নিজস্ব সংবাদদাতা : দিল্লির বুকে ফের রক্তাক্ত সন্ধ্যা। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের কাছে ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ধরে যায় পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক গাড়িতে। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের একাধিক ইঞ্জিন, অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনতে শুরু হয় অভিযান। দমকল সূত্রে খবর, কিছু ক্ষণের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়, কিন্তু ততক্ষণে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতালের সুপার জানিয়েছেন, “১৫ জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে দশ জন হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মারা যান। তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।” প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রথমে প্রবল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়, তারপরই দেখা যায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশে উঠছে। স্থানীয়দের দাবি, কয়েকটি গাড়ির টুকরো ছিটকে আসে রাস্তায়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় লালকেল্লা মেট্রো গেটের সামনে থাকা দোকান ও স্টলগুলিরও ক্ষতি হয়।

সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে নাশকতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। ঘটনাস্থলে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে এনআইএ (NIA), এনএসজি (NSG) ও ফরেনসিক দল। এলাকা ঘিরে ফেলেছে দিল্লি পুলিশ ও সিআরপিএফ বাহিনী। এরই মধ্যে নতুন এক দিক খতিয়ে দেখা শুরু করেছে তদন্তকারীরা। বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগেই ফরিদাবাদের এক ভাড়াবাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ৩৬০ কেজি বিস্ফোরক, ২০টি বোমার টাইমার, রিমোট, ওয়াকিটকি এবং বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র। এই অভিযানে অংশ নেয় রিয়ানা ও কাশ্মীর পুলিশের যৌথবাহিনী। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ সূত্রে খবর, গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় তিন হাজার কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। এর সঙ্গে জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠীর যোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি উঠে এসেছে পাকিস্তানি সংগঠন ‘আনসার ঘাজ়ওয়াত-উল-হিন্দ’-এর নামও। এই দুই ঘটনার সময়কাল এবং স্থানগত মিল দেখে তদন্তকারীরা মনে করছেন, দিল্লির বিস্ফোরণটি হয়তো একটি পরিকল্পিত নাশকতার চক্রের অংশ। এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাজধানী জুড়ে ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে মেট্রো স্টেশন, বিমানবন্দর ও রেলস্টেশনে। শুধু দিল্লি নয়, মুম্বই ও লখনউতেও জারি করা হয়েছে সতর্কতা। দেশজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে এই ঘটনায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সমস্ত রাজ্যকে গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নজরদারি জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে। এই বিস্ফোরণ কেবল দিল্লি নয়, গোটা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সামনে বড় প্রশ্ন তুলে দিল।
