পশ্চিম মেদিনীপুর সেখ ওয়ারেশ আলী : মেদিনীপুর শহর থেকে মাত্র দশ কিলোমিটার দূরে, শালবনি ব্লকের নিরিবিলি কর্ণগড় আজ যেন আবার ইতিহাসের আলোয় জেগে উঠছে। এককালে এখানেই রাজত্ব করতেন ব্রিটিশ বিরোধী চুয়াড় বিদ্রোহের কিংবদন্তি বীরাঙ্গনা রানি শিরোমণি— বাংলার ইতিহাসে এক অমলিন নাম, যিনি স্বাধীনতার লড়াইয়ে নারীশক্তির অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছিলেন। কর্ণগড় দুর্গের প্রতিটি ইট যেন এখনো তার সেই সংগ্রামী আহ্বানের প্রতিধ্বনি শোনায়।

দীর্ঘদিনের অবহেলা, সময়ের ক্ষয় আর প্রকৃতির আঘাতে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছিল এই ঐতিহাসিক দুর্গ। একসময়ের গৌরব যেন হারিয়ে গিয়েছিল ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু আজ সেই হারানো ইতিহাসই আবার ফিরে পাচ্ছে নিজের গর্বিত রূপে— কর্ণগড়ের গড়ে শুরু হয়েছে পুনর্জন্মের যাত্রা।রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের হেরিটেজ কমিশন কর্ণগড় দুর্গের সংরক্ষণ ও সংস্কারের জন্য বরাদ্দ করেছে প্রায় ২ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা। সেই বরাদ্দের পরই পূর্ত দপ্তরের তত্ত্বাবধানে জোরকদমে চলছে কাজ।

মাটি সরানোর সঙ্গে সঙ্গে একে একে উঠে আসছে ইতিহাসের লুকিয়ে থাকা অধ্যায়— প্রাচীন খিলান, পাথরে খোদাই করা মূর্তি, পুরনো সিঁড়ি আর মন্দিরের গর্ভগৃহ। প্রতিটি নিদর্শন যেন রানি শিরোমণির সময়ের গৌরবময় যুগের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে।জেলা প্রশাসনের মতে, এই সংস্কার অভিযান কেবল অতীতকে উদ্ধার করছে না, বরং নতুন করে খুলে দিচ্ছে ঐতিহ্য ও পর্যটনের এক সম্ভাবনাময় দুয়ার। ইতিমধ্যেই হেরিটেজ কমিশনের নির্দেশে কর্ণগড় দুর্গের একাধিক স্থাপত্যকে ঘোষণা করা হয়েছে।ইতিহাসবিদ ও প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য,“রানি শিরোমণির কর্ণগড় ফের রাজ্যের গৌরবের প্রতীক হয়ে উঠবে—এক হারানো ইতিহাসের গর্বিত পুনর্জন্ম ঘটছে এই মাটিতে। দু’শো বছর আগের সেই সংগ্রামী দিনগুলির আবেশ যেন আবার ছড়িয়ে পড়ছে কর্ণগড়ের বাতাসে।কর্ণগড়— যে গড় এক সময় হারিয়ে গিয়েছিল ইতিহাসের কোণে, আবার ফিরে পাচ্ছে নিজের হারানো গর্ব, নিজের অমর পরিচয়।