Skip to content

বাংলাদেশে জনপ্রিয় দৈনিক আমার দেশ সম্পাদকের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় পড়ুয়ারা, ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম!

ঢাকা, জাকির হোসেন: বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে তার সরকারের নির্দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া তুমুল পাঠকপ্রিয় ও প্রভাবশালী দৈনিক পত্রিকা আমার দেশ এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে হাসিনার আমলে করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অনতিবিলম্বে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চ। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করে সংগঠনটি। মানববন্ধন থেকে ৪৮ ঘণ্টার এই আলটিমেটাম দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল নিজে উদ্যোগ নিয়ে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির ব্যবস্থা না করলে তাঁর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও দেশজুড়ে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। সেসময় আন্দোলনকারীদের, ‘সাহসের অপর নাম, মাহমুদুর রহমান’, ‘মাহমুদ ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘জেলের তালা ভাঙবো, মাহমুদ ভাইকে আনবো’, 'মাহমুদ ভাই ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই' সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়৷ মানববন্ধনে ইনকিলাব মঞ্চের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা। জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, 'আজ সারাদেশের মানুষের মধ্যে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছে, সেই ঘৃণার জন্ম দিয়েছেন মাহমুদুর রহমান। আমার দেশ পত্রিকায় একবার আমরা আদালতের বিষয় নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলাম। সেজন্য আদালতের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। সেসময় ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম সহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা তাঁকে (মাহমুদুর রহমানকে) ক্ষমা চাইতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি বলেছিলেন, আমরা কোনো অসত্য রিপোর্ট করিনি। সুতরাং ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনিই সবার প্রথমে শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিবাদী বলতে সাহস করেছিলেন, আর আজ তাঁকেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে।' আমার দেশ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী বলেন, 'মাহমুদুর রহমান সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে আধিপত্যবাদীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছেন৷ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে সাহস জুগিয়ে এসেছেন। আইন মান্যকারী ব্যক্তি হিসেবে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি, অনেকেই কারাগারে না গিয়েও জামিন পেয়ে বাড়িতে বসে জীবন উপভোগ করছেন৷ কিন্তু মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটেছে। এর আইনগত ব্যাখ্যা যা-ই থাকুক না কেনো, শেখ হাসিনা সরকারের যে আইন, স্বৈরাচারী সরকারের যে রায়- গণঅভ্যুত্থানের পর এগুলো আর চলতে পারে না।' তিনি আরও বলেন, 'স্বৈরাচারী সরকারের মদদে মাহমুদুর রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঢাকার সাতরাস্তা ও কুষ্টিয়ায় হামলা করা হয়েছিল। এরপর তাঁকে বাধ্য হয় দেশের বাইরে নির্বাসনে যেতে৷ এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তিনি ফিরে এসে আত্মসমর্পণ করলে তাঁকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। মাহমুদুর রহমানকে যদি মুক্তি না দেওয়া হয়, তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করা হবে৷' সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনিরুজ্জামান বলেন, 'মাহমুদুর রহমান যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন সেই ফ্যাসিবাদের মিথ্যা মামলায় আজ তাঁকে জেলে যেতে হয়েছে। তিনি যখন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি শুরু করলেন তখনই রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে তাকে হয়রানি করা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন যখন তিনি কুষ্টিয়ায় মামলার হাজিরা দিতে যান তখন কীভাবে তাঁর ওপর হাসিনার সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷' তিনি আরও বলেন, 'ফ্যাসিবাদের পতনের পর মাহমুদুর রহমান যখন বীরের বেশে দেশে ফিরে এসে আত্মসমর্পণ করেন তখন তাকে জেলে পাঠায়। এই স্বাধীন বাংলাদেশে আদালতের এমন সিদ্ধান্তে আমরা খুবই আশাহত। এটা তাঁর প্রতি অন্যায়। আদালত চাইলে ওঁনাকে মুক্তি দিতে পারত এবং মামলায় খালাস দিতে পারত৷ কিন্তু আদালত তা করেনি৷' ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ফাতিমা তাসনিম বলেন, 'যারা ফ্যাসিবাদের দোসর ছিল তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি, উল্টো যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সদা জাগ্রত ছিল তাদের জেলে পাঠানো হচ্ছে। এটা স্বাধীন বাংলাদেশে লজ্জাজনক দৃষ্টান্ত।' মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনোয়ার ঠাকুর, কবি ও অণুজীববিজ্ঞানী ইরফান রহমান, জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষে আতিক মুজাহিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাসুদুর রহমান প্রমুখ৷ কর্মসূচি ঘোষণা করে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদী বলেন, 'আমরা আলটিমেটাম দিচ্ছি, যেসব সন্ত্রাসী ২০১৮ সালে কুষ্টিয়ায় মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা করেছিল শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করতে হবে। যে পুলিশ কর্তা মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে চার্জশিট লিখে পদোন্নতি পেয়েছিলেন তাকেও গ্রেফতার করতে হবে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল স্যার নিজে উদ্যোগ নিয়ে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যত অন্যায়, মিথ্যা, প্রহসনমূলক মামলা করা হয়েছে, সব মামলায় যেহেতু সরকার বাদী, সুতরাং অনতিবিলম্বে সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।' তিনি বলেন, 'আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার মাহমুদুর রহমানের মামলা নিয়ে কী করবে তা যদি না জানায়, তাহলে আমরা আর রাজু ভাস্কর্যে দাঁড়াবো না। আমরা আইন উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করবো৷ প্রয়োজনে প্রতিটা মানুষ রক্তাক্ত হবো, তবু মাহমুদুর রহমানকে মুক্ত না করে আমরা ঘরে ফিরবো না।'

উল্লেখ্য, ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক ও বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের’ মামলায় মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) শুনানি শেষে এই আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মাহাবুবুল হক। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন মাহমুদুর রহমান৷ স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের সমালোচনা করে ওই সরকারের বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনি৷ এরই রেশ ধরে একের পর এক মিথ্যা মামলা ও সাজা দিয়ে এই সাংবাদিককে হয়রানি করার চেষ্টা করেছিল হাসিনা সরকার৷ এমনকি ২০১৮ সালের জুলাইতে কুষ্টিয়ায় একটি মানহানি মামলায় জামিন নিতে গিয়ে হাসিনার আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ও বিশ্বে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন মাহমুদুর রহমান। তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে ছাত্রলীগ৷ ওই হামলায় তাঁর মাথা ও মুখ ব্যাপকভাবে জখম হয়। এ ছাড়া তাঁকে বহনকারী গাড়িটি ভেঙে দেয় হামলাকারীরা। পরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে সেদিন আদালত চত্বর ছেড়ে যেতে সমর্থ হন মাহমুদুর রহমান৷ ওই হামলায় কুষ্টিয়ার তৎকালীন প্রশাসনও ছাত্রলীগকে সহায়তা করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে৷ এই ঘটনার পরে মাহমুদুর রহমান প্রবাসে চলে যান৷ সেখানেই নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত শুক্রবার স্বদেশে ফেরেন এই সাংবাদিক৷ এরপর হাসিনা সরকারের আমলে দেওয়া মামলার রায়ে গত রোববার ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর কারাগারে যেতে হল তাঁকে৷ মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে নেওয়ার পর থেকেই ফুঁসে উঠেছে বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের পেশাজীবী ও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা৷ ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম সহ দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন হচ্ছে৷ এরই পথ ধরে তাঁর মুক্তির দাবিতে এবার ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম এলো৷

Latest