Skip to content

মোদীর আমন্ত্রণে গ্লোবাল সাউথ সম্মেলনে অংশ নিলেন ইউনূস!

ঢাকা, জাকির হোসেন: টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ ও নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে গ্লোবাল সাউথের কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে তরুণ ও ছাত্রদের রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, "তরুণ ও ছাত্ররা গ্লোবাল সাউথের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ। আমাদের জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ তরুণ এবং তারা সমাজের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ। তারা প্রযুক্তিগতভাবে আগের প্রজন্মের থেকে অনেক এগিয়ে এবং নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে।" ১৭ আগস্ট শনিবার নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘থার্ড ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট-২০২৪’ এর ইনোগরাল লিডার্স অধিবেশনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস একথা বলেন৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে তিনি ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি এই সম্মেলনে যুক্ত হন।

আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশ গ্লোবাল সাউথের অন্তর্ভুক্ত। মূলত এসব দেশে মাথাপিছু আয় উন্নত দেশের তুলনায় কম।

ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের বীর ছাত্রদের নেতৃত্বে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে একটি ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ সংগঠিত হয়েছে। তাতে গণমানুষ যোগ দিলে এটি গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। আমাদের তরুণ প্রজন্ম একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য জনগণকে প্রভাবিত করেছে। তরুণরা একটি অর্থবহ সংস্কারের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান পুনরুদ্ধার করেছে। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়। আমাদের কাজ এখন আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যম, অর্থনীতি ও শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আনা।” তিনি বলেন, “১৯৫২ সালে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা তাদের মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন যা সারা বিশ্বে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করেছে। প্রায় সাত দশক পর আমাদের তরুণ শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মর্যাদা, সমতা ও সমৃদ্ধির আওয়াজ তুলে বিশ্বব্যাপী তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছে। এই বিপ্লবে অংশ নিতে পেরে আমি সবচেয়ে বয়স্ক ‘তরুণ ব্যক্তি’ হিসেবে সম্মানিত।” বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং এরকম একটি পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রতিবদ্ধ যার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে, যুক্ত করেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এটাই ড. ইউনূসের প্রথম বহুপক্ষীয় কোনো অনুষ্ঠানে যোগদান। ড. ইউনূস ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, ফিজি, ওমান, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা ভার্চুয়ালি সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলনে তিনি নরেন্দ্র মোদী সহ সবাইকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান। সম্মেলনে যোগ দেওয়া রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের তিনি বলেন, "নইলে আপনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু মিস করতে পারেন।"

‘গণঅভ্যুত্থানের’ পরে বাংলাদেশে নানা পরিবর্তন ঘটছে, ঢাকার বেশিরভাগ এলাকার দেয়ালগুলো তরুণ শিক্ষার্থী ও শিশু যাদের অনেকের বয়স ১২-১৩ বছর গ্রাফিতির নগরে পরিণত করেছে উল্লেখ করে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস গ্লোবাল সাউথের নেতৃবৃন্দকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, "তরুণ ছাত্র ও ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুরা ৪০০ বছরের পুরনো শহরের দেয়ালে একটি নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ছবি আঁকছে। এর জন্য কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা নির্দেশনা তাদের নেই। কারোর পক্ষ থেকে বাজেট সমর্থনও নেই। এটি দ্বিতীয় বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষার প্রতি তাদের আবেগ এবং অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।" তিনি বলেন, "বাংলাদেশের তরুণদের দেয়ালের লেখা পড়ে যে কেউ বুঝবেন তারা কী স্বপ্ন দেখছে। তরুণদের স্বপ্ন পূরণ করাই আমাদের প্রধান কাজ।" ড. ইউনূস বলেন, "বিশ্বব্যাপী তরুণরা আলাদা, তারা সক্ষম এবং প্রযুক্তিগতভাবে আগের প্রজন্মের তুলনায় অনেক এগিয়ে। তারা সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। তারা উদ্যোক্তা। কিন্তু তারা চাকরি চায়, কারণ দেশে দেশে এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে যা তাদের চাকরির জন্য প্রস্তুত করে। অথচ সব মানুষের মধ্যে সৃজনশীলতা রয়েছে। কেবলমাত্র চাকরিপ্রার্থী তৈরি করে এমন শিক্ষা ও আর্থিক ব্যবস্থা নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর দরকার। আমরা আশা করি গ্লোবাল সাউথ সামাজিক ব্যবসার সঙ্গে উদ্যোক্তাকে একত্র করে অলৌকিক কিছু তৈরি করতে পারে। আমরা সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে আমাদের তরুণ জনসংখ্যার সৃজনশীলতা ও শক্তি উন্মোচন করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে বিশ্বব্যাপী কিছু প্রস্তাব করতে চাই।" নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, "আমার জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা হলো যে আমাদের আর্থিক ব্যবস্থা সম্পদ কেন্দ্রীকরণ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এখন সবাই যাতে সম্পদের ভাগিদার হতে পারে সেভাবেই আমাদের আর্থিক ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজাতে হবে। সব মানুষের, বিশেষ করে নারী ও যুবকদের জন্য আর্থিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারি কীভাবে এটি সফল করা যায়। অনেক দেশ এ ব্যাপারে নেতৃত্ব দিয়েছে। আমাদের আরও কিছু করতে হবে। আর্থিক ব্যবস্থা কখনোই কারও জন্য বাধা হওয়া উচিত নয়। এই ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যা উদ্যোক্তা তৈরি করে ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করে। এক্ষেত্রে দারিদ্র্য ও বেকারত্বের মতো সমস্যা সমাধানে সামাজিক ব্যবসায় ব্যাংক গঠনে উৎসাহিত করা যেতে পারে।"

রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান পর্যায়ে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানদের নিয়ে উদ্বোধনী অধিবেশনের প্রতিপাদ্য এবং মূল সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হলো, ‘অ্যান এমপাওয়ারড গ্লোবাল সাউথ ফর আ সাসটেইনেবল ফিউচার’। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস অউর সবকা প্রয়াস’ দর্শনের সম্প্রসারণ হিসেবে অনন্য এ উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। আর এটি মূলত ভারতের বসুদেব কুটুম্বকমের দর্শন। এটি গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রাধিকারগুলো একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্মে সম্পূর্ণ পরিসরে ভাগ করার জন্য একত্র করার পরিকল্পনার অংশ। ভারত ২০২৩ সালের ১২ ও ১৩ জানুয়ারি প্রথম ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট (ভিওজিএসএস) এবং একই বছরের ১৭ নভেম্বর দ্বিতীয় ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিটের আয়োজন করেছিল। দুটি সামিটই ভার্চ্যুয়াল ফরম্যাটে আয়োজন করা হয়। শীর্ষ সম্মেলনের পূর্ববর্তী উভয় আয়োজনে গ্লোবাল সাউথ থেকে ১০০টিরও বেশি দেশ অংশ নিয়েছিল।

Latest