বাংলাদেশে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর ঠাঁই হবে না: ভারতকে প্রতিশ্রুতি বিএনপির!

ঢাকা, জাকির হোসেন: ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক মধুর নয় -এমন কথা প্রচলিত রয়েছে ঢাকার রাজনীতিতে। তবে এবার তিক্ত সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে দু'পক্ষের। এমনটাই দাবি করলেন বিএনপি'র মহাসচিব অধ্যাপক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে অধ্যাপক ফখরুল বলেছেন, বিএনপি ও ভারতের সম্পর্ক নিয়ে কিছু ভুল বোঝাবুঝি ছিল। আমি মনে করি— বরফ গলতে শুরু করেছে। আশা করি এই সম্পর্ক আরও ভালো হবে। আর কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে পারবে না, এই মর্মে ভারতকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএনপি। গত রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে বৈঠকের পর বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এএনআই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে বলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বিশ্বাস করে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রণয় ভার্মার সঙ্গে হওয়া এই বৈঠক উভয় দেশকে অনেক ইতিবাচক দিকে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গত নির্বাচনের পর থেকেই আমাদের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ছিল। কিন্তু এবার আমাদের অফিসে (ভারতের) হাইকমিশনার আসায় অবশ্যই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বরফ গলতে শুরু করেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সবসময়ই খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। অবশ্যই এটি টার্নিং পয়েন্ট। অধ্যাপক ফখরুল বলেন, তার দল ভারতকে আশ্বস্ত করেছে যে, ক্ষমতায় এলে তারা বাংলাদেশের ভূখণ্ড বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকে ব্যবহার করতে দেবে না৷ যদিও অতীতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করা হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, আমরা দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা পানি ভাগাভাগি সমস্যা, সীমান্ত হত্যা, বিদ্যমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার কথা উল্লেখ করেছি। একই সময়ে, ভারতের প্রধান ইস্যু ছিল নিরাপত্তা সমস্যা। আমরা আশ্বস্ত করেছি, আমরা ক্ষমতায় থাকলে, আমরা নিশ্চিত করব এই ভূখণ্ডটি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ব্যবহার করবে না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি ও ভারতের সম্পর্ক নিয়ে কিছু ভুল বোঝাবুঝি ছিল। আমি মনে করি— বরফ গলতে শুরু করেছে। আশা করি এই সম্পর্ক আরও ভালো হবে। এইবার তারা (ভারত) আমাদের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করবে, বিশেষ করে ভারতকে এই দেশের মানুষের পালস বোঝার চেষ্টা করা উচিত। তাদের সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখা উচিত নয়। তাদের উচিত (উভয় দেশের) জনগণের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলা। শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি এখনও জানি না যে, সরকার তাকে (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছে কিনা। তবে আমি মনে করি, তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ফিরে আসা উচিত এবং তার জবাবদিহি করা উচিত।' এদিকে বিএনপি বলেছে, আগামী ৯ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত পালিত হতে যাওয়া শারদীয় দুর্গাপুজোর আগে তারা বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের ইউনিটগুলোকে সতর্ক করেছে। বাংলাদেশের এবার ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে পুজো উদ্‌যাপন করা হবে। সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা নিয়ে অধ্যাপক ফখরুল এএনআইকে বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে— এমন ভুল বর্ণনা নিয়ে আমরা খুব উদ্বিগ্ন। আমি মনে করি না, কোনো গুরুতর সমস্যা চলছে। প্রতিটি পরিবর্তনের পর কিছু সমস্যা থাকে যা পুরোটাই রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক নয়। কিন্তু, আমরা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য খুবই সজাগ। বিশেষ করে, পুজোর আগে আমরা ইতোমধ্যেই সারা দেশে আমাদের ইউনিটগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছি।’ সবশেষে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে— বাংলাদেশে শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকার থেকে গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে।