুন এবং অপরকে সচেতন করুন।গণসচেতনতাই হল HIV প্রতিরোধের অন্যতম হাতিয়ার।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং UNAIDS-এর মতে, ২০২৫ সালের বিশ্ব এইডস দিবসের থিম হল "Overcoming disruption, transforming the AIDS response." সবশেষে বলবো,এইডস রোগীর প্রতি বৈষম্য না করে উনাদের সামাজিক ও মানসিকভাবে সমর্থন করুন এবং সর্বদাই সচেতন থাকুন।

Latest