নিজস্ব প্রতিবেদন : গত ৫ ডিসেম্বর নেতাজি ইন্ডোরে উদ্বধোন হয়েছে ৪৭ তম চলচিত্র উৎসবের। তারকাখচিত সেই মঞ্চে উদ্বোধনীতে গাওয়া হয়েছিল রবীন্দ্র সঙ্গীত। অভিযোগ রবীন্দ্রনাথের সেই গানের শব্দ বিকৃতি করা হয়েছে। আর এই নিয়ে এবার সোচ্চার রাজ্যের লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবিরা।সেই দিন অনুষ্ঠানের মধ্যমণি হয়ে ছিলেন স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেতা অভিনেত্রী বৃন্দ। একাধিক জনপ্রিয় গায়ক গায়িকাও ছিলেন। তাঁদের উপস্থিতিতে রাজ্য সঙ্গীত হিসেবে গাওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'বাংলার মাটি, বাংলার জল' গান কিভাবে বিকৃত করা হল, এনিয়ে প্রতিবাদ-প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের লেখক-শিল্পী সঙ্ঘ।সম্প্রতি এই নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে জেরে এক বিবৃতি জারি করেছে পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘ। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার ও রাজ্য সম্পাদক রজত বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “এই গণতন্ত্রেও আমরা দেখছি রাষ্ট্রশক্তি স্পর্ধার কোনো সীমানা মানে না, উচিত-অনুচিত বোঝে না, নিজেদের নির্বোধ ইচ্ছাকে চূড়ান্ত উৎকৃষ্ট মনে করে। নইলে রবীন্দ্রনাথের গানের কথাকে এইভাবে পরিবর্তন করে তা কোনো সরকারি অনুষ্ঠানে গাওয়ানো সম্ভব তা আমাদের ধারণার অতীত। অথচ কলকাতা চলচিত্র অনুষ্টানে সেটাই ঘটেছে বলে জানলাম, এবং জেনে আমরা স্তম্ভিত ও মর্মাহত।“বিশিষ্ট ভাষাবিদ ও প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক পবিত্র সরকার শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ”মনের মধ্যে এই কথাটাই ঘুরে ফিরে আসছে, রবীন্দ্রনাথের গানের কথা বদলে গাওয়া হয়েছে। তাই একটি লিমেরিক–
তুমি বাঙালি
তুমি যে বাঙালি খুব সুখে আছ, মুখে নিয়ে পান-জর্দা ;
মাথা নীচু করে, হাঁটু গেড়ে বসে প্রসাদে তৃপ্ত, বড়দা !
এদিকে তোমার রবীন্দ্রনাথ
আনাড়ির হাতে হন চিতপাত,
গানের কথাকে বদলে দিচ্ছে, সয়ে যাবে এই স্পর্ধা?“
রবীন্দ্রগানের এই বিকৃতিতে সংস্কৃতি জগৎ বা সারস্বত সমাজের বিশিষ্টরাও হতাশ। প্রবীণ অধ্যাপক তথা অর্থনীতিবিদ সৌরীন ভট্টাচার্য বলছেন, “গানের কথা পাল্টালে তো তা রবীন্দ্রনাথের গান থাকে না!” এই রাজ্য সঙ্গীতের সাংবিধানিক গুরুত্ব বা অস্তিত্ব নিয়ে তাঁর প্রশ্ন রয়েছে। আর প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত সব শুনে বলছেন, “কিছু বলার নেই! যা হচ্ছে তাতে রবীন্দ্রনাথের কিছু আসে যায় না, সরকারের কারও কিছু আসে যায় না, মনে হয় কারওরই কিছু আসে যায় না!”
অর্থনীতির অধ্যাপিকা মহালয়া চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে বড় হরফে লিখেছেন, ”নজরুলের সুরবিকৃতি আর রবীন্দ্রনাথের গানের কথার বদল সমান মাপের অপরাধ।”
গায়িকা-মনস্তত্ববিদ ইন্দিরা মুখার্জি বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ”এখন বাঙালিদের মধ্যে কি একজনও নেই একটা ভালো দেখে গান লিখে দিতে পারেন? এত দেউলিয়া হয়ে গেছি আমরা? একটা “মনের মত” গান লিখে ফেললেই তো হত। ফরমায়েসি। যেখানে যেমন আবদার মত শব্দ জুড়ে দেওয়া যেত। বাদাম কাকুকে বললেও লিখে দিতে পারতো। তা নয়, সেই রবীন্দ্রনাথকে ধরে টানাটানি। সেই বস্তাপচা কটা গান নিয়ে জাবর কাটা। কোনও মানে হয়? কোন যুগের সব লেখা, আজকের যুগে এর কথা সুর কোনোটাই ঠিক যুৎসই নয়। রবীন্দ্রনাথের গান ব্যান করে দেওয়া খুব দরকার। কাউকে গাইতে হবে না। কোনও দরকার নেই অমন বিচ্ছিরি জিনিসের। একটা কথাও যিনি ঠিকঠাক লিখে উঠতে পারেননি। সুরের কথা তো বলাই বাহুল্য। খালি শুধরোতে হচ্ছে পন্ডিতদের। কী কাজ বেড়েছে পন্ডিতদের এই ভুলে ভরা লোকটার জন্যে।
রহমানকে কত কথা বলা হল, কত অপমান করা হল। তিনি তো বাঙালি নন। আর কাউকে লাগবেও না।
বাঙালিদের ধ্বংস করতে বাঙালিই যথেষ্ট।”
এর প্রতিক্রিয়ায় বহু মন্তব্য এসেছে। গায়িকা মধুমিতা বসুঠাকুর লিখেছেন, ”একদম ঠিক বলেছ। ছোট বড় কেউ বাদ নেই। বুড়োটাকে ছাড়া একপা’ও যে চলতে পারবে না সেটা শুধু স্বীকার করতেই কষ্ট।” অশোক ঘোষাল লিখেছেন, ”এতো চিন্তার কোনও কারণ নেই, আমরা প্রায় শেষ করে এনেছি, পুরোটাই নিমজ্জিত, শুধু মাস্তুলের ওপরের সামান্য অংশটুকু নজরে আসছে, আর দু একটা ক্যালেন্ডার ছিঁড়ে ফেলা হলে, আর কোনো অংশও ভেসে থাকবে না,… আর সামান্য সময়ের অপেক্ষা মাত্র….।”