নিজস্ব সংবাদদাতা : যোগাযোগের ভিত্তি হল ভাষা। কার্যকরভাবে যোগাযোগ করার জন্য একে অপরের ভাষাকে সম্মান করা, স্বীকার করা এবং বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি কয়েক কিলোমিটারে, উপভাষা পরিবর্তিত হয় এবং ভাষা আলাদা হতে শুরু করে। তাই ভাষাই হল বিশ্বের বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য এবং একে অপরের সাথে সহযোগিতা এবং সংযোগ করার উপায়। সারা দেশে কথিত বিভিন্ন উপভাষার পাশাপাশি ভারতও বিশ্বের ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আন্দোলন কিন্তু ভারতে শুরু হয়নি, শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে।১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে সরকারি ভাষা করার দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলনে চার ছাত্র নিহত হন। ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে, জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (UNESCO) সাধারণ সম্মেলন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে, যা পরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ স্বাগত জানিয়েছিল।১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের সম্মানে এবং শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি এবং যোগাযোগের জন্য মাতৃভাষার গুরুত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। সেই থেকে প্রতিবছর সারা বিশ্বে নানা কর্মকাণ্ড ও অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
জাতিসংঘও এই দিবসটি উদযাপনকে সমর্থন করে এবং এর সদস্য দেশগুলোকে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং বহুভাষিকতার প্রচারে উৎসাহিত করে।বাংলা ভাষা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে ‘গেল গেল’ রব উঠেছে। এটা বাস্তব যে, প্রায় ৩০ কোটি মানুষের মুখের একটা ভাষা রাতারাতি মরে যাবে, এটা হতে পারে না। তবে বাংলার পরিসর এবং ভাষার ভবিষ্যৎ-স্বাস্থ্যের কথা ভাবলে এ কথা মানতে বাধ্য হচ্ছি যে, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে একে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোথাও বড়সড় খামতি থেকে যাচ্ছে। কোনও ভাষার স্বাস্থ্যের পক্ষে এ বড় সুখের খবর নয়।কারণ, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েই আজ সন্তানকে মাতৃভাষা শেখানোর আগে বিদেশি ভাষা শেখাতে উঠেপড়ে লেগেছি আমরা। বাংলার বদলে তার হাতে তুলে দিচ্ছি বিদেশি ভাষার বই। এ অভ্যেস আদতে বর্তমান নাগরিক সমাজেরই অংশ। শুধু কলকাতা নয়, জেলায় জেলায় এই মানসিকতার বিস্তার ঘটেছে।