ঢাকা, জাকির হোসেন: বাংলাদেশে মাহমুদুর রহমান মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ, বরিশাল বিভাগের উদ্যোগে বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে ৫ অক্টোবর শনিবার সকাল ১১টায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের করা সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার ও তাঁর ওপর হওয়া সকল জুলুমের বিচার এবং গণমানুষের প্রিয় দৈনিক আমার দেশ প্রকাশে সকল বাধা দূর করে অবিলম্বে পত্রিকাটি প্রকাশের দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়৷ মাহমুদুর রহমান মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ, বরিশাল বিভাগের মুখপাত্র ও বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ বরিশাল শাখার সদস্য সচিব ও মাহমুদুর রহমান মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম মুখপাত্র ডা. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)'র বরিশাল মহানগর এর আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক, যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন, সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন শিকদার, কবি ও অণুজীববিজ্ঞানী ইরফান রহমান, আইনজীবী আমিনুল ইসলাম পাভেল সহ বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবীরা৷ মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, 'পতিত ফ্যাসিস্ট-মাফিয়া হাসিনা সরকারের ক্রমাগত দুর্নীতি, লুটপাট, গুম, খুন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে যারাই লিখেছে, তাদেরকেই কারাবরণ করতে হয়েছে৷ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে৷ মাহমুদুর রহমান প্রথম ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শুনতে পেয়েছিলেন৷ তিনি শুধু একজন মানুষই নন, তিনি একটা বিদ্যাপীঠ যাঁর কাছে বিপ্লবী ছাত্রজনতা প্রথম দীক্ষা নিয়েছিল, জুলাইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ফ্যাসিস্ট পতনের আন্দোলনে৷ ২০১৮ সালে কুষ্টিয়ার আদালতে যখন তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেছিল খুনি হাসিনার দোসররা তখনও মাহমুদুর রহমান শিরদাঁড়া উঁচু রেখে বলেছিলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তিনি একাই লড়াই করে যাবেন৷ রিমান্ডে নিয়ে দিনের পর দিন তাঁকে নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়েছে৷ অর্ধউলঙ্গ করে তাঁর গোপনাঙ্গে এমনভাবে আঘাত করা হয়েছিল তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলেন৷ সেই সত্তরোর্ধ্ব মাহমুদুর রহমানকে ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশেও পতিত ফ্যাসিস্টের ক্যাঙ্গারু কোর্টের দেওয়া রায়ে কারাবরণ করতে হয়েছে, এটা আমাদের জন্য যথেষ্ট লজ্জার৷ এরপর গত বৃহস্পতিবার তাঁকে জামিন দেওয়া হলো৷ শুধু জামিন হলেই চলবে না, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে হাসিনার আমলে হওয়া সকল মিথ্যা, বানোয়াট মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে৷ পতিত ফ্যাসিস্ট গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরেছিল৷ আমার দেশ এর মতো জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল৷ জনগণের সেই সাহসী মুখপাত্র আমার দেশ প্রকাশে সকল বাধা ও আইনি জটিলতা দূর করতে হবে৷' বক্তারা আরও বলেন, 'খুনি-মাফিয়া হাসিনার দোসররা এখনও বাংলাদেশের প্রশাসনে, বিচার বিভাগের অন্দরে অন্দরে ঘাঁপটি মেরে আছে৷ এজন্যই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সিপাহসালার, আপসহীন সাংবাদিকতার আইকন মাহমুদুর রহমানের মতো মানুষেরা দেশে এসে জেলে যায় আর ফ্যাসিস্টের দোসররা সেনাবাহিনীর কাছে আশ্রয় নিয়ে প্রশাসনে লুকিয়ে থাকা হাসিনার দোসরদের সহায়তায় বিদেশে পালিয়ে যায়৷ সাহসী সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী ওই অবৈধ সরকারের অনেক গোপন বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন৷ তাদেরকে মেরে ফেলা হয়েছে৷ এতকাল এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি৷ সাংবাদিক সহ জাতীয়তাবাদী আদর্শের ও সমমনা যারাই ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, তাদের ওপর হওয়া সকল জুলুম, গুম, খুনের বিচার করতে হবে৷ ওই খুনি ফ্যাসিস্টের বিচার না হলে আমরা জাতীয়তাবাদী শক্তি আবারও ছাত্রজনতাকে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মাটিতে ফ্যাসিবাদের শেষ চিহ্নটুকুর কবর রচনা করবো৷
আমার দেশের বিশেষ প্রতিবেদক অলিউল্লাহ নোমানের প্রসঙ্গ এনে কবি ও অণুজীববিজ্ঞানী ইরফান রহমান বলেন, 'শুধু মাহমুদুর রহমানই নন, আমার দেশের সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান যখন তথাকথিত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিজামুল হকের স্কাইপি কেলেঙ্কারি প্রকাশ করলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে চাঞ্চল্যকর সব দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করলেন, তখনই তার ওপর ফ্যাসিস্টের হামলা মামলার খড়গ নেমে এসেছিল৷ তখন আদালত এই সাহসী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রায়ে বলেছিল, আমরা এখানে সত্য মিথ্যার যাচাই করতে বসিনি, আদালত অবমাননা হয়েছে কি না তা দেখার জন্য বসেছি৷ যে আদালত সেদিন সত্য মিথ্যার যাচাই না করে ফ্যাসিস্টের তাঁবেদারি করেছিল, আজ সেই আদালতকে উদ্দেশ্য করে সম্মান রেখে বলতে চাই, আপনারা জনগণের জন্য৷ জনগণের সমর্থন না থাকলে আদালতের ক্ষমতা শূন্য৷ সত্যের কাছে অসত্য পরাজিত হয়েছে এবং হবেই৷ সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে না পারলে আমরা গণমানুষ সমস্বরে জেগে আছি, বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ এসেছে সেই জনতা৷ ফ্যাসিবাদের শেষ চিহ্নটুকুও আমরা বিতাড়িত করবোই৷ ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে আবার আসছে আমার দেশ৷' মানববন্ধনের পর 'মাহমুদুর রহমান ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই', 'ফ্যাসিস্ট দোসরদের কবর দাও, আমার দেশ খুলে দাও' প্রভৃতি স্লোগানে মিছিল নিয়ে সদর রোড প্রদক্ষিণ করার মাধ্যমে কর্মসূচির সমাপ্তি হয়৷