নিজস্ব প্রতিবেদন : আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ইমার্জেন্সি বিভাগের চার তলায় সেমিনার হল থেকে শুক্রবার সকালে ওই তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতেও অন ডিউটি ছিলেন তিনি। দুই চিকিৎসকের সঙ্গে খাওয়ার পরে রাত ২টো নাগাদ সেমিনার হলে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকের মা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে শেষ বার কথা হয়েছিল মেয়ের সঙ্গে। মৃতা চিকিৎসকের মায়ের কথায়, ‘‘রাত ১১টায় কথা হয়েছে। তখন ওরা খাবার অর্ডার করেছিল। আমায় বলল, তোমরাও খেয়ে নাও। তার পর কোনও কথা হয়নি। ওই শেষ।’’ এর পরেই চিকিৎসকের মা দাবি করেন, তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। বলেন, ‘‘আমার মেয়েটাকে খুন করে ফেলেছে এরা। আমার এই একটা মাত্র মেয়ে। অনেক কষ্ট করে ডাক্তার করেছিলাম। লোকের সেবা করতে এসে নিজে খুন হয়ে গেল।’’
চিকিৎসকের মৃত্যুর পর হাসপাতালে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জুনিয়র ডাক্তারেরা মৃত্যুর প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে মৃতার মা জানিয়েছেন, হাসপাতালে নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর মেয়ে কখনও কিছু বলেননি। অভিযোগ, চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ এই নিয়ে মন্তব্য করেননি। এই প্রসঙ্গে মৃতার মা বলেন, ‘‘আমার মেয়েকে খুন করেছে। ওর মতো ভাল মেয়ে হয় না। অর্ধনগ্ন অবস্থায় পড়ে ছিল দেহ। গায়ে কাপড় ছিল না। চশমাটা ভেঙে গিয়েছিল। মুখে আঘাতের চিহ্ন ছিল। রাতে ও একাই ছিল সেমিনার হলে। ভিতরে কোনও সিসি ক্যামেরা নেই।’’
তরুণীর বাবা জানিয়েছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীও ফোন করে কথা বলেছেন তাঁদের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ফোন করেছেন। তিনি বলেছেন, যতটা পারেন, চেষ্টা করবেন।’’
যদিও এই আশ্বাসে চিকিৎসকের বাবা এবং মা আপাতত স্বস্তি পাচ্ছেন না। তাঁর মায়ের কথায়, ‘‘আমার মেয়েটাকে কেউ ফেরত দিতে পারবেন না। কী করে খুশি হব? আগে বিচার হোক। মেয়ে চলে গেছে। জীবনে খুশি হতে পারব না।’’
ইতিমধ্যেই মৃতা চিকিৎসকের দেহের ময়না তদন্ত হয়েছে।চিকিৎসকের মৃত্যুতে উত্তাল আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ। মৃত্যুর প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে হাসপাতালের রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন। সদস্যেরা জানিয়েছেন, বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে তদন্ত-সহ তাঁদের বাকি দাবি যত ক্ষণ পর্যন্ত মানা হবে না, তত ক্ষণ বন্ধ থাকবে কাজ। শুধু হাসপাতালের জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে। তবে, এতে বিপাকে বহু রোগী ও তাদের পরিবার।
ময়নাতদন্তের পরে মহিলা চিকিৎসকের দেহ কেন পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে না? তা নিয়ে শুক্রবার রাতে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল। ছড়িয়ে পড়ে তুমুল উত্তেজনা। বিক্ষোভকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। চূড়ান্ত ক্ষোভপ্রকাশ করে মৃত চিকিৎসকের পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী বাবা বলেন, ‘জানি না, আমায় মেয়েকে কোথায় নিয়ে গেল? ডেডবডিটা নিয়ে চলে গেল (ওরা)।’ একইসুরে এক বিক্ষোভকারী চিকিৎসক অভিযোগ করেন যে তুমুল ক্ষোভপ্রকাশ করে মৃতদেহ ‘লুঠ’ করে নিয়ে গেল পুলিশ। তদন্ত করতে পুলিশ ‘ভয়’ পাচ্ছে কেন, প্রশ্ন তোলেন বিক্ষোভকারীরা চিকিৎসকরা। যদিও বিষয়টি নিয়ে কলকাতা পুলিশের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।