Skip to content

বাংলাদেশি সন্দেহে ওড়িশায় পিটুনি, প্রাণ বাঁচিয়ে ঘরে ফিরলেন মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক!

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা : ফের আতঙ্কের অভিজ্ঞতা নিয়ে ভিনরাজ্য থেকে বাড়ি ফিরলেন বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকরা। ওড়িশায় বাংলাদেশি সন্দেহে মারধরের অভিযোগ উঠল মুর্শিদাবাদের চার যুবকের বিরুদ্ধে। কর্মক্ষেত্র থেকে তুলে নিয়ে এক ঘরে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁদের। পরে পুলিশ উদ্ধার করলেও প্রাণনাশের আশঙ্কায় আর ওড়িশায় না থেকে তড়িঘড়ি মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন তাঁরা। আক্রান্ত চার শ্রমিকের বাড়ি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা ও রেজিনগর এলাকায়। বছরখানেক আগে কাজের সন্ধানে ওড়িশায় পাড়ি দিয়েছিলেন মহিবুর ইসলাম, শহিদুল ইসলাম-সহ আরও কয়েক জন। বিভিন্ন জেলায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেই তাঁদের রুজি-রোজগার চলছিল। কিন্তু সেই কাজের জায়গাই একদিন হয়ে উঠল বিভীষিকার কেন্দ্র। ঘটনা বুধবারের। ওড়িশার ঝাড়সুগুদা জেলায় একটি নির্মীয়মাণ বহুতলে কাজ করছিলেন তাঁরা। অভিযোগ, সেই সময় কয়েক জন যুবক এসে আচমকা তাঁদের উপর চড়াও হন। আধার কার্ড দেখতে চাওয়া হয়। নিজেদের মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিলেও বিশ্বাস করা হয়নি। বাংলায় কথা বলার ‘অপরাধে’ তাঁদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। তারপর জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে একটি রাজনৈতিক কার্যালয়ে আটকে রেখে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। আক্রান্ত শ্রমিক মহিবুর ইসলামের কথায়, “আমরা বারবার বলেছিলাম আমরা ভারতের নাগরিক। আধার কার্ড দেখাতেও রাজি ছিলাম। কিন্তু কেউ শুনল না। উল্টে আমাদের বলা হল, আমরা বাংলাদেশি, মিথ্যে পরিচয় দিচ্ছি।” আর এক শ্রমিক শহিদুল ইসলাম জানান, “থানায় নিয়ে যাবে বলে আমাদের মারধর করা হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে উদ্ধার করে। কিন্তু আমাদের প্রাণের ভয় ছিল। তাই আর এক মুহূর্তও ওড়িশায় থাকিনি।” পুলিশি উদ্ধার হলেও আতঙ্ক কাটেনি। পরদিনই ট্রেন ধরে মুর্শিদাবাদের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। ভবিষ্যতে আর কখনও ওড়িশায় কাজে যাবেন কি না, তা নিয়ে গভীর সংশয়ে রয়েছেন চার জনই। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোর। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে সংখ্যালঘু ও বাংলাভাষীদের উপর পরিকল্পিতভাবে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। তৃণমূলের বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, “ভারতের সংবিধান দেশের নাগরিকদের যেকোনও প্রান্তে যাওয়ার অধিকার দিয়েছে। অথচ বিজেপিশাসিত রাজ্যে সংখ্যালঘু দেখলেই কখনও রোহিঙ্গা, কখনও বাংলাদেশি তকমা দিয়ে মারধর করা হচ্ছে। এটা ভয়ংকর।” উল্লেখযোগ্যভাবে, যে দিন ঝাড়সুগুদায় এই চার শ্রমিককে মারধরের ঘটনা ঘটে, সেই দিনই ওড়িশার সম্বলপুরে জুয়েল শেখ নামে মুর্শিদাবাদেরই আর এক পরিযায়ী শ্রমিককে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। একের পর এক ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে—ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাংলাভাষী পরিযায়ীরা কতটা নিরাপদ?

Latest