পশ্চিম মেদিনীপুর নিজস্ব সংবাদদাতা : পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থায় এত বড় বিপর্যয় অতীতে কখনো ঘটেনি। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়- সর্বস্তরে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও নৈরাজ্য বিপর্যস্ত করে তুলেছে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে। আদালতের সিভিল জজ (সিনিয়র ডিভিশন) পরাগ নিয়োগী শহরের বিশিষ্ট সমাজসেবী দীপককুমার দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে নিমপুরা আর্য বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক চন্ডীচরণ ত্রিপাঠীর দায়ের করা মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। ২০১৪-১৫ অধিক বর্ষ' অব্দি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন রণজিত মাজি। তাঁর সময়ে প্রতি বছর অ্যাকাউ অডিট কিন্তু তিনি অবসর নেওয়ার পর প্রধান শিক্ষার হয়ে আসেন চন্ডীচরণ ত্রিপাঠী। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর তিন চার বছর স্কুলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউ গুলির কোনো অডিট করানো হয়নি কেন, এই নিয়ে শহরের বিশিষ্ট সমাজসেবী দীপককুমার দাশগুপ্ত জেলা শাসকের কাছে অভিযোগ জানালেন। তৎকালীন জেলা শাসক পি. মোহন গান্ধী ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জেলার ডিআই কে নির্দেশ দিলেন দীপককুমার দাশগুপ্তের করা অভিযোগের ভিত্তিতে নিমপুরা আর্য বিদ্যাপীঠে একটি তদন্ত কমিটি পাঠানো হোক (চিঠির মেমো নং ৬১৪৪, তাং ০৪.১০.২০১৮। এরপরে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডিআই ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর জেলা শাসককে ঐ প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়ে দেন (মেমো নং ২৫৮৯-এস)। এই চিঠিতে ডিআই, জেলা শাসককে জানান, দীপকবাবুর তোলা অভিযোগ এবং স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী স্কুলে প্রাথমিক তদন্ত চালিয়ে এই রিপোর্ট তৈরী করা হয়েছে। এই রিপোর্টে বলা হল ১) স্কুলের পরিচালন সমিতির তিন শিক্ষক প্রতিনধি একই সঙ্গে পদত্যাগ করেছেন। পরিচালন সমিতি ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারী তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। ২০১৮ সালের ১৬ মার্চ পরিচালন সমিতির পরবর্তী বৈঠকে তিন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের বিষয়টিতে অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ২৪ মার্চ নির্বাচনের দিন ঠিক করা হয়। কিন্তু কোনো শিক্ষক মনোনয়ন দাখিল করেননি। এর অর্থ দীপকবাবুর তোলা অভিযোগ সত্য। ২) ২০১৭ সালের ৩০ আগষ্ট স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মিহির মিড মিল দেখাশোনা করার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চান। তার বদলে সহ শিক্ষক দেবব্রত পানীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পানী আদালতের সামনে স্বীকার করেন মিড ডে মিলের খরচ বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। পুরোটাই দেখভাল করতেন প্রধান শিক্ষক চন্ডীচরণ ত্রিপাঠী। ৩) কর্তৃপক্ষ দাবি জানিয়েছেন ভর্তি নিয়ে কোনো নিয়ম নেই। এখানে স্কুল কর্তৃপক্ষ মানে কি শুধু প্রধান শিক্ষক? কারণ চন্ডীচরণ ত্রিপাঠী আর কারো সাথে তারা কথা বলেননি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য ২০১৫-১৯, প্রতি বছর অ্যাকাউ অডিট হয়নি। তাহলে দীপকবাবুর তোলা অভিযোগ মিথ্যা ছিল না। তারা জানিয়েছেন ২০১৮ সালের ২০ আগষ্ট স্কুলে একটি বৈঠক অভিভাবকদের ডাকা হয়। ২০১ জন অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন। দুই এআইসেই বিষয়ে তাকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলে রিপোর্টে পরিয়ায় নয়। তৎকালীন ডিআই চাপেশ্বর সর্দার (বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুরের একটি স্কুলে একটি মামলায় কারাগারে) সহ জেলা শিক্ষা দফতরের মধ্যে একটি অসাধু গোষ্ঠীর কারণে, সমাজের শাসক গোষ্ঠী তদন্ত চলাকালীনও অবৈধভাবে শিক্ষক ও শিক্ষকতা কর্মীদের নিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল নীপকবাবুর করা তথ্য জানার অধিকার আইনের আওতায় করা আবেদনের ভিত্তিতে ডিআই দীপকবাবুকে জানালেন (মেমো নং (৭৯৮-৮), তারা কমিশনার অব স্কুল এডুকেশনকে যে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়েছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো চূড়ান্ত ফল আসেনি। দীপকবাবু জানিয়েছেন তিনি তাদের অভিযোগ সিবিআইয়ের কাছেও রাখবেন কিনা সেই বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন।আরটিআই আবেদনের ভিত্তিতে চন্ডীবাবু যে জবাব পাঠিয়েছেন তা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। প্রায় ৭টা বছর কেটে গেলো কিন্তু সমাধান কিছু ই হলো না। ফলে বিদ্যালয় স্তরে শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম অরাজকতা ফিরে এসেছে।
এদিকে জেলা শাসকের কাছে অভিযোগ জানানোর পরেও কোনো জবাব দীর্ঘদিন না পেয়ে জেলা পাবলিক গ্রিভ্যান্স সেল অভিযোগ জানান দীপকবাবু। গ্রিভ্যান্স সেল স্কুল শিক্ষা দফতরের জবাব তলব করে। কিছুদিন পরে তারা জানায় ফাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানায় । পরিস্থিতি জটিল হতে পারে এটা অনুমান করে তারা পরে জানায় ফাইল পাওয়া গিয়েছে কিন্তু তার মধ্যে কাগজপত্র উধাও। সরকারী দফতর থেকে নথি উধাও হয়ে গেল কিন্তু র-টি-আই কোনো অভিযোগ দায়ের করলেন না। অর্থাৎ প্রমাণিত হল এইভাবে ফাইল গুলো লোপাট করেই দুর্নীতি চাপা দেওয়া হয় স্কুল শিক্ষা দপ্তরে।গ্রিভ্যান্স সেলের বক্তব্য, আমরা স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে উত্তর পাওয়ায় অপেক্ষায় বসে আছি। তারা স্বীকার করেন যেভাবে নজরদারি চালানো উচিত ছিল তারা স্কুল শিক্ষা দফতরের উপর সেইভাবে নজরদারি চালাতে পারেননি। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার অভিযোগের মধ্যে নিমপুরা আর্য বিদ্যাপীঠের কেন তলিয়ে গিয়েছে।তার মানে কি স্কুল শিক্ষা দপ্তরে এই দুর্নীতির মামলার যুতো? যার পূর্ণ সুযোগ নিয়েছে স্কুল ও শিক্ষা দপ্তর।