ঢাকা, জাকির হোসেন: গত বছরের আগস্টে হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে আনাগোনা বেড়েছে চিনা আধিকারিকদের। এই মুহূর্তে নানা ইস্যুতে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে চড়াই-উতরাই চলছে, তারই সুযোগ নিয়ে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে বেইজিং। বিএনপি, জামাতের মতো দলের সাথে বৈঠক সেরেছেন চিনের আধিকারিকরা। এই আবহে কমিউনিস্ট দেশটিতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক করতে পারেন সেদেশের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি চিনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের ফাঁদে দেবেন ইউনুস? গোটা ঘটনা প্রবাহের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে ভারত।
ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রে খবর, আগামী ২৫ থেকে ২৮ মার্চ চিনের হাইনান প্রদেশে ‘বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া’র (বিএফএ) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সামিটে যোগ দিতেই ২৬ মার্চ হাইনানে পা রাখবেন ইউনূস। তারপর সেখান থেকে বেইজিংয়ে। ২৮ মার্চ চিনের প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠকে বসার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে চিনে গিয়েছিলেন বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তাঁর সেই সফরের পর জানা গিয়েছিল, খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশিদের জন্য হাসপাতাল বানাবে চিন। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ইউনূসের জমানায় দিল্লি-ঢাকা সম্পর্ক অনেকটাই বদলে গিয়েছে। লাগামছাড়া হিন্দু নির্যাতন, মুজিবকন্যার প্রত্যর্পণ, অনুপ্রবেশ -এরকম একাধিক বিষয়ে দু'দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। এই সুযোগকেই পাখির চোখ করেছে বেইজিং। বলে রাখা ভালো, মুজিবকন্যাকে গদিছাড়া করার পিছনে অনেক বিশেষজ্ঞই ‘ড্রাগনে’র কলকাঠি নাড়ার বিষয়ে নানা রিপোর্টে তুলে ধরেছেন। এই মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচনের তোরজোড় চলছে বাংলাদেশে। ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি, জামাত, জাতীয় পার্টির মতো একাধিক রাজনৈতিক দল। এই পরিস্থিতিতে ইউনূসের চিনে যাওয়া যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই। এছাড়া ইউনূস-জিনপিং সাক্ষাতে উঠতে পারে বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের প্রসঙ্গ। অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, এই প্রজেক্ট আসলে পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে ঋণের ফাঁদ। যেখানে বিভিন্ন দেশকে জড়াতে চায় বেইজিং। এই মুহূর্তে ভারত উপমহাদেশে কৌশলগত অবস্থান মজবুত করছে জিনপিংয়ের দেশ। বাংলাদেশেও এই প্রকল্পের জাল ছড়াতে মরিয়া তারা। চিনের এই ফাঁদে পা দিয়ে ঋণের বোঝায় জর্জরিত শ্রীলঙ্কা। বেল্ট অ্যান্ড রোডে নাম লিখিয়েছে পাকিস্তানও। আর এই বিতর্কিত প্রকল্পের একটি অংশ গিয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর দিয়ে। যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভারত। পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে এই প্রকল্প যে আদতে একটা জাল তা নিয়ে বরাবরই দিল্লি সরব হয়েছে। হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন চিনের এই প্রকল্প এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু ইউনূস এই ফাঁদে পা দেন কিনা -এবার সেদিকেই নজর ওয়াকিবহাল মহলের।
চিন যাচ্ছেন ইউনূস, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের ফাঁদে পা দিচ্ছে বাংলাদেশ?
