নিজস্ব সংবাদদাতা : আজ ২০ই মার্চ বুধবার,আমলকী একাদশী বা রঙ্গভরি একাদশী। সমস্ত একাদশীর মধ্যে আমলকি একাদশীকে শ্রেষ্ঠ স্থান প্রদান করা হয়েছে। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের শুক্ল পক্ষে এই একাদশী পালিত হয়। এই দিন বিয়ের পর প্রথম বার কাশী যান শিব-পার্বতী, তখন আবীর দিয়ে তাঁদের স্বাগত জানানো হয়, এ কারণে এই একাদশী তিথি রঙ্গভরী একাদশী নামে পরিচিত। অন্য দিকে এই তিথিতে ব্রহ্মার অশ্রু বিষ্ণুর পায়ে পড়ে এবং সেখান থেকে উৎপন্ন হয় আমলকী গাছ। তাই এটি আমলকী একাদশী নামে পরিচিত। আজ শিব-পার্বতী ও বিষ্ণুর পুজো করলে সমস্ত মনস্কামনা পূরণ করা যায়।পৌরাণিক যুগে বৈদিশ নামক এক নগর ছিল। সেই নগরে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্রের বাস ছিল। সেখানে বসবাসকারী সকল নগরবাসী বিষ্ণু ভক্ত ছিলেন এবং কেউ নাস্তিক ছিল না। সেই নগরের রাজার নাম ছিল চৈতরথ। রাজা চৈতরথ বিদ্বান ও ধার্মিক ছিলেন। সেই নগরের কোনও ব্যক্তিই দরিদ্র ছিল না। এখানে বসবাসকারী প্রত্যেকে একাদশী ব্রত পালন করতেন।ফাল্গুন মাসের আমলকী একাদশী তিথিতে রাজা ও সমস্ত নগরবাসী ব্রতপালন করেন এবং মন্দির গিয়ে আমলকি গাছের পুজো এবং রাত্রিযাপন করেন। এমন সময় রাতে এক ঘোর পাপী, ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত, শিকারী সেখানে এসে উপস্থিত হয়। মন্দিরের এক কোণে বসে বিষ্ণু ও একাদশী মাহাত্ম্য শুনতে থাকে। এ ভাবে রাত কেটে যায়। নগরবাসীর সঙ্গে সেই শিকারীও সারারাত জেগে কাটায়। সকালে সকলে নিজের বাড়ি চলে যায়। কিন্তু একাদশী ব্রতকথা শ্রবণ ও রাত্রি জাগরণের ফলে পরজন্মে রাজা বিদুরথের ঘরে জন্মগ্রহণ করে। রাজা তাঁর নাম রাখেন বসুরথ। বড় হয়ে নগরের রাজা হয় সে। একদা শিকারে বের হন রাজা বসুরথ। কিন্তু মাঝখানে পথ ভুলে একটি গাছের তলায় ঘুমিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর সেখানে এক ম্লেচ্ছ এসে পড়ে। রাজাকে একা দেখে তাঁকে মারার ফন্দি আঁটে। সেই ম্লেচ্ছ বলে যে, এই রাজার কারণেই তাঁকে দেশছাড়া করা হয়েছে। তাই তাঁর হত্যা করা উচিত। কিন্তু এ সমস্ত কিছু সম্পর্কে কোনও জ্ঞানই ছিল না রাজার। সে ঘুমিয়ে থাকে। ম্লেচ্ছ সেই রাজার ওপর অস্ত্র নিক্ষেপ করতে শুরু করে। কিন্তু সেই অস্ত্র ফুল হয়ে রাজার শরীরে পড়ে।কিছুক্ষণ পর সেখানে উপস্থিত সমস্ত ম্লেচ্ছ মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। ঘুম ভাঙার পর রাজা দেখেন যে কিছু ব্যক্তি মৃত অবস্থায় মাটিয়ে পড়ে রয়েছে। রাজা বুঝতে পারে যে, সেই ব্যক্তিরা তাঁর হত্যার জন্যই সেখানে এসেছিল। কিন্তু কেউ তাঁদের বধ করে। জঙ্গলে কে তাঁর প্রাণরক্ষা করল, এমনই চিন্তাভাবনা শুরু করেন রাজা বসুরথ। তখনই আকাশবাণী হয় যে বিষ্ণু তাঁর প্রাণরক্ষা করেছে। পূর্বজন্মে আমলকী একাদশীর ব্রতকথা শোনার পুণ্য প্রভাবে শত্রু দ্বারা ঘিরে থাকা সত্ত্বেও সে জীবিত আছে। এর পর রাজা নিজের নগরে গিয়ে সুখ রাজকার্য করতে থাকেন। বিভিন্ন ধর্মীয় কাজও করেন তিনি।