ঢাকা, জাকির হোসেন: বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। ঢাকার উত্তরায় ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় জখমদের চিকিৎসা করানোর জন্য সাহায্যের হাত বাড়াল ভারত। প্রথম থেকেই সবরকম সাহায্য করা হবে বলে জানিয়েছিল ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিষয়টি জানানোর পরে, ভারতীয় দূতাবাস থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল সাহায্যের কথা বলে। এ বার সরাসরি সাহায্য পাঠাচ্ছে ভারত। এই সংবাদ লেখা অবধি বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশ পৌঁছনোর কথা রয়েছে ডাক্তার, নার্সদের একটি টিম। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক সরঞ্জামও পাঠাচ্ছে ভারত।দুই দেশের বিদেশ মন্ত্রকের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সাহায্য পাঠানোর বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। উত্তরায় হওয়া বিমান দুর্ঘটনায় বহু শিশু ও ব্যক্তি অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। সেই কারণে বার্ন ইউনিটে কাজ করার অর্থাৎ অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ডাক্তার ও চিকিৎসাকর্মীদের বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী পাঠানো হবে বলে ভারতের তরফে থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সাহায্যের বার্তা পাঠানোর পরে দুই দেশের বিদেশ সচিব স্তরে যোগাযোগ বজায় ছিল টানা। কী ধরনের চিকিৎসার সাহায্য প্রয়োজন তা জানতে চেয়েছিল ভারত। তার উত্তরে বাংলাদেশ সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল যেহেতু জখমরা সকলেই অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন, সেই কারণে তাদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ও যন্ত্রপাতির প্রয়োজন রয়েছে। সেই মতো পদক্ষেপ করেছে ভারত।বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক স্তরে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশে নানা স্তরে প্রবল ভারত বিরোধিতার সুর শোনা গিয়েছিল। ইউনূস সরকারের পক্ষ থেকেও উষ্ণতা দেখা যায়নি। কিন্তু উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনার পরে মানবিক কারণে দুই দেশের মধ্যে নির্ভরতা ও বোঝাপড়া দেখা যাচ্ছে, বর্তমান সময়ে তা দুই দেশের সম্পর্কের জন্যও প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ইরফান রহমান৷ তিনি বলেন, "এটা শুধুই মানবিকতার প্রশ্ন নয়—এ এক কূটনৈতিক পরিপক্বতার পরীক্ষাও। আর ভারতের কাছে এই মানবিক সহায়তা শুধু সাহায্য নয়—এক সম্ভাবনার সেতু, যা দুই দেশের সম্পর্কে বলপ্রয়োগের দৃষ্টিভঙ্গি ছেড়ে সহানুভূতির ভিত্তিতে নতুন করে গড়ে তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে। এই মুহূর্তে সমস্ত মনোযোগ থাকা উচিত প্রাণ বাঁচানোর লড়াইয়ে। কিন্তু হাসপাতালের বেড পেরিয়ে, এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হয়তো নিঃশব্দে বদলে দিচ্ছে ঢাকা-দিল্লির কূটনৈতিক আবহ— বিরোধিতার সুর থেকে সদিচ্ছার দিকে, সংঘাতের জায়গা থেকে সহাবস্থানের পথে।"এদিকে, উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩২-এ। অগ্নিদগ্ধ হয়ে যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি আছেন, তাঁদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাংলাদেশের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) ও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া তথ্যে হতাহতের এই চিত্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ১টা নাগাদ জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।