নিজস্ব সংবাদদাতা : সোমবার কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার গাফিলতি কার? এখন কাঁটাছেঁড়া চলছে তা নিয়েই। এই ঘটনায় আরও একবার চর্চায় ‘কবচ’। এই প্রযুক্তি ট্রেনে থাকলে এড়ানো যেত আজকের ঘটনা। সোমবার সকালের দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৯ জনের (সাত যাত্রী এবং দুই রেলকর্মী) মৃত্যু হয়েছে। আহত কমপক্ষে ৪০ জন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে চলছে তাঁদের চিকিৎসা। উদ্ধারকাজ শেষ হলেও ট্রেন চলাচল পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি।
রেলের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ‘কবচ’ হল মূলত একটি সংঘর্ষবিরোধী প্রযুক্তি। দু’টি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ এর মাধ্যমে এড়ানো যায়। একই লাইনের উপর দু’টি ট্রেনের উপস্থিতি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকেই বুঝতে পারে ‘কবচ’। সেই অনুযায়ী সে আগেভাগে ট্রেনের চালককে সতর্ক করে দেয়। দুটি ট্রেন একই লাইনে চলে এলে ইঞ্জিনে বসানো একটি যন্ত্রের মাধ্যমে অনবরত সিগন্যাল দিতে থাকে ‘কবচ’ (Kavach)। যা চালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, চালককে সতর্ক করার পরও তিনি পদক্ষেপ না করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেলের গতিবেগ কমিয়ে দেয়। দুটি ট্রেনের ধাক্কা লাগার আগেই ব্রেক কষে থামিয়ে দেয়।
রেলবোর্ড সকালেই স্বীকার করেছে, ওই লাইনে ছিল না ‘কবচ’। কবচ ভারতে তৈরি একটি প্রযুক্তি। একই লাইনে দু’টি ট্রেন চললে দুর্ঘটনা এড়াতে সাহায্য করে কবচ। রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান জয়া বর্মা সিংহ এনডিটিভি-কে বলেছেন, ‘‘দিল্লি-গুয়াহাটি রুটে সুরক্ষা ব্যবস্থা বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে রেলের।’’
রেল দুর্ঘটনার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আহতদের দ্রুত সুস্থ কামনা করে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেন তিনি। একই সঙ্গে প্রশাসন এবং রেল কর্তৃপক্ষকে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ দেন। কথা বলেন সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এক্স বার্তায় তিনি একই সঙ্গে লেখেন, ‘‘জেলাশাসক, এসপি, চিকিৎসক এবং অ্যাম্বুল্যান্স ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ হচ্ছে।’
রেলমন্ত্রী জানান, মৃতের পরিবার পিছু ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে রেলের তরফে। একই সঙ্গে গুরুতর আহতদের আড়াই লক্ষ টাকা করে এবং তুলনামূলক কম জখম হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য করা হবে বলেও জানান অশ্বিনী।
রাঙাপানি স্টেশনের স্টেশন মাস্টারের দেওয়া কাগুজে অনুমতি বা ‘টিএ ৯১২’ ফর্মে উল্লেখ ছিল কোন কোন সিগন্যাল ‘ভাঙতে’ পারবেন চালক। এমনকি, কোথা থেকে কোন অবধি এই ‘অনুমতি’ বহাল থাকবে, তারও উল্লেখ ছিল। কাঞ্চনজঙ্ঘার পাশাপাশি মালগাড়ির চালক ও গার্ডের কাছেও ছিল সেই ছাড়পত্র।
সাধারণত, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা খারাপ হয়ে গেলে ওই নির্দেশের ভিত্তিতেই ট্রেন চালিয়ে থাকেন চালক। সিগন্যাল লাল থাকলেও নিয়ন্ত্রিত গতিতে ট্রেন চালাতে পারেন তিনি। নিয়ম অনুযায়ী, কাগুজে সিগন্যালে ট্রেন চালানোর সময় দিনের বেলা দৃশ্যমানতা ঠিক থাকলে প্রতি ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন চালানো যায়। একই সঙ্গে আগের গাড়ির সঙ্গে অন্তত ১৫ মিনিটের দূরত্বে পরের গাড়িকে যেতে হবে। রাতের বেলা বা কুয়াশা থাকলে ওই গতি ১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় রাখতে হবে। সোমবার সকালের দুর্ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, কাগুজে সিগন্যাল পেয়েও নিয়ম মেনেই কি মালগাড়ির চালক ট্রেন চালাচ্ছিলেন?