ঢাকা, জাকির হোসেন: হঠাৎ করেই অশান্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা। খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সংঘর্ষে এখন অবধি ৪ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরবাইক চুরির একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) গণপিটুনিতে মোহাম্মদ মামুন নামের এক যুবক প্রাণ হারান। মূলত এ ঘটনার প্রেক্ষিতেই পরবর্তীতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে খবর, মামুনের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এলাকার দীঘিনালা কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
মিছিলটি দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ (মূল)-এর কিছু সন্ত্রাসী মিছিলের ওপর হামলা করে। তারা ২০-৩০ রাউন্ড গুলিও ছোঁড়ে। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা বোয়ালখালী বাজারের কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষের ৬ জন আহত হলে তাদের চিকিৎসার জন্য দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ফায়ার ব্রিগেড ও স্থানীয় মানুষের সহায়তায় আগুন নেভায়। এরপর বিচ্ছিন্নভাবে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর দ্রুত খাগড়াছড়ির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল সভা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বৃহস্পতিবার রাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা ও পানছড়িসহ সকল উপজেলায় যৌথভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে টহল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন কমিউনিটি লিডারদের সাথে আলাপ আলোচনা করে সকল পক্ষকে সহিংস কার্যকলাপ হতে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। খাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনার পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে রাঙামাটিতেও। সেখানেও জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে শহরের জিমনেশিয়াম চত্বর থেকে কয়েক হাজার পাহাড়ির একটি মিছিল বের হয়ে বনরূপায় গেলে সেখানে মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে- এমন অভিযোগ করে বেশকিছু দোকানপাট ভাঙচুর করে মিছিলকারীরা। তারা এ সময় রাস্তায় চলাচলকারী বাস-ট্রাক ভাঙচুর করে। সূত্রের খবর, রাঙামাটিতে সকালে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়। শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ টহল টিম শহরে কাজ শুরু করেছে। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাদিয়া আক্তার জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ৫০ জনের মতো আহত হাসপাতালে এসেছে। যাদের মধ্যে অন্তত ৭ জনের অবস্থা গুরুতর। জেলা প্রশাসক মোশাররফ হোসেন খান জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দুপুর দেড়টা থেকে রাঙামাটি পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
অপরদিকে, খাগড়াছড়িতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। এ সংঘাতের জেরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় খাগড়াছড়ি পৌরশহর ও জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান। সব পক্ষকে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থানের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যে কোনো ধরনের সহিংসতা রোধে এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। এসব এলাকার পরিস্থিতি পরিদর্শনে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল৷ এই দলে আছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা হাসান আরিফ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আব্দুল হাফিজ। উদ্ভুত সংকট সমাধানে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেইসঙ্গে সবাইকে শান্ত থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।