নিজস্ব প্রতিবেদন : ২৬/১১, পশ্চিমী বিশ্বকে বাধ্য করেছিল সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতের দিকে নজর দিতে। একইসঙ্গে, ভারতকে বুঝিয়ে দিয়েছিল, জঙ্গি মোকাবিলায় তার আরও প্রস্তুতি দরকার। লস্কর-ই-তইবা (LeT)-র ১০ সশস্ত্র জঙ্গি ২৬/১১-য় আরব সাগর পেরিয়ে করাচি থেকে মুম্বই এসেছিল। টানা চার দিন ধরে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীতে তাণ্ডব চালিয়েছিল। ভারতের সামুদ্রিক নিরাপত্তার অভাব স্পষ্ট করেছিল। এরপরই সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সেই সব অভাব দূর করতে উদ্যোগী হয়। পরিকাঠামো, পুলিশকর্মীদের অভাব পূরণ করে। গোয়েন্দা বাহিনীকে ঢেলে সাজায়। সন্ত্রাস মোকাবিলায় আইনি কাঠামো শক্তিশালী করে। সন্ত্রাসের মামলার তদন্তে বিশেষ সংস্থা গড়ে তোলে।২৬/১১-র পরে, ভারতীয় নৌবাহিনীকে সামুদ্রিক নিরাপত্তার সামগ্রিক দায়িত্ব দেওয়া হয়। ভারতীয় কোস্ট গার্ডকে আঞ্চলিক জলসীমার জন্য এবং ভারতের উপকূলরেখা বরাবর কয়েকশো নতুন সামুদ্রিক থানার সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সরকার ২০ মিটারের বেশি লম্বা সমস্ত জাহাজের জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (AIS) বাধ্যতামূলক করে। যা ওই জাহাজের শনাক্তকরণ করতে এবং ওই জাহাজ সম্পর্কে অন্যান্য তথ্য পাঠাতে সাহায্য করবে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ৩০০ টনের বেশি ওজনের সব জাহাজের ক্ষেত্রে এই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (IB’s), মাল্টি এজেন্সি সেন্টার (MAC)-কে শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর প্রাথমিক কাজ হল কেন্দ্রীয় সংস্থা, সশস্ত্র বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ে সমন্বয় করা। সাবসিডিয়ারি MAC গুলোর মধ্যে যেগুলো বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোকে পুনরায় চালু করা হয়েছে। সঠিক সময়ে তথ্য বিনিময় এবং বিশ্লেষণের জন্য নিয়মিত এজেন্সিগুলোর প্রতিনিধিদের বৈঠক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই বৈঠক এখন দৈনিক হচ্ছে। এই সব বৈঠকে এখন নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়। সেটা আর শুধু তথ্য বিনিময়ের মধ্যেই আটকে নেই। এমনটাই জানিয়েছেন এক উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা আধিকারিক।সন্ত্রাসবাদ দূর করতেই বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) করা হয়েছে। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) তৈরি হয়েছে। যা দেশের প্রথম যুক্তরাষ্ট্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘যদি ২৬/১১ হামলা না-হত, কেন্দ্রীয় সরকার কখনও এমন একটি আইন তৈরি করত না। এই আইনে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে রাষ্ট্রে ঘটা যে কোনও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে।’ আগের ইউপিএ সরকার ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার তৈরি করেছিল। কিন্তু, বর্তমান সময়ের মত কোনও সন্ত্রাস প্রতিরোধক ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেনি।