Skip to content

বাংলাদেশে নিরাপদে দূর্গাপুজো উদযাপনের পরিবেশ সৃষ্টিতে ৪০ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি!

ঢাকা, জাকির হোসেন: আসন্ন দূর্গাপুজো বাধামুক্ত ও নিরাপদে উদযাপনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন সেদেশের ৪০ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও অধিকারকর্মী। সেই সঙ্গে পুজোকে উপলক্ষ করে যারা ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং উদ্দেশ্যমূলক শর্ত আরোপের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা৷ শনিবার (৫ অক্টোবর) এই বিষয়ে তাঁরা গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি, বিগত কয়েক দশক ধরেই পুজোর সময় আসলেই একটি মহল ধর্মভিত্তিক উত্তেজনা ছড়িয়ে এবং নানা ধরনের নাশকতা চেষ্টার মাধ্যমে পরিবেশকে অশান্ত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে। এবারও এর ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে না। ধর্ম অবমাননার ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে ভাঙচুর চালানোর উদাহরণ আমরা অতীতে দেখেছি। তারই ধারাবহিকতায় বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের নিয়ে ধর্মবিদ্বেষী বক্তব্য প্রচার, ফেসবুকে নানা ধরনের সাজানো গল্প ছড়িয়ে উত্তেজনা তৈরি করে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার অপচেষ্টা শুরু হয়েছে।' বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'কিছু কিছু জায়গায় আমরা প্রতিমা ভাঙচুর ও মন্দিরে হামলার তথ্যও পেয়েছি। সেই সঙ্গে একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘুবিদ্বেষী মহল বেআইনি ও নৈতিকতাবিরোধীভাবে পুজোর সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা কি করতে পারবেন আর কি করতে পারবেন না তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে যা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং গর্হিত অপরাধ। আইনশৃঙ্খলার অনিবার্য প্রয়োজনে কি করা যাবে বা যাবে না তা বলার এখতিয়ার সরকারের, অন্য কারো নয়।' দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, 'ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন যে পূজার সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।... আমরা বিশ্বাস করতে চাই সরকার তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷ সেই সঙ্গে আমরা দাবি জানাচ্ছি, যারা উত্তেজনা তৈরি করছে বা সহিংসতার উস্কানি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আগেভাগেই কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ঘটনার পেছনে যারা আছে তাদেরকে তদন্তের মাধ্যমে শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।' বিবৃতিতে বলা হয়, 'সরকারি হিসেবে এবছর বাংলাদেশে ৩২ হাজার ৪৬০টি মণ্ডপে দূর্গাপুজো পালিত হবে বলে জানানো হয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের মানুষ সব ধর্মমতের মানুষকে নিয়ে সহিষ্ণুতা ও শান্তির সঙ্গে বাস করতে আগ্রহী। এখানে প্রতিটি ধর্মের উৎসব স্বাধীন ও নিরাপদে নিজস্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী পালনের পূর্ণ অধিকার থাকতে হবে এবং সকল ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে তা পালিত হবার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সব ধর্মের উৎসব পালনে নিরাপত্তা বিধানে রাষ্ট্রের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।' বিবৃতিতে দলমত ও ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-লিঙ্গ নির্বিশেষে সর্বস্তরের নাগরিক ও ছাত্র-জনতাকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির অপপ্রয়াসে লিপ্ত দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে সবসময় সতর্ক থাকা এবং প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলারও আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সুপ্রীম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সাম্মানিক নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, জোবায়দা নাসরিন, বিশ্বখ্যাত আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ সহ ৪০ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও অধিকারকর্মী৷

প্রসঙ্গত, সরকার ও বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদ হতে পাওয়া তথ্যমতে, চলতি বছর বাংলাদেশে মোট ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে শারদীয় দূর্গাপুজো হবে যার মধ্যে রাজধানী ঢাকাতে ২৫৭টি মণ্ডপে পুজো অনুষ্ঠিত হবে। ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে দু'মাস আগে আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের শাসনামলে গত বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ৪০৮টি দূর্গাপুজো হয় যার মধ্যে ঢাকা মহানগরে পুজোর সংখ্যা ছিল ২৪৫; যার তুলনায় এই বছরের পুজো মণ্ডপের সংখ্যা বেশি৷ বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদ জানাচ্ছে, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর বুধবার বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব, ১৩ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই মহোৎসব। ঢাকায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, বনানী, কলাবাগান, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, রমনা কালী মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ফার্মগেটের খামার বাড়ি এবং পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার ও তাঁতী বাজার সহ ঢাকার বিভিন্ন অংশে মণ্ডপগুলোতে পুজো অনুষ্ঠিত হবে। মন্দির ও অস্থায়ী পুজো মণ্ডপে চলছে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের জোর প্রস্তুতি৷ কারিগররা প্রতিমার চূড়ান্ত রূপ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন৷ দূর্গাপুজো উদযাপনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দেশজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা খালিদ হোসেন। দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদারে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷ ঢাকার মণ্ডপগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের জন্য ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির চত্বরে কেন্দ্রীয় পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হচ্ছে৷ সারাদেশের প্রতিটি জেলায় কেন্দ্রীয় পুলিশ কন্ট্রোল রুম করা হচ্ছে এবং বাংলাদেশের ছোট বড় সকল মণ্ডপ আলাদা আলাদাভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় থাকবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র দপ্তর৷

Latest