Skip to content

টাফ ফাইট হতে চলেছে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে!

পশ্চিম মেদিনীপুর নিজস্ব সংবাদদাতা: রাত পোহালেই ষষ্ঠ দফার নির্বাচন। এবার টাফ ফাইট হতে চলেছে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে। শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতে লোকসভা নির্বাচন। তৃণমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জুন মালিয়া, বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অগ্নিমিত্রা পাল আর বামপন্থীদের পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিপ্লব ভট্ট। লালদুর্গ হিসেবেই পরিচিত ছিল মেদিনীপুর। সিপিআই-এর শক্তঘাঁটি ছিল এই এলাকা। তবে সাতের দশকের আগে এই কেন্দ্রের কংগ্রেসও রাজত্ব করেছে। ১৯৫২-র প্রথম নির্বাচনে গোটা দেশের মতোই এখানে জিতেছিল কংগ্রেস। ১৯৫৭-৬২, ১৯৬২-৬৭, ১৯৬৭-৬৯ কংগ্রেসেরই দখলে ছিল আসনটি। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দখলে রেখেছিল কংগ্রেস। কিন্তু সে বছরের নির্বাচনে জনতা দল জয়লাভ করে। এর পর পালাবদল হয়ে এই কেন্দ্রে লালদুর্গ হয়ে ওঠে। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রটি ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সিপিআই-র দখলে ছিল। এই কেন্দ্র থেকেই নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রয়াত নারায়ণ চৌবে এবং প্রয়াত ইন্দ্রজিৎ গুপ্তের মতো প্রার্থীরা। ২০০৯ সালে যখন একের পর এক কেন্দ্র তৃণমূলের দখলে যাচ্ছে তখন সিপিআই-র প্রবোধ পান্ডা মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫০ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে এই কেন্দ্রের সমীকরণ বদলে যায়। তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হন অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। ২০১৯ সালে মেদিনীপুর থেকে জয়ী হন দিলীপ ঘোষ। রাজনৈতিক মহল বলছে, গ্রামের সাধারণ মানুষের মন যে দলের প্রার্থী জয় করতে পারবেন তিনিই শেষ হাসি হাসবেন এই মেদিনীপুরে। প্রায়  ১৫ লক্ষ ভোটার থাকা মেদিনীপুরের বেশিরভাগ মানুষই কৃষিনির্ভর। কৃষিজমির পাশাপাশি রয়েছে আইআইটি খড়গপুরের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নতুন করে গড়ে উঠছে শিল্পতালুক। খড়গপুরে বিভিন্ন রাজ্যের মানুষের বাস। দক্ষিণের একাধিক রাজ্য়ের মানুষ এই এলাকায় আস্তানা গেড়েছে। ফলে এই এলাকা ছাড়া আছে ভারতীয় বায়ুসেনার কলাইকুন্ডা এয়ারবেস। খড়গপুরে রয়েছে প্রচুর রেল কলোনি। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরে ৬টি ও পূর্ব মেদিনীপুরের একটি বিধানসভা নিয়ে ১৯৫২ সালে গঠিত হয় এই লোকসভা কেন্দ্র। মেদিনীপুর,খড়গপুর,দাঁতন,কেশিয়ারি,খড়গপুর সদর,নারায়ণগড়,এগরা (পূর্ব মেদিনীপুর) মোট ভোটার প্রায় ১৫ লক্ষ। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটার। ৩০-৩৫ রয়েছে আদিবাসী, তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতির ভোটার। অর্থাৎ এই কেন্দ্রে ভোটের নির্ণায়ক হবে। টলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী হলেন জুন মালিয়া। ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দা সর্বত্রই তিনি দাপিয়ে কাজ করেছেন ও করে চলেছেন। একই সঙ্গে তিনি মন দিয়ে রাজনীতিটাও করছেন। মডেল, অভিনেত্রী, রাজনীতিক, বিধায়ক… একই অঙ্গে বহুরূপ জুন মালিয়ার। জীবনে যেমন স্ট্রাগলের দিন দেখে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করা শিখেছেন, তেমন বর্তমানে নির্বাচনী ময়দানেও দাপুটে নেত্রী হয়ে উঠেছেন জুন মালিয়া।বিধায়ক হওয়ার পর এখন এমপি হওয়ার লড়াই। স্থানীয় রাজনীতিতে যিনি দিদি অনুগামী হিসেবেই পরিচিত। সবটাই যেন পুনঃসম্প্রচার। স্কুটি করে ঘোরা। মন্দির, মসজিদ, গির্জায় প্রার্থনা। কোথাও কোনওকিছু এতটুকু আলাদা নয়। তাঁর জন্ম যদিও কলকাতায় হয়েছে, তিনি কিন্তু মহিষাদল রাজপরিবারের মেয়ে। এবার চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে দিদি তাঁর কাঁধে আরও বড় গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন । রাজনীতির ময়দানে তেতেপুড়ে নিত্যদিন তাঁকে প্রচারে দেখা যাচ্ছে স্বমহিমায়। প্রকৃতপক্ষেই জীবনযুদ্ধের এক দুঃসাহসী সৈনিক জুন মালিয়া। এবার মেদিনীপুরের বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন অগ্নিমিত্রা পল। তিনি আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক। এবার গড় পরিবর্তন করে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী জুন মালিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। এদিকে বিজেপির রাজ্য সম্পাদিকা। তিনি একজন প্রাক্তন সুপরিচিত ফ্যাশন ডিজাইনারও। ২০২০ সালেই রাজ্যে মহিলা মোর্চার শীর্ষ দায়িত্বে। আর প্রথমবার নির্বাচনে নেমেই সাফল্য। এখন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের গড়ে এবার পদ্মপ্রার্থী হলেন অগ্নিমিত্রা পাল। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে অগ্নিমিত্রা পালের উপরেই ভরসা রেখেছে বিজেপি শিবির। বাম প্রার্থী হয়েছে সিপিআই-এর বিপ্লব ভট্ট । শ্রমিক নেতা হিসেবে পরিচিত। ফলে কে শেষ হাসি হাসবেন? এখন মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র হবে কার তারই লড়াই।

Latest