নিজস্ব সংবাদদাতা : লোকসভার আলোচনায় বাংলা,হিন্দি, ইংরেজি- তিনটি ভাষার মিশেলে ২০ মিনিটের নজর কাড়া বক্তৃতা রাখলেন যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ সায়নী ঘোষ। মঙ্গলবার নিজের বক্তৃতার শুরুতেই অধ্যক্ষের কাছে তিনি পরিষ্কার করে দেন তিনি (বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজি) তিনটি ভাষায় কথা বলবেন। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে লোকসভার আলোচনায় পরিসংখ্যান তুলে যাদবপুরের সাংসদ সায়নী বলেন,‘‘১০ মে থেকে আজ (২৯ জুলাই) পর্যন্ত ২৮ বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতি নিয়ে তাঁর ভূমিকার কথা বলেছেন। তার পরেও ভারত সরকার প্রায় নীরব ছিল। চুপ ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। এরপর সায়নীর উপহাস,‘‘মোদীকে তাঁর জোকারে পরিণত করেছেন ট্রাম্প।’’ বর্তমানে রাজ্যে বিজেপি নেতারা অভিযোগ তুলছেন যে বাংলায় অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিষয়ে তৃণমূল সাংসদ সায়নী প্রশ্ন তুললেন, ‘‘পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিরা ঢুকল কী ভাবে? সেখানেও কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন না কি?’’ এমনকি পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পরে সব দলের মতো তৃণমূলও সরকারের পাশে থাকার কথা জানিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে জানান, ‘‘মমতাদি যখন স্পর্শকাতর বিষয়ে দেশের সরকারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তখন বিজেপির মন্ত্রী বলছেন অপারেশন সিঁদুরের পরে অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ হবে।’’ এর পরেই সায়নী চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে কালকে ভোট করুন। দেখা যাবে!’’ যাদবপুরের সাংসদ বাংলা ছন্দে বলেন, ‘‘এক দিকে আপনাদের সরকার, এজেন্সি আর কোটি কোটি ক্ষমতা, অন্য দিকে হাওয়াইচটি আর বাংলার মেয়ে মমতা। দেখি কে জেতে!’’ পহেলগাঁওয়ে নিহতের মধ্যে বাংলার তিন বাসিন্দার মধ্যে যাদবপুরে কেন্দ্রে থাকতেন বিতান অধিকারী। বিতানের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন সায়নী। সেই প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে যাদবপুরের সাংসদ সায়নীর গলা কিছুটা ধরে আসে। তার পরেই আবার পাকিস্তানের সন্ত্রাস, মোদী সরকারের ভূমিকা এবং বিজেপি-কে ক্রমাগত আক্রমণ করেন তৃণমূল সাংসদ সায়নী। সায়নী মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শুরুটা ভাল করলেও শেষটা ভাল করতে পারেননি। তৃণমূল সাংসদের প্রশ্ন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কি পারলেন শেষ পর্যন্ত দেশবাসীর ভরসা অক্ষুণ্ণ রাখতে?’’ অন্য বিরোধী সাংসদদের মতো সায়নীরও প্রশ্ন, কী ভাবে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিরা ঢুকে পড়ল? কেন সেখানে পুলিশ পৌঁছোতে পারল না? পহেলগাঁও কাণ্ডের পর পরই জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিন্হা ‘নিরাপত্তার ব্যর্থতা’র কথা বলেছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে সায়নীর প্রশ্ন, ‘‘কেন গোয়েন্দাপ্রধানের কাছে এই ব্যর্থতার জবাবদিহি চাওয়া হল না? কেন তাঁকে সরানো হল না? তার বদলে কেন তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হল?’’ পহেলগাঁও-কাণ্ডে জড়িত তিন জঙ্গিকে নিকেশ করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার সংসদে দাবি করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই বিষয়ে কিছুটা ঠাট্টার সুরে তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘আমরা ভাগ্যিস এখন আলোচনা শুরু করলাম, তাই জঙ্গিরা ধরা পড়ল। দু’মাস আগে করলে, আরও আগে ধরা পড়ত।’’ কেন পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করা হল না, সেই প্রশ্ন তোলেন, যা ধারাবাহিক ভাবে তুলে আনছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সায়নীর মতে,‘‘ইটের জবাব ইটে দেওয়া হয়েছে। ভারতবাসী চেয়েছিল ইটের জবাব পাথর দিয়ে দেওয়া হোক। পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার যখন সুযোগ ছিল, তখন সেটা আমরা নষ্ট করেছি। পাকিস্তানকে বোঝানো যেত তাদের পতাকায় চাঁদ রয়েছে। আর আমাদের পতাকা চাঁদে রয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের উচিত ছিল স্পষ্ট ভাষায় বার্তা দেওয়া যে, ‘আমি ভয় করব না ভয় করব না, দু’বেলা মরার আগে মরব না ভাই মরব না’।’’ বক্তৃতার শেষে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান তৃণমূল সাংসদ সায়নী ঘোষ।
সংসদে নজর কাড়া বক্তৃতা সায়নীর,"পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার যখন সুযোগ ছিল,তখন সেটা আমরা নষ্ট করেছি। পাকিস্তানকে বোঝানো যেত তাদের পতাকায় চাঁদ রয়েছে। আর আমাদের পতাকা চাঁদে রয়েছে।’’....
