ঢাকা, জাকির হোসেন: বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে একের পর এক গুম, খুন, গণহত্যা, ধর্ষণ সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে নিজেদের কালিমালিপ্ত করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন 'বাংলাদেশ ছাত্রলীগ' এর নেতাকর্মীরা৷ একুশ শতকে এসে হাসিনা সরকারের গত সাড়ে পনেরো বছরের শাসনামলে নিজেদের অপরাধের সকল মাত্রা ছাড়িয়ে যায় সংগঠনটি, যার ফলে ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে এরা তকমা পেতে শুরু করে 'সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে৷ চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া বাংলাদেশের ছাত্রজনতার গণআন্দোলনে দেশজুড়ে যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসকদল আওয়ামী লীগ, তাতে দলটির মদদপুষ্ট ছাত্রলীগ অংশ নেয় একদম সামনে থেকে৷ এবার আনুষ্ঠানিকভাবেই মিলল তাদের ঘৃন্য সব অপরাধের স্বীকৃতি৷ বাংলাদেশে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাতে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ অনুযায়ী ক্ষমতাবলে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো এবং ওই আইনের তফসিল-২ অনুযায়ী বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হলো। সরকারের ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ''যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করিয়া বিগত ১৫ বৎসরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুম কেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এ সম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সকল গণমাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে এভং কিছু সন্ত্রাষী ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হইয়াছে,'' ''এবং যেহেতু ১৫ জুলাই ২০২৪ তারিখ হইতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উম্মক্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করিয়া শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিদের হত্যা করিয়াছে এবং আরো অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করিয়াছে; এবং" "যেহেতু সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রহিয়াছে যে, ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যের সাথে জড়িত রহিয়াছে;'' “সেহেতু সরকার ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’-এর ধারা ১৮-এর উপধারা (১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল এবং ওই আইনের তফসিল-২-এ ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামীয় ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করল।” এতে আরও বলা হয়, এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে৷ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিবৃতি প্রকাশও এখন নিষিদ্ধ। সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ (২০০৯ সালের ১৬ নং আইন)-এর ২০-এর ১ ধারা অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা নিষিদ্ধ সত্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। আইনে বলা হয়েছে, ২০-এর ১-এর ঙ ধারা মতে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা নিষিদ্ধ সত্তার প্রেস বিবৃতির প্রকাশনা, মুদ্রণ বা প্রচারণা প্রদান নিষিদ্ধ করবে সরকার।