Skip to content

আসন্ন বর্ষায় বন্যা মোকাবিলা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে জেলা শাসকের বিশেষ বৈঠক ঘাটালে!

পশ্চিম মেদিনীপুর নিজস্ব সংবাদদাতা : বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে ঘাটাল টাউন হলে একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হল। এই বিশেষ বৈঠক উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাসক খুরশিদ আলি কাদরী, ঘাটালের এসডিও সুমন বিশ্বাস, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্য শংকর সারেঙ্গী, মহকুমার পাঁচটি ব্লকের বি ডি ও,জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ আশীষ হুদাইত, ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি বিকাশ কর, ঘাটাল দাসপুর চন্দ্রকোনার ওসি সহ বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকরা। বৈঠকের শুরুতেই জেলা শাসক সব দপ্তরকে আগাম প্রস্তুতি হিসাবে সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন।উপস্থিত জন প্রতিনিধিগণ নিজেদের অভিজ্ঞতা এবং কী কী করণীয় সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এর পর দপ্তর ধরে ধরে আলোচনা করা হয়।
ইরিগেশন দপ্তরের
জেলার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার পাওয়ার পয়েন্ট প্রেসেন্টেশনের মাধ্যমে প্রস্তুতি বুঝিয়ে দেন। এক লক্ষ ১২ হাজার মাটি ও বালির বস্তা মজুদ আছে। জেলা শাসক বলেন যে দেড় লক্ষ বস্তা প্রয়োজন। সেই অনুযায়ী বস্তার পরিমাণ বাড়ানো হবে। বাঁধ পরীক্ষা করে ঘোগ এবং হানা চিহ্নিত করতে হবে। বিডিও, এসডিও, ওসি সবাই বাঁধ পরীক্ষা করে তথ্য জানাবেন ইরিগেশন দপ্তরে। সাব ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার উজ্জল মাখাল এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। কংশাবতী কেলাঘাই ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়ারও প্রস্তুতি বিষয়ে বিস্তারিত বলেন। পিএইচই দপ্তর তাদের প্রস্তুতির কথা বলেন। পানীয় জলের মেশিন MTU ( মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট ইউনিট ) বন্যাকালীন পরিস্থিতিতে ঘাটালে বসানো হবে। ওয়াটার ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হবে। ওয়াটার পাউচ ব্যবস্থা থাকবে পর্যাপ্ত। পি এইচ ই দপ্তর বন্যা পরবর্তী সময়ে পানীয় জলের উৎসগুলিকে বীজানুমুক্ত করবে। পঞ্চায়েত ও পি এইচ ই দপ্তর এই বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করবে। এই কাজে সমন্বয় সাধন করবেন ঘাটালের মহকুমা শাসক। কে কোন টিউবওয়েল এর বীজানুমুক্ত করবে তার তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে বীজতলাগুলিকে উঁচু স্থানে করতে বলা হয়েছে। আগামী রবি শস্যের বীজ সরকার থেকে বন্টন করার উপর জোর দেওয়া হবে। বন্যা এলাকায় যেখানে বর্ষা কালীন ধান হয়না সেই এলাকাতে রবি শস্যের উপর জোর দিতে হবে। স্বাস্থ্য দপ্তর পক্ষ থেকে সিএমওএইচ বলেন প্রস্তুত আছে। বিগত বন্যাতে আশা কর্মীরা ও চিকিত্‌সকরা বন্যার জলে নেমে ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্য পরিসেবা দিয়েছিলো সেটা রাজ্যেত মধ্যে উদাহরণ হয়ে আছে।
এবারও সেরকম প্লানিং করা হবে। গর্ভবতী মহিলাদের তালিকা করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতিতে তাদের থাকার স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। মাদার হাব- চিলড্রেন হাবের তালিকা সবার সাথে শেয়ার করার কথা বলেন জেলা শাসক। বন্যা পরিস্থিতিতে যে নৌকা এই সব কাজে ব্যবহার হবে তার তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।
সামনেই ডেঙ্গুর সিজন। বন্যা হলে জল নেমে যাওয়ার সময় এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়। সেই জন্য বাড়তি ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই অনুযায়ী ভিলেজ রিসোর্স পার্সনদের প্রশিক্ষণ ও বাড়তি নজরদারী করা হবে। গত বছরের ডেঙ্গু এলাকার ম্যাপিং করা হয়েছে। সেখানে বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সাপের কামড় থেকে প্রাণ বাঁচাতে AVS বেশি করে মজুদ রাখতে হবে। কোথায় কোথায় AVS কত স্টক আছে তা ডিসপ্লে করতে হবে। মহকুমা শাসকের ওয়েবসাইটে তা ডিসপ্লে হবে এবং জনপ্রতিনিধিদের তা জানাতে হবে।
বন্যায় অসুস্থ রোগীদের ইভ্যাকুয়েশন প্লান রেডি রাখতে বলা হয়েছে।
NDRF পর্যাপ্ত থাকবে এবং রোগীদের ও আপদ কালীন পরিস্থিতিতে তা ব্যবহার করতে হবে। সব অফিসে ও দপ্তরে ২৪ ঘন্টার জন্য কন্ট্রোল রুম খুলতে হবে। যেন বন্যার কারণে একটিও প্রাণ না যায় সেই দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।পিডাব্লুডি দপ্তর জানিয়েছে বন্যার জন্য তারা প্রস্তুত আছে। রাস্তাঘাটের কাজ বন্যা এলাকায় সমাপ্ত হয়েছে। ঘাটাল পাশকুড়া রোড সম্পন্ন হয়েছে। ঘাটাল শহরের চাতালের জন্য নৌকা চালানোর জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। যদি প্রয়োজন লাগে তাহলে চালু করা হবে। বিদ্যুৎ দপ্তরে প্রস্তুত আছে। বন্যা এলাকায় বিদ্যুতবাহী তারের কভার পরানো হয়েছে যাতে দুর্ঘটনা কমানো যায়। কিছু তারের উচ্চতা বাড়ানো হয়েছে। ঘাটালের কুশপাতাতে একটি সাব স্টেশনের কাজ চলছে। জেলা শাসক মহাশয় বলেন কোনও ট্রান্সফরমারের কিছু অংশ বা পথবাতির সুইচ বোর্ড ওপেন থাকলে তা বন্ধ করতে হবে যাতে বন্যার সময় দুর্ঘটনা না ঘটে সেটা দেখতে হবে। যেখানে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে বাধ্য হবে সেখানে যাতে জেনারেটর এর সাহায্যে পানীয় জলের ট্যাঙ্কার গুলি পিএইচই দপ্তর ভর্তি করতে পারে সেই বিষয়ে জোর দিতে হবে। পাম্প হাউসগুলির বিদ্যুত যাতে উঁচু খুটি ও তারের উচ্চতা বাড়িয়ে ব্যবহারের উপযোগী করা যায় সেই দিকে জোর দিতে হবে। প্রাণীসম্পদ দপ্তর কে পশুপাখি রাখার জন্য উপযুক্ত স্থান চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে এবং পশুপাখীর ভ্যাকসিন ও চিকিত্‌সার জন্য ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে। পশুখাদ্য বা ফডার যেন উপযুক্ত পরিমাণে মজুদ থাকে সেই ব্যপারে দপ্তর ব্যবস্থা নিচ্ছে। জেলা শাসক জানান বন্যাকালীন সময়ে পশু চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল করা হবে। খাদ্য সরবরাহ দপ্তর যেন প্রস্তুত থাকে তার জন্য বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ডিলার দের ও ডিস্ট্রিবিউটারদের তালিকা মহকুমা শাসককে দিতে হবে এবং বন্যা এলাকার সমস্ত ডিলার যেন নৌকার দ্বারা দুয়ারে রেশন পৌঁছাতে পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে। কেরোসিন পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ রাখতে হবে। জেলা শাসক খুরশিদ আলি কাদরী আরও বলেন বিভিন্ন দপ্তরের মধ্য সমন্বয় বাড়াতে হবে। যাতে কেউ বন্যার সময় অপ্রয়োজনে ছুটি না ভোগ করে। সবাই যেন ২৪ ঘন্টা মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকে সেই বিষয়ে জোর দেন। রিলিফ সেন্টার ও ত্রাণ শিবির যেখানে হয় সেগুলি ভিজিট করে তার সমস্ত ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে বিডিওদের ও এসডিওকে দায়িত্ব দেন।

Latest