নিজস্ব সংবাদদাতা : মহিলাদের এক দিনের বিশ্বকাপে বল হাতে নজর কাড়ছেন মারুফা আক্তার। দারিদ্র আর সংগ্রামের মধ্যেই বড় হওয়া মেয়েটি আজ বাংলাদেশের ক্রিকেটের গর্ব। করোনা কালে ক্রিকেট বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল একটি ছবি। বলদের বদলে হাল টানছেন একটি মেয়ে। কাদা ভর্তি চাষের জমিতে বাবাকে কাজে সাহায্য করছে সে। একসময় যিনি পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাষের জমিতে হাল টানতেন, সেই মারুফা আক্তার আজ বিশ্বকাপের মঞ্চে দেশের জার্সি গায়ে লড়ছেন সারা বিশ্বের সেরা ব্যাটারদের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের এই জোরে বোলার নিজের অনবদ্য পারফরম্যান্সে ইতিমধ্যেই ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছেন। সম্প্রতি তাঁর বোলিং দেখে মুগ্ধ হয়েছেন শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি পেসার লসিথ মালিঙ্গা। মারুফার পরিশ্রম ও নিষ্ঠাকে তিনি তুলনা করেছেন আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে। তবে এই সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে আছে কঠিন এক বাস্তবতার গল্প।

এক সাক্ষাৎকারে নিজের অতীতের কথা বলতে গিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি মারুফা। তিনি বলেন, ‘‘আমার বাবা কৃষক। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। যে গ্রামে বড় হয়েছি, সেখানকার লোকজনকেও আমরা সে ভাবে পাশে পাই না। বেশির ভাগ মানুষই আমাদের কোনও অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করেন না। কারণ ভাল জামাকাপড় নেই আমাদের। কোথাও গেলেও আমাদের সম্মান থাকে না। একটা সময় ইদে নতুন জামা কেনার মতো টাকাও ছিল না আমাদের।’’ কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছেন মারুফা। আজ সেই মেয়েই বাংলাদেশের স্বপ্ন বহন করছেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। তাঁর বোলিং স্পেল দেখে যেমন ক্রিকেটবোদ্ধারা মুগ্ধ, তেমনই দেশের কোটি তরুণীর কাছে তিনি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) মারুফার পারফরম্যান্সে গর্বিত। তাঁদের বক্তব্য, “মারুফা দেখিয়ে দিয়েছেন, প্রতিভা আর পরিশ্রম থাকলে দারিদ্র কোনও বাধা নয়।” চাষের জমি থেকে বিশ্বকাপের মাঠ—মারুফার জীবনের এই যাত্রা যেন প্রমাণ করে, স্বপ্ন যদি সত্যি করে দেখতে জানো, তবে মাটির গন্ধ থেকেও উঠতে পারে বিশ্বজয়ের গল্প।
