Skip to content

ঋষি রাজনারায়ণ বসু'র দ্বিশত জন্মবর্ষ উদযাপনের শুভ সূচনা!

1 min read

পশ্চিম মেদিনীপুর নিজস্ব সংবাদদাতা : একদা মেদিনীপুর কলেজিয়েট হাইস্কুল (তৎকালীন মেদিনীপুর জেলা হাইস্কুল)-এর প্রধান শিক্ষক, জাতীয়তাবাদের পিতামহ ঋষি রাজনারায়ণ বসুর দ্বিশত জন্মবর্ষ বর্ষব্যাপী উদযাপনের শুভ সূচনা হলো মেদিনীপুর শহরে ভারতীয় রেডক্রস সোসাইটির ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় স্মৃতি সভাগৃহে। মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার উদ্যোগে গঠিত ঋষি রাজনারায়ণ বসু দ্বিশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রথমে সংস্থার ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করেন সংস্থার সভাপতি। সেই সময় সংস্থাকে নিয়ে লেখা একটি গান পরিবেশিত হয়। তারপর মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন ঝুমঝুমি চক্রবর্তী।ঋষি রাজনারায়ণ বসুর প্রতিকৃতিতে ও সংস্থার চারজন আইকন প্রাতঃস্মরণীয় পণ্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর , বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরা, দেশ প্রাণ বীরেন্দ্র নাথ শাসমল, অগ্নিকিশোর শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়। রাজনারায়ণ বসুকে কেন্দ্র করে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে জাতীয়তাবাদ নিয়ে ধারণা সৃষ্টি ও মূল্যবোধের বিকাশের প্রচেষ্টা এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য বলে উদযাপন কমিটির মুখ্য সম্পাদক অধ্যাপক হৃষীকেশ পড়্যা তাঁর স্বাগত বক্তব্যে উল্লেখ করেন। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শ্যামাপদ জানা তাঁর বক্তব্যে সংস্থা গঠনের গোড়ার কথা ও উদ্দেশ্য, সংস্থার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড, দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্র- ছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা, চিকিৎসা পরিষেবা ও মেদিনীপুর ভবন সংক্রান্ত পরিষেবা প্রভৃতি বিষয় সংক্ষেপে উল্লেখ করেন। রাজভবন থেকে প্রেরিত শুভেচ্ছা বার্তা পাঠ করেন সংস্থার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক শ্রী রতিকান্ত মালাকার । উদযাপন কমিটির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ড. সুজন কুমার বালা অতিথিদের পরিচয় করিয়ে দেন।
প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন এবং পরে সভায় ঋষি রাজনারায়ণ বসুর জীবন ও জাতীয়তাবাদের উন্মেষ নিয়ে বক্তব্য রাখেন সংস্থার উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ইতিহাসবিদ অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক প্রবোধ চন্দ্র সিনহা। ঋষি রাজনারায়ণ বসুর বিস্তৃত কর্মকাণ্ড কে নিয়ে গবেষণাধর্মী আলোচনা করেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তন রবীন্দ্র অধ্যাপক ড. অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য । উদযাপন কমিটির মুখ্য উপদেষ্টা গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. গোপাল চন্দ্র মিশ্র তাঁর বক্তব্যে মেদিনীপুরের তৎকালীন শিক্ষা ব্যবস্থায় ও জাতীয়তাবোধের উন্মেষে ঋষি রাজনারায়ণ বসুর ভূমিকা তুলে ধরেন। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তথা উদযাপন কমিটির কার্যকরী সভাপতি শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক প্রণবেশ জানা শুভেচ্ছা জানান ও সবার মধ্যে সমন্বয়ের কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানে '' জাতীয়তাবাদের পিতামহ''-ঋষি রাজনারায়ণ বসু", "কথামালার কথা" এবং "মুক্তি যুদ্ধে মেদিনীপুর " এই তিনটি পুস্তক প্রকাশিত হয়।
সভায় অখণ্ড মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও কলকাতা , হাওড়া সহ বিভিন্ন জেলা থেকে বহু জ্ঞানী গুণী মানুষের সমাবেশে এবং বিদ্যালয় -মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগগ্ৰহণে সফলতা লাভ করে সভাটি। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থার তথা উদযাপন কমিটিরও সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক মন্মথনাথ দাস। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মেদিনীপুর টাউন আঞ্চলিক ইউনিটের সভানেত্রী প্রাক্তন বিচারক অঞ্জলী সিনহা। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ডাঃ গোলক মাঝি সহ অন্যান্যরা।
অনুষ্ঠানের মাঝে মাঝে মেদিনীপুর টাউন আঞ্চলিক ইউনিট, কাঁথি-এগরা আঞ্চলিক ইউনিট ও বেলদা আঞ্চলিক ইউনিটের দেশাত্মবোধক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সভার পরিবেশকে ভিন্ন মাত্রা দান করে। পাশাপাশি অতিথি শিল্পী হিসেবে সঙ্গীত গুরু জয়ন্ত সাহার নেতৃত্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ঐতিহ্যবাহী রবীন্দ্র স্মৃতি সমিতির সদস্য-সদস্যারা। নৃত্য পরিবেশন করেন তালমের শিক্ষার্থীরা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন চিত্তরঞ্জন দাশ।এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে মেদিনীপুর টাউন আঞ্চলিকতার ইউনিট এবং সমগ্ৰ অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ডাঃ অরূপ কুমার দাস। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় শনিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর শহরে মেদিনীপুর টাউন আঞ্চলিক ইউনিটের উদ্যোগে একটি বর্ণাঢ্য মশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়। যেটি প্রায় একশত জনের অংশগ্ৰহণে মেদিনীপুর কলেজের সামনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তির পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল, অলিগঞ্জ ঋষি রাজনারায়ণ বসু বালিকা বিদ্যালয়, ঋষি রাজনারায়ণ বসু স্মৃতি পাঠাগার সহ শহরের বিভিন্ন স্থান পরিক্রমা করে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে এসে শেষ হয়।এই শোভাযাত্রায় সংস্থা সদস্য -সদস্যা, শুভানুধ্যায়ীদের পাশাপাশি অলিগঞ্জ প্রাক্তনীর সদস্যারা ও চুয়াডাঙ্গা হাইস্কুলের ছাত্রীরা অংশ নেন।রবিবার সকাল সাতটার সময় মেদিনীপুরে ঋষি রাজনারায়ণ বসুর স্মৃতি বিজড়িত উপরোল্লিখিত তিনটি স্থানে ঋষি রাজনারায়ণ বসু এবং অন্যান্য মণীষীদের মূর্তিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পাশাপাশি শনিবার সকালে চব্বিশ পরগনার বোড়াল গ্রামে ঋষি রাজনারায়ণের জন্মস্থানে তাঁর মূর্তিতে মাল্যদানের পাশাপাশি তাঁর স্মৃতি বিজড়িত স্থান গুলিতে এবং তাঁর নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠান গুলো পরিদর্শন করেন মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল। মূল অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো ।প্রায় ২৫০ জন উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানগুলির সার্বিক সাফল্যের জন্য যাঁদের অবদান অনস্বীকার্য তাঁদের মধ্যে উদযাপন কমিটির সম্পাদক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য মৃত্যুঞ্জয় খাটুয়া, সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেবী প্রসাদ নন্দী, অমিতাভ দাস, ডঃ মিলন কুমার সরকার এবং টাউন আঞ্চলিক ইউনিটের সুদীপ কুমার খাঁড়া, ড.সুশান্ত দে অন্যান্য সদস্য -সদস্যবৃন্দ।

Latest