ঢাকা জাকির হোসেন : তাপমাত্রার পারদ ৫১ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। সঙ্গে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। সেই গরমে প্রচুর মানুষের সমাগম। যার জেরে সৌদি আরবে এবারের পবিত্র হজ মৌসুমে অন্তত সাড়ে পাঁচ'শ হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন মিসরের হজযাত্রী। সৌদি পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বছর ১৮ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ হজ করেছেন। তাদের মধ্যে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩১০ জন বিদেশি এবং ২ লাখ ২১ হাজার ৮৫৪ জন সৌদি ও প্রবাসী নাগরিক। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, এবার হাজিদের মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৫৮ হাজার ১৩৭ জন এবং নারী ৮ লাখ ৭৫ হাজার ২৭ জন। আরব দেশ ছাড়া এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে এবার সবচেয়ে বেশি মানুষ হজ করেছেন। এই সংখ্যাটা ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে সবচেয়ে কম মানুষ এসেছে ইউরোপ, আমেরিকা, ও অস্ট্রেলিয়া থেকে। তাদের সংখ্যা ৩ দশমিক ২ শতাংশ৷ এত ভিড় এবং গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকেই। দ্রুত তাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হিট স্ট্রোকজনিত কারণেই মৃত্যু হচ্ছে বলে সে দেশের হাসপাতালগুলির সূত্রে দাবি করা হয়েছে। তীব্র গরমের পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে হজযাত্রীদের নানা রকম পরামর্শও দিচ্ছে সৌদি আরবের প্রশাসন। হজযাত্রীদের সতর্ক করার জন্য মাইকে ঘোষণাও করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়।
সংশ্লিষ্ট অন্তত দুজন আরব কূটনীতিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, মারা যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে মিসরের অন্তত ৩২৩ জন আছেন। তাঁদের অধিকাংশই প্রচণ্ড গরমে অসুস্থতার কারণে মারা গেছেন। একজন কূটনীতিক বলেন, মিসরের যেসব হজযাত্রী মারা গেছেন, তাঁদের প্রায় সবাই প্রচণ্ড গরমের কারণে অসুস্থ হয়েছিলেন। একজন সামান্য ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, মারা যাওয়া হজযাত্রীর মোট সংখ্যা মক্কার পার্শ্ববর্তী আল-মুয়াইসেম এলাকার মর্গ থেকে পাওয়া।
কূটনীতিকেরা আরও জানান, মারা যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে জর্ডানের অন্তত ৬০ জন নাগরিক আছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার জর্ডান জানিয়েছিল, এবারের হজে তাঁদের ৪১ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।
তবে বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে জানানো তথ্য সমন্বয় করে এএফপি বলছে, এবারের পবিত্র হজে গিয়ে মোট ৫৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে এখন অবধি বাংলাদেশি মোট ২১ জন হজযাত্রী মারা গেলেন। ১৯ জুন বুধবার হজ পোর্টালে আইটি হেল্পডেস্কের প্রতিদিনের বুলেটিন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
হজ শেষে ২০ জুন বৃহস্পতিবার থেকে দেশে ফেরার ফ্লাইট শুরু হবে বলে বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রক থেকে জানা গেছে। ১৮ জুন মঙ্গলবার রাত ৩টা পর্যন্ত বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবে মোট ২১ বাংলাদেশি হজযাত্রী মারা গেছেন। সর্বশেষ তোফাজ্জল হক (৭০) নামে একজন হজযাত্রী মারা গেছেন। মারা যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে পুরুষ ১৮ জন, নারী ৩ জন। মক্কায় ১৬ জন, মদিনায় ৪ জন ও জেদ্দায় একজন মারা গেছেন।
গেলো ১৫ জুন শনিবার এবারের হজ অনুষ্ঠিত হয়। ১২ জিলহজ জামারায় পাথর নিক্ষেপ করার শেষ দিন, হাজিরা পর্যায়ক্রমে ছোট, মধ্যম এবং বড় জামারায় পাথর নিক্ষেপ করার মধ্য দিয়ে শেষ করেন হজের আনুষ্ঠানিকতা। হাজি সাহেবরা ১৮ জুন মঙ্গলবার সূর্যাস্তের আগেই মিনা ত্যাগ করে মক্কায় ফিরে এসেছেন বলে বুলেটিনে জানানো হয়েছে।
এবার বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট ৮৫ হাজার ২২৫ জন (ব্যবস্থাপনা সদস্যসহ) হজযাত্রী সৌদি আরবে গেছেন। ৯ মে থেকে ১২ জুন পর্যন্ত সৌদি আরব যাওয়ার ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে ২১৮টি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পরিচালিত ফ্লাইট সংখ্যা ১০৬টি, সৌদি এয়ারলাইনস পরিচালিত ফ্লাইট ৭৫টি ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস পরিচালিত ফ্লাইট ৩৭টি।
হজ শেষে ২০ জুন বৃহস্পতিবার দেশে ফেরার ফ্লাইট শুরু হবে। ফিরতি ফ্লাইট শেষ হবে আগামী ২২ জুলাই। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস অর্ধেক হজযাত্রী পরিবহন করবে। বাকি অর্ধেক পরিবহন করবে সৌদি এয়ারলাইনস ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস।
সৌদি আরবে এবারের হজের সময় বেশ গরম পড়েছে। দেশটির আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য, গত ১৭ জুন সোমবার মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ এলাকার তাপমাত্রা ৫১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল।
গত বছর পবিত্র হজ মৌসুমে সৌদি আরবে অন্তত ২৪০ জন হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। তাঁদের বেশির ভাগ ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক ছিলেন।