নিজস্ব সংবাদদাতা : সাদা পাতার এক কোণে অংক কষা। আর ঠিক মাঝখান দিয়ে লেখা নিজের নাম কৃষ্ণেন্দু দাস, সপ্তম শ্রেণি ও রোল নাম্বার ১৬। আর তারপরই খোপ কেটে হৃদয় নিংড়ে মা-কে লেখা দু'লাইনের ছোট্ট চিঠি। যার মূল কথা একটাই, "মা, আমি চুরি করিনি।" এক প্যাকেট 'কুরকুরে' নিয়ে যখন মিথ্যে চুরির অপবাদ তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে, তখন সে তার জীবনের পরম আশ্রয়, পরম ভরসার মাকে শুধু দুটো কথা-ই লিখতে পেরেছিল। সপ্তম শ্রেণির কৃষ্ণেন্দু মা-কে লেখে, "মা আমি বলে যাচ্ছি যে আমি কুড়কুড়াটি রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম চুরি করিনি।" আর তারপরই অপবাদে-অপমানে আত্মঘাতী হয় ওই সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।

গত রবিবার ১৮ই মে রবিবার কৃষ্ণেন্দু বাজারে কুরকুরে চিপস কিনতে বেরিয়েছিল। পরিবারের অভিযোগ, যে দোকানে গিয়েছিল, সেখানে দোকান খোলা রেখে দোকানদার চলে গিয়েছিলেন। দোকানে ছিলেন না। তখন দোকানের বাইরে পড়ে থাকা একটি চিপসের প্যাকেট কুড়িয়ে নেয় কৃষ্ণেন্দু। তার কাছে পয়সাও ছিল, পরে এসে সে দোকান মালিক শুভঙ্কর দীক্ষিতকে দেবে ভেবেছিল। এরপর বাড়ি ফেরার পথেই দোকান মালিক শুভঙ্কর দীক্ষিত, যিনি পেশায় একজন সিভিক ভলান্টিয়ারও, তাঁর দোকানের চিপস 'চুরি' করে নিয়ে চলে যাচ্ছে বলে কৃষ্ণেন্দুকে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন। মিথ্যে চুরির অপবাদ-অপমান অভিযোগ, শুভঙ্কর দীক্ষিত এরপর ওই কিশোরকে প্রকাশ্যেই চুরির অপবাদ দেন। কান ধরে ওঠবস করান। এমনকি মারধরও করেন। কৃষ্ণেন্দুর বাবা-মায়ের দাবি, চিপসের দাম সেইসময় তাঁদের ছেলে পরিশোধও করে দিয়েছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন কৃষ্ণেন্দুর মা। অপমানিত অবস্থায় ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যান মা।

কিন্তু চোর অপবাদ আর অপমান সহ্য করতে না পেরে এরপরই কৃষ্ণেন্দু মাকে চিঠি লিখে রেখে বাড়িতে থাকা কীটনাশক খেয়ে নেয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয় তমলুক মেডিকেল কলেজে। কিন্তু চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে বৃহস্পতিবার ২২শে মে সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। আজ ২৫শে মে রবিবার মৃত কিশোর কৃষ্ণেন্দু দাসের মা সুমিত্রা দাস পাঁশকুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগপত্রে নাম রয়েছে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের ভাই দীপঙ্কর দীক্ষিত, স্ত্রী নিশা দীক্ষিত ও বাবা সূর্যকান্ত দীক্ষিতের। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সুমিত্রা দাস। ঘটনার পর থেকে পলাতক শুভঙ্কর দীক্ষিত।

গত কয়েকদিনে একাধিকবার সিভিক ভলান্টিয়ার শুভঙ্কর দীক্ষিতের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি। তাঁর কঠোর শাস্তি চেয়েছেন। এবার থানায় ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেন।সপ্তম শ্রেণির কৃষ্ণেন্দু অনেক করে বলেছিলো তার মাকে , আমি তোমাকে বলছি যে আমি রাস্তার ধারে কুরকুরু পেয়েছি। আমি এটা চুরি করিনি।" আমরা কোন সমাজে বাস করি? একটা পাঁচ টাকা দামের চিপ্সের প্যাকেট তুলে নেওয়া জন্য চুরি অপবাদ! এই মর্মান্তিক ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।
