Skip to content

বাংলাদেশে পরিস্থিতি নিয়ে কী বলছেন ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন?

নিজস্ব প্রতিবেদন : বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত পোস্ট করছেন ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন। বুধবার সকালে ফেসবুকে তিনি একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথের ভাঙা মূর্তির মাথা পড়ে রয়েছে মাটিতে। তিনি লেখেন, ‘মবোক্রেসি থেকে ডেমোক্রেসি কি আদৌ আসবে? সেটা ডেমোক্রেসি নয় কিন্তু, যদি মবোক্রেসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনও একটা রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন থেকে গায়ের জোরে বাদ দিতে হয়। যে মবকে পুলিশ বা আর্মি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, সেই মবকে নিয়ন্ত্রণ কে করবে? যে ”জাগ্রত ছাত্র জনতা” রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে মানুষকে মুগ্ধ করেছিল, সেই জাগ্রত ছাত্র জনতা রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্য ভেঙে গুঁড়ো করেছে। তাহলে ওই গান ছিল লোক দেখানো? ছিল ‘ভুয়া’?

তসলিমা নাসরিনের facebook পোস্ট

নিজের X (পূর্বে টুইটার) হ্যান্ডেলের পাতায় তসলিমা হাসিনাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া পুরনো ইতিহাস। বোঝাতে চেয়েছেন history repeats itself-কথাটি। বলা ভালো, 'আসলে ইতিহাস ফিসফিস কথা কথা হয়'। তসলিমা লিখেছেন, আমার মা যখন মৃত্যুশয্যায়, তখন তাঁকে দেখতে বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর ইসলামপন্থীদের খুশি করার জন্য হাসিনা আমাকে আমার দেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন। আমাকে আর কখনও দেশে প্রবেশ করতে দেননি। ছাত্র আন্দোলনে সেই ইসলামপন্থীরাই আজ হাসিনাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে।'

তসলিমা নাসরিনের X- হ্যান্ডেলের পোস্ট

তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, এ বিপির একটা স্টোরি দেখলাম লিখেছে মায়ের মৃত্যুর পরে দেশে যেতে চেয়েছিলাম, হাসিনা ঢুকতে দেননি। সঠিক তথ্যগুলো দিচ্ছি, যদিও আমার আত্মজীবনীতে উল্লেখ আছে এসবের। ১৯৯৪ – খালেদা জিয়ার সরকার আমার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার মামলা করে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। দু মাস আমি হাইডিং এ থাকি, তারপর আমাকে জামিন দিয়ে দেশ থেকে বের করে। খালেদা জিয়া তাঁর রাজত্বকালে আমার চারটা বই নিষিদ্ধ করে। বইগুলো লজ্জা, উতল হাওয়া, ক, সেই সব অন্ধকার। এবং আমাকে আর দেশে ঢুকতে দেয় না। ১৯৯৬ —শেখ হাসিনা নির্বাচনে জেতার পর আমি বেশ খুশি, এইবার দেশে ফিরতে পারবো, কিন্তু তিনি আমাকে দেশে ফিরতে দিলেন না। ১৯৯৯ —আমার ক্যান্সার আক্রান্ত মাকে ডাক্তার জবাব দিয়ে দিয়েছেন, মাত্র ৩ মাস বাঁচবেন। তখন আমি কাউকে না জানিয়ে দেশে ঢুকে পড়ি। চার মাস পর খালেদা যে কায়দায় আমাকে দেশ থেকে বের করেছিলেন, একই কায়দায় হাসিনাও বের করেন। হাসিনা তাঁর রাজত্বকালে আমার ''আমার মেয়েবেলা'' বইটি নিষিদ্ধ করেন। এবং আমাকে আর দেশে ফিরতে দেননি। আমার বাংলাদেশের পাসপোর্ট রিনিউ করেননি। ২০০১—আমার বাবা গুরুতর অসুস্থ। আমি দেশে ফিরতে চাই বাবার সঙ্গে অন্তত কিছুদিন থাকার জন্য। কিন্তু হাসিনা আমাকে দেশে ফিরতে দেননি। আমার বাবা মারা যান। ২০০৯ --২০২৩ আমার পাওয়ার অব এটর্নি হাসিনার আদেশে কোনও দূতাবাসই সত্যায়িত করেনি। ফলে আমি আমার বাবার সম্পত্তির কানাকড়ি পাইনি, আমার নিজের ফ্ল্যাটও আমি বিক্রি করতে পারিনি। দুই নারী নেত্রীর কারণে আমি আজ ৩০ বছর দুঃসহ নির্বাসন জীবন যাপন করছি। দুই নারী নেত্রী দেশের মানুষকে ধর্মান্ধ এবং জিহাদি বানানোর জন্য সব পদক্ষেপ করেছেন। এখন, জামায়াত শিবিরের মবোক্রেসিতে আর বাড়ি ফেরার প্রশ্ন ওঠে না।

তসলিমা নাসরিনের facebook পোস্ট
তসলিমা নাসরিনের facebook পোস্ট

এদিকে আন্দোলনকারী ছাত্রদের দাবি মেনে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হচ্ছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মহম্মদ ইউনুস। তবুও এখনও অশান্ত বাংলাদেশ। সংখ্যালঘু হিন্দু থেকে আওয়ামি লিগের নেতা-কর্মীদের উপরে হামলার ঘটনার কথা জানা যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশে যেন শেষপর্যন্ত ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার আসে সেই প্রার্থনাই করেছেন তসলিমা। 

Latest