Skip to content

শুভেন্দুর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ কাঁথির শিক্ষকের, রাজনীতিতে তোলপাড়!

1 min read

নিজস্ব সংবাদদাতা : রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এবার গুরুতর আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে তোলপাড় পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি। এক প্রাথমিক শিক্ষক অনিমেষ গিরির অভিযোগ, নার্সিং কলেজ গড়ে তোলা থেকে শুরু করে সাংসদ বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে কয়েক দফায় তাঁর কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা নিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। অথচ প্রতিশ্রুতির কোনওটাই পূরণ হয়নি। টাকা ফেরত চাইতেই মিলছে হুমকি— এমনই বিস্ফোরক দাবি অভিযোগকারীর। সংবাদমাধ্যমকে অনিমেষ জানান, ঘটনার সূত্রপাত ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে। কাঁথির বাসিন্দা অনিমেষ পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক, পাশাপাশি স্বয়ংসেবক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত। শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয়। উদ্দেশ্য ছিল জনহিতকর একটি নার্সিং কলেজ গড়ে তোলা। অভিযোগ, সেই আলোচনার মাঝেই শুভেন্দু তাঁকে সক্রিয় রাজনীতিতে আসার প্রস্তাব দেন। প্রথমে কাঁথি পুরসভার ভোটে প্রার্থী, পরে সাংসদ করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। অনিমেষের দাবি, তাঁর দাদা বিদেশে ওষুধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। সেই সূত্রেই আর্থিকভাবে সব দিক বিবেচনা করে কয়েক দফায় মোট আড়াই কোটি টাকা শুভেন্দুকে দেওয়া হয়। অভিযোগ, প্রথমে ৫০ লক্ষ টাকা ফেরত দেওয়া হলেও বাকি বিপুল অর্থ আর ফেরত দেওয়া হয়নি। উল্টে তাঁকে বলা হয়েছে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হলে টাকা মেটানো যাবে।’’ অভিযোগকারী আরও জানিয়েছেন, টাকা ফেরত চাইলে নিয়মিত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে ‘তৃণমূলের লোক’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ। তাঁর দাবি, নিজেদের জমি বিক্রি করেই এই টাকা জোগাড় করেছিলেন। এখন সেই বিশ্বাস ভেঙে যাওয়ায় প্রকাশ্যে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন তিনি। এতেই থামেননি অনিমেষ। আগামী জানুয়ারি মাসে শুভেন্দুর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। নবান্নে অভিযোগ জানানো এবং তাঁর মতো আরও প্রতারিত মানুষকে একজোট করার কথাও ঘোষণা করেছেন।

শুধু তাই নয়, রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যকে চিঠি লিখে পুরো বিষয়টি জানিয়েছেন অভিযোগকারী। চিঠিতে তাঁর দাবি, পরিবারের সদস্যদের রেল ও প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছিল। কাজ না হওয়ায় ৫০ লক্ষ ফেরত দেওয়া হলেও বাকি ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা আজও ফেরত পাননি তিনি। সাড়ে তিন বছর ধরে অপেক্ষার পর বাধ্য হয়েই নেতৃত্বের দ্বারস্থ হয়েছেন। অনিমেষ আরও দাবি করেছেন, তিনি বিজেপির বুথ সভাপতি থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, এমনকি আরএসএস নেতৃত্বকেও বিষয়টি জানিয়েছেন। সঙ্ঘের তরফে টাকা ফেরতের নির্দেশ এলেও বাস্তবে কোনও ফল হয়নি। উল্টে চিঠিতে তিনি নিজের ও পরিবারের প্রাণসংশয়ের কথাও উল্লেখ করেছেন। এই অভিযোগকে হাতিয়ার করে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে। সমাজমাধ্যমে অভিযোগপত্র পোস্ট করে তৃণমূলের কটাক্ষ, “শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটাই বিজেপির ‘বাংলা-বিরোধী’ মডেলের আসল চেহারা— টাকা লুট করে তারপর নিজেদের লোকদের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা।” অন্য দিকে, শুভেন্দু অধিকারীর তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তাঁর দাবি, ভোটের মুখে তৃণমূলের প্ররোচনায় ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা চলছে। একজন প্রাথমিক শিক্ষক এত টাকা কোথায় পাবেন, সেই প্রশ্নও তুলছেন শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠেরা। ভোটের আবহে এই অভিযোগ রাজ্য রাজনীতিতে কতটা ঝড় তোলে, তা বলবে সময়। তবে এক প্রাথমিক শিক্ষকের তোলা এই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই বিজেপির অন্দরেই অস্বস্তি বাড়িয়েছে— এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Latest