Skip to content

“ভারতের ফুটবলে নতুন ভোর?” — জাতীয় শিবিরে রায়ান উইলিয়ামস ও অবনীত ভারতী, বদলে যেতে পারে ভারতীয় ফুটবলের চেহারা!

নিজস্ব সংবাদদাতা : ভারতের ফুটবল দুনিয়ায় নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে — এমনটাই মনে করছেন ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সাধারণ সমর্থকেরাও। জাতীয় শিবিরে ডাক পেয়েছেন দুই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ফুটবলার, রায়ান উইলিয়ামস এবং অবনীত ভারতী। বিদেশে বেড়ে ওঠা এই দুই প্রতিভা এবার ভারতের জার্সি গায়ে চাপানোর অপেক্ষায়।বছরের পর বছর ধরে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছে, বিদেশে খেলা ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণদের জাতীয় দলে টেনে আনতে। অবশেষে সেই প্রচেষ্টার ফল মিলেছে। রায়ান উইলিয়ামস অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে ওঠা এক আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার, যিনি প্রিমিয়ার লিগের বিভিন্ন স্তরে খেলেছেন। অন্যদিকে অবনীত ভারতী জার্মানির ক্লাব সার্কিটে ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছেন তাঁর গতি ও বল কন্ট্রোলে। জার্মানির ১৮৬০ মিউনিখ, এফএসভি ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং ডার্মস্ট্যাড ৯৮ ক্লাবের হয়ে অনুশীলন করেন।

রায়ান উইলিয়ামস।

অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন তারকা ফুটবলার রায়ান উইলিয়ামস যেন ঘরে ফিরছেন। তাঁর শিকড় মুম্বইয়ের মাটিতে— দাদু লিঙ্কন গ্রস্টেট ছিলেন টাটাদের দলে খেলা এক বিখ্যাত ফুটবলার, যিনি সন্তোষ ট্রফিতেও অংশ নিয়েছিলেন। দাদুর সেই স্বপ্নই রায়ানের জীবনের পথ দেখিয়েছে। রায়ান বলেন, “আমার দাদু সবসময় বলতেন, ‘ভারতের হয়ে খেলো।’ ভারতের পাসপোর্ট পাওয়া কঠিন ছিল, কিন্তু ভারতের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল সবচেয়ে সহজ।” অস্ট্রেলিয়ার ECU Joondalup থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের Fulham, Portsmouth, Oxford United, Rotherham United — এক দশকের ইউরোপীয় অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। ২০২২-এ ফিরে যান অস্ট্রেলিয়ায়, যোগ দেন Perth Glory-তে। এরপর ২০২3-এ ভারতের Bengaluru FC-র জার্সি গায়ে চাপান এবং সুনীল ছেত্রীর সঙ্গে তাঁর রসায়ন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে। ছেত্রীর পরামর্শেই রায়ান অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব ত্যাগ করে ভারতের পাসপোর্ট নিয়েছেন— যেন দাদুর ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে ঘরে ফেরা সম্পূর্ণ করলেন।

অবনীত ভারতী।

অবনীত ভারতীর গল্প যেন সিনেমার মতো। জন্ম কাঠমাণ্ডুতে, শৈশব রোমে, কৈশোর নাইজেরিয়ায়— আর ফুটবলের প্রেম শুরু সেখানেই। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন, জীবনে একটাই লক্ষ্য— ফুটবল।
নাইজেরিয়ার স্কুল লিগে গোলকিপার হিসেবে শুরু করে দিল্লিতে এসে নতুন দিগন্ত খুলে ফেলেন। শাস্ত্রী এফসি-র হয়ে খেলতে খেলতেই জায়গা পান দিল্লির যুব দলে ও ভারতের অনূর্ধ্ব-১৬ দলে। ২০১২-তে তিনি পাড়ি দেন সিঙ্গাপুরের Gelong International Academy-তে, তারপর স্পেনের Real Valladolid যুব দলে যোগ দিয়ে মুগ্ধ করেন কোচদের। তাঁর রক্ষণাত্মক দক্ষতা নজর কাড়ে জার্মানির Eintracht Frankfurt, 1860 MunichDarmstadt 98 ক্লাবের স্কাউটদের। ২০১৫ সালে পোল্যান্ডের Podbeskidzie Bielsko-Biała ক্লাবের সঙ্গে প্রথম পেশাদার চুক্তি করেন — যা দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে বিরল ঘটনা। এরপর খেলেছেন Sintrense (Portugal), Kerala Blasters (India), এবং আরও বহু দেশে— Czech Republic, Kyrgyzstan, Panama, Argentina। বর্তমানে তিনি বলিভিয়ার Academia del Balompié Boliviano-তে খেলছেন। তাঁর বহু বছরের স্বপ্ন— ভারতের হয়ে খেলা— অবশেষে পূরণ হতে চলেছে। ফুটবল মহলে এখন বড় প্রশ্ন — ভারতে খেলা বিদেশি ফুটবলারদের তুলনায় কি রায়ান ও অবনীত আরও কার্যকর হবেন? ভারতীয় ফুটবলের বর্তমান মানদণ্ডে তাঁদের পারফরম্যান্স কেমন হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়। তবে অনেকেই মনে করছেন, এই উদ্যোগই ভবিষ্যতে ভারতীয় ফুটবলের মান উন্নয়নের পথে নতুন দরজা খুলে দেবে। এক প্রাক্তন জাতীয় কোচের কথায়, “যদি এই ছেলেরা সত্যিই নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে, তাহলে ভারতের ফুটবলে এক নতুন যুগের সূচনা হবেই। দেশজুড়ে তরুণরা আরও অনুপ্রাণিত হবে বিদেশে গিয়ে নিজের দক্ষতা বাড়াতে।” রায়ান ও ভারতীর অন্তর্ভুক্তি ভারতের ফুটবলে শুধু আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতা নয়, নতুন চিন্তাধারার সূচনাও। বিদেশে বেড়ে ওঠা এই দুই ফুটবলার তাঁদের অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ ভারতীয় দলে এনে দিতে পারেন এক অন্য মাত্রা।

Latest